এখনো সকাল হয়নি। আর কিছুক্ষন পর কুয়াশা দেখা যাবে।
ভুপাতিত দেহখানি হঠাৎ কেঁপে উঠলো, ঝাপসা চোখ চারপাশে দেখতেই অসহায়ত্ব ছেয়ে গেলো তার মুখে চোখে। চার দিকে চেয়ে নিতেই একটা থেতলে যাওয়া কমলা খুঁজে পেলেন, শক্ত হাতে কুড়িয়ে নিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন।
একটা গাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেগিয়েছিলো, তা বুঝতে ভুল হয়নি সামাদের। তার ধীর গতির রিক্সাটার পেছনে হটাৎ বায়ুর গতিতে আসা একটা গাড়ি ধাক্কা দিয়ে গিয়েছিলো মাঝ রাতের দিকে। সে তার অভিজ্ঞ পায়ের ধাক্কায় ধরে রাখতে পারেননি রিক্সাটেকে। তার পায়ে এই তিনচাকার গাড়ি চালাবার অভিজ্ঞ ছাপ, সেই ১৭ বছর বয়সের পর থেকেই রিক্সার কারবার করেছে সে। টানা ১৩ বছর রিক্সা চালিয়ে জমানো কিছু টাকায় সে এক খানি চায়ের দোকান দিয়েছিলো তার পর আর পেটের দায়ে রিক্সার পেডেলে পা দেন নি ৭ বছর। তবে মাঝে মাঝেই পুতি বেগম কে নিয়ে রাতে ঢাকায় ঘুরছেন, আর ফিরে জেতে চেয়েছেন ১৯ বছর বয়সের পুতির কাছে। ৩১ বছরের সংসারে সামাদ কখনো পুঁথি বলে ডাকেন নি পুতিকে। পুঁথি বলে ডাকতে সময় বেশি লাগতো। রিক্সা ছেড়ে নেমেই গলা হাকিয়ে ডাকতেন পুতি পুতি করে।
তিন বছর আগে তার পুতি বেগম হঠাৎ করেই বেস্ট ক্যন্সারে মারা যান। যথা সাধ্য চেষ্টা করেছিলেন সে। নিজের বাড়ীর ২ কাঠা জমি, পুতি বেগমের জমানো সোনার নাকফুল, কানের দুল, রুপার চেইন, পায়ের নূপুর সব বেচেও শেষে বেচেছিলেন একটা টিনের বাক্স ৪ ফিট বাই ৮ ফিট মাপের সেই টিনের বাক্স। ১৩ বছর রিক্সা চালিয়ে যে বাক্স গড়েছিলেন। ন্যায্য মূল্যও পাননি, তবুও কষ্ট নেই, শেষ বেলায় অন্তত প্রতি বেলায় একটুকু কমলার রস দিতে পেরেছিলেন পুতির মুখে খাবার হিসেবা প্রতি বেলায় এর বেশি কিছু খেতে পারতেন না পুতি সে সময়।
কোন দিন পুতি, তার কাছে বড় কিছুর বায়না করেননি, মাঝে মাঝেই রাতে পুতি বলতেন কমলার রস তার খুব ভালো লাগে। রাতের পথে বাড়ি ফেরার সময় সে দেখতো সব দোকান বন্ধ হয়ে গেছে, কিছু কিছু দিন সে খুঁজে পেলে আনতে ভুলতেন না দুটো কমলা।
আজ সে আবার কমলা কিনেছিলো, এখন মাঝে মাঝেই রিক্সা নিয়ে বের হয় সে, খাবার জোগাবার মত কেউ নেই আজ, পুতি বেগম নিস্বন্তান ছিলেন।
১. ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০২ ০