somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মরে যওয়া স্বপ্ন
শুধু চেষ্টা করেছি দৌড়ে পালাবার, জীবন থেকে দূর। আমি আহসান হাবীব জামালপুরের ছেলে, বাবা স্কুল শিক্ষক, মা সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক। অনেক দিন হয়ে গেছে হোস্টেল বা মেসে থাকি, সে হিসেবে আমি সবচেয়ে পরাধিন আমার কাছ।

একটি রোড একসিডেন্ট..

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০৪-০৮-২০১৪ সকাল ০৯.২৭
বনানি সিগনাল, একজন ধিরস্থির মোটর সাইকেল চালক অন্য সকলের ন্যয় বার বার এদিক সেদিক না তকিয়েই বসে আছে সামনের লাল বাতিটার দিকে তকিয়ে, কখন সবুজ হয়। প্রতিদিন সকালেই সে যায় আসে এই একই রাস্তায় প্রায় ৬ বছর।

২০১০ ভার্সিটি পড়ুয়া একটি ছেলে সায়ান,
কখনোই বাবার মোটর সাইকেল চালাতো না খুব বেশি, আজ চালাচ্ছে ! তার বান্ধবি টুশি আজ তার মোটর সাইকেলে করে ঘুরতে চেয়েছে।

আজ গাড়ি নিয়ে বে হবার আগে সায়ান মাকে সালাম করে এসেছে, রাস্তায় সে আজ একটুকু বিপদের সামনা সামনি হতে চায় নি।

*****************
টুশি,
ভার্সিটির অতি-অসাধারন কেউ না হলেও, সাধারনে অসাধারন একজন, কাউকেই পাত্তা দেয় না সে। তবু সায়ান না-ছোড় বাব্দা তার সাথে আজ গাড়ি চড়তেই হবে যেতই হবে সায়ানের বাসায়, সায়ানের মা আজ যে দেখতে চেয়েছেন লক্ষি টুশিকে, ছেলের কাছে ২৩ বছরের জিবনে ঐ মেয়েটার গল্প শুনে আসছে প্রায় দেড় বছর।

ভার্সিটি শুরুর দিন সায়ান বসেছিলো টুশির পেছনে, হঠাৎ সায়ানের ফাওনটেন পেনের একফুটা কালি লেগে যায় টুশির সাদা উড়নায়। রাগে মুখ খানি এক্কেবারে লাল হয়ে গেছিলো টুশির , কি বকা বকি করেছিলো সায়ানকে, সায়ান কাল গতিক না দেখে কানে হাত দিয়ে সরি বলে নিজের জিব্বায় কামরে দিয়েচিলো, তবুও রাগ কমেনি টুশির।

সেই রাগের কথা ভেবে কোন এক ২৬ জুন টুশির জন্মদিনে একটা সাদা সাদা ওড়না কিনে দিয়েচিলো সায়ান। পরদিন টুশি ক্লাসে এসেছিলো নীল জামা আর সায়ানের সেই সাদা ওড়না পড়ে। দেখেই মন খারাপ হয়ে যায় সায়ানের, ওড়নাটা পরে পরি হয়ে যাবে টুশি বুঝতে পারেনি সায়ান, কেমন যেন লাগছিলো সায়ানের সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছে টুশিকে। সেদিন সায়ানের সব বোন্ধুরা বলা বলি করছিলো টুশিকে নিয়ে, সয্য হয়নি অভিমানি আর সায়ানের, ক্লাস ফেলে চলে এসেছিলো সে।

টানা ছয় দিন বাবার কাছে গিয়ে থেকেছিলো সায়ান। বাবা সিলেটে কাঠের ব্যবসা করেন, সায়ান সব কিছু খুলে বলে বাবাকে, হঠৎ একজনকে ভালোবেসে ফেলেছে সে ।

যখন সায়ান ঢাকায় ফিরলো হঠাৎ বিয়ে করে নিয়েছে টুশি সায়ানকে না যানিয়েই। ইহা বড়ই স্বাভাবিক ছিলো টুশির, তখনো সায়ান তুশি যে শুধু বন্ধুই ছিলো , হতবাগ সায়ান আবার চলে যায় বাবার কাছে, বাবা মার অনেক চাপা চাপিতেও আর পড়া হয়না তার, টানা দুই সেমিস্টারে ফেল মেরে বসে, পরথেকে বাবার ব্যবসাই সামলে নিয়েছে সে।

*****************

০৪-০৮-২০১৪ সকাল নাকি দুপুর ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ঘড়িতে সময় সকাল ১০.৪১ ।
এই এক ঝামেলা এই জায়গাটা এতটাই ট্রাফিক যে, সায়ান গাড়ির পেছন পেছন মোটর সাইকেলে আসার চেয়ে হেঁটে আসলেও আগে আসতে পারবে।

মোটর সাইকেলটা দোকানের সামনে রেখে ভেতরে ঢুকে বসে সায়ান। ঢাকায় মহাখালিতে একটি ফার্নিচারের দোকান হয়েছে তার, বাবা আর নিজেই বসে দোকালে।

দুপুরে খেতে জাবার জন্য উঠে দাড়িয়েছে সায়ান দোকানের দরজায় টুশি দাঁড়িয়ে সাথে ১৪-১৫ বছরেএক বালক, হেঁটে আসতে থাকে সায়ান, একজন সাধারন দুকানির মতই প্রশ্ন করে, "" কি চাই আপনার ম্যম?'''' গলাটা কেঁপে উঠেচিলো সায়ানের। বিয়ের পর আর একবারো দাঁড়ায়নি সে টুশির সামনে।

টুশির সাধারন উত্তরে কেঁপে উঠে সায়ান,
----"কিরে কেমন আছিস?"
-- তুই?
---- ভালো আছিরে, আর হ্যা এটা তোর দোকান বুঝি, আমার ছেলে একটা খাট কিনতে চায়, দেখে গেছে এখানে নাকি।

সায়ান একজন স্যেলস ম্যনকে ডেকে পাঠিয়ে দেয় টুশির ছেলেকে।

-- তোর ছেলে এতবড় !!
----নারে আমার আর ছেলে !(একটি হতাশার দির্ঘশ্বাস ছাড়লো টুশি)
--কেন?
----বিয়ের বছরের মাথায়, তুই ভার্সিটি ছারলি যে মাসে তার পরের মাসে স্বামি মারা গেলো হঠাত রোড এক্সিডেন্টে, বাচ্চা নেয়া হয়নিরে। ও আমার আপার ছেলে। আপা দুলাভাই বিদেশে গেছিলো ওকে আমার কাছে রেখে বেশ কবার নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, আমার কথা ভেবে আর নেয় নি।

কথাটা শুনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না সায়ান, হাঁটতে থাকে সোজা দরজার দিকে......




৪ দিন পর..
সায়ান আবার মোটর সাইকেলে, বনানি স্যিগনাল।
আজ সায়ান প্রচন্ড ব্যস্ত উড়তি বয়সের ছেলেদের মত বাসের ফাকে ফাকে পাক খেয়ে খেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, হঠাত সে রাস্তার এক ডিভাইডারের এক কোনায় লাগিয়ে দেয়, পড়ে যায় সে, পেচন থেকে দ্রত ছুটে আসা মিরপুর গামি কনক বাসের পেছনের চাকাটা একেবারে সায়ানের বুকের উপর দিয়ে যায়, বুক ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হবার আগেই, বা পাশের বুক পকেটে রাখা গোলাপরের কাঁটায় বিদ্ধ হয় তার বুক।

মুখ ফুটে যে কথা গুলো সে বলে ছিলো বাসের ব্রেকের কর্কশ শব্দে কেউ শুনতে পায়নি....

আজো সায়ান ঘর থেকে বের হবার আগে মাকে সালাম করেছে, আজ আবার টুশি সায়ানের মোটর সাইকেলে উঠবে। সেদিন সব কিছু খুলে বলেছিলো সায়ানের বাবা টুশিকে, টুশির চোখ বেয়ে এক ফুটা জল টলমল করছিলো।

পরে টুশির মার সাথে কথা বলেছিলো সায়ানের মা....

আজ টুশির আবার সায়ানের বাসায় যাবার কথা, সেই সকালে নিল জামা আর একটি সাদা উড়না পড়ে আবার পরি হয়ে বসে আছে সে....... রাগ হচ্ছে তার কেন গাধাটা আসছেনা.....
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশ কী করতে পারে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২৩

১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......


ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনকালে সময়ের চলমান প্রক্রিয়ায়, নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে দেশের প্রয়োজনে রাজপথে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। কীবোর্ডকে অস্র বানিয়ে স্বৈরশাসকের হৃদয় ফালাফালা করে দিয়েছি। ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২


গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×