জাপানের ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে এখনো দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে তেজস্ক্রিয়তা। ভয়ে ওই কেন্দ্রের আশপাশ থেকে হাজার হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচতে বিদেশিদের হিড়িক পড়েছে জাপান ছাড়ার। টোকিও বিমানবন্দর এখন জনসমুদ্র। কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও দাইচি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছেড়ে যাননি ওই কেন্দ্রের সাহসী ২০০ জন কর্মী। ব্যাপক বিপর্যয় ঠেকাতে তাঁরা সেখানে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। চার শিফটে পালা করে তাঁরা কাজ করছেন। প্রতি শিফটে ৫০ জন করে। তাঁরা মূলত ওই কেন্দ্রের টেকনিশিয়ান, যাঁরা কেন্দ্রটির নাড়িনক্ষত্র সম্পর্কে সম্যক অবগত। এই লোকগুলো এখন জাপানিদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। তাঁরা যেন সামাজিকভাবে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডকে সানন্দে বরণ করে নিয়েছেন। জীবন বাজি রেখে লড়ছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য।
এই সাহসী মানুষগুলো তাঁদের হূদয় নিংড়ানো যেসব কথাবার্তা পরিবার-পরিজনের কাছে পাঠিয়েছেন, জাপানে জাতীয় টেলিভিশন গতকাল তা তুলে ধরে। তাঁদের স্বজনদের সাক্ষাৎকার প্রচার করে।
পরিবারের কাছে পাঠানো বার্তায় তাঁরা যা বলেছেন তার মর্মার্থ হচ্ছে, তাঁরা এখন ‘সুইসাইড মিশন’ বা আত্মঘাতী অভিযানে নিয়োজিত আছেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় যে পরিণতি মেনে নিয়েছেন, তা অনেকটা মৃত্যুদণ্ডের মতোই।
সাক্ষাৎকারে তাঁদের একজনের স্ত্রী বলেন, তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরিভাবে জেনেশুনেই তাঁর স্বামী সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন। ই-মেইলে পাঠানো বার্তায় তাঁর স্বামী তাঁকে লিখেছেন, ‘সব সময় বাঁচার চেষ্টা করো। আমি হয়তো আর কোনো দিন বাড়ি ফিরতে পারব না।’
আরেকজন বলেন, তাঁর বাবা এখনো ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করছেন। তিনি আমাদের বলেছেন, তাঁর ভাগ্যকে তিনি সামাজিকভাবে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড হিসেবে মনে করছেন। আরেকজন টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, পূর্ণমাত্রায় তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জেনেও তাঁর স্বামী সেখানে পূর্ণমাত্রায় কাজ করে চলেছেন। অন্য একজন চোখের জলে বলেন, তাঁর বাবার বয়স ৫৯ বছর। তিনি আর ছয় মাস পরই অবসর নেবেন। অথচ তিনি দেশের এই দুঃসময়ে বসে থাকেননি। তাঁর জন্য আমার গর্ব হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীর সংখ্যা ৭০০। বিস্ফোরণের পর বাকিরা পালিয়ে যান। এখন যাঁরা মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁরা সবাই বয়স্ক এবং তাঁদের সন্তান আছে। যাঁরা পালিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই যুবক। মৃত্যু ছাড়াও ভবিষ্যতে তাঁদের সন্তানেরা তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হতে পারে—এমন ভয়ও হয়তো তাঁদের তাড়া করেছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, তাঁরা বিশেষ ধরনের পোশাক ও নানা যন্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাজ করলেও তেজস্ক্রিয়তা রোধের পথ নেই। কাজ করার সময় তাঁরা মারা যেতে পারেন। শিগগিরই জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন। তা না হলে কয়েক বছর পর তাঁরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবেন। ডেইলি মেইল।