somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার অথবা নাস্তিকঃ চিল নিয়েছে কানে

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভী বলেছেন, ‘প্রযুক্তি সম্পর্কে বাবার ন্যূনতম ধারণাও ছিল না। ব্লগে লেখালেখির তো কোনো প্রশ্নই আসে না। যারা এ গুজব ছড়িয়েছে, তারাও খুনিদের চেয়ে কম অপরাধী নয়।’ সুত্রঃ
- খবরটায় হঠাত করে চোখ আটকে গেল। রেজাউল করিম সিদ্দিকীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং তার মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভী র সাথে সমব্যাথি হয়েই বলছি তিনি কোন ভাবে ব্লগার পরিচয়ের সাথে তার পিতার পরিচয় মেলাতে চাইছেন না। আর তার প্রমান হিসেবে হাজির করছেন প্রযুক্তি সম্পর্কে তার বাবার অজ্ঞতার বিষয়টি। কিন্তু এখানে প্রশ্ন এসে যাচ্ছে কেন তিনি প্রয়াত পিতার পরিচয় একজন লেখক কিংবা ব্লগার হিসেবে প্রকাশ করতে অনাগ্রহী!!

অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হয় যে সাম্প্রতিক বাংলাদেশে ব্লগ এবং ব্লগিং তথা ব্লগার সম্পর্কে সারা বাংলার মানুষের আজ চরম নেতিবাচক মনোভাব ধারন করে চলেছে যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এইতো, দিন কয়েক পূর্বে গুগল ট্রান্সলেটে ‘blogger’ লিখে এর বাংলা অর্থ চাইলে উত্তরে পাওয়া যেত ‘মাইরালা’ শব্দটি। যত সহজে গুগল ট্রান্সলেট এই ‘blogger’ শব্দের ‘মাইরালা’ অর্থের জোগান দিত তত সহজই যেন আজ ব্লগারদের প্রান। ইচ্ছে হলেই হত্যা করা যায়। কেউ কিছু বলবে না, কেউ কিছু জানবেনা, কারো কিছু হবেনা। রিজওয়ানা হাসিন শতভী র সাথে সমব্যাথি হয়েই বলছি শুধু তিনি নন (হয়তোবা তিনি ভীত) বরং বাংলার আপামর জনগনের নিকট ব্লগার শব্দের সমার্থক হিসেবে ‘নাস্তিক’ শব্দটি হয়েছে বেশ স্বাভাবিক। আর তাদের হত্যা করা হয়েছে ‘জায়েজ’ এবং ‘ফরজ’। বিষয়টা আজ এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে একটা রাস্তার কুকুর মরলেও মানুষের যে আফসোস টুকু হয় একজন ব্লগার খুন হলে তা হয় না। প্রতিবাদ তো বেশ দূরের কথা।

স্বাভাবিক প্রশ্ন চলে আসে যে কয়েক লক্ষ ব্লগারের মধ্যে ৪/৫ জন ব্লগার কি এমন করে বসেছিল যে যার দায় আজ পুরো ব্লগ কমিউনিটিকে নিয়ে ফিরতে হচ্ছে? নিজেদের নাস্তিক তথা সর্ব জ্ঞানী জাহির করা উন্মাদ ব্লগারেরা ভূলে গিয়েছিলেন যে তারা ভূল পথে রয়েছেন। ‘সত্যের আসলে একক কোন রুপ নেই’। একজনের কাছে যা সত্য তা অন্যের নিকট নাও হতে পারে। তারা রীতিমত অন্ধ হয়ে স্বাধীন মত প্রকাশের নামে একটা কমিউনিটির দীর্ঘ দিনের লালিত বিশ্বাস, মূল্যবোধকে খাটো করে দেখা শুরু করলেন সাথে অকথ্য গালি গালাজ ছিলই। যার সুযোগ গ্রহন করল একটা কুচক্রী মহল। তারা সারা দেশে এটা প্রচার করতে লাগল যে, ব্লগার মাত্রই ইন্টারনেটে বসে আল্লাহ্‌, নবীকে গালাগালী করে। খবরে, বাঙ্গালী মুসলিমদের নিকট অবস্থাটা শেষে ‘কান নিয়েছে চিলে’ তে গিয়ে ঠেকল। যাচাই বাছাই কিংবা ব্লগ সম্পর্কে বিষদ কোন জ্ঞান গ্রহনের তোয়াক্কা না করেই আম জনতা ব্লগার মাত্র নাস্তিক ধারনায় তাদের ঈমান নিয়ে আসল। আর সেই কুচক্রী মহল, ধর্মের নামে একটা বৃহত জমায়েতের স্বপ্ন দেখতে লাগল যেখানে বলির পাঠা হল বাংলা ব্লগার গন। বেশ সূক্ষ একটা রাজনীতি কাজ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। সুকৌশলে একটা এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আম জনতার মনে এটা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ব্লগার মানেই তারা নাস্তিক। তারা আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলকে নিয়ে গালাগালি করে। আমার যদি ভূল না হয় তবে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ম, জাতীয়তাবোধ, জাত-পাত ছাড়া বৃহৎ কোন জমায়েত সম্ভব নয়। ব্লগারদের নাস্তিক বানানোর মাধ্যমে একটা বৃহৎ জমায়েত কোন একটা মহল আশা করেছিল। তারা খুব বেশি সফল না হলেও, রেশ এখনো তীব্র ভাবে রয়ে গিয়েছে।
একজন ব্লগার খুন হলে আমজনতা, আরেকটা নাস্তিক হত্যা হল ভেবে পূন্যতা অর্জনের আরাম বোধ করে। যেটা কোন ভাবেই খোদা ভক্তি নয় বরং এটা খোদার না-ফরমানী। খোদা ভক্তির সাথে খোদা ভীতিটা থাকা জরুরী কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি একজন ব্লগারকে খুন করলাম আর আমার জান্নাত নিশ্চিতের সাথে সাথে ইসলাম ও কায়েম হয়ে গেল! মহান আল্লাহ্‌ পাক নিজেই দ্বীন ইসলামের দায়িত্ব নিয়েছেন আর মুমিন বান্দাকে জ্বিহাদ করতে বলেছেন তার নিজের সাথে, তার নিজের ভেতরে বিরাজ করা শয়তানের বিরুদ্ধে। ব্লগার হত্যা করে নয়।

হে মুমিন আপনি না জেনে না বুঝে ব্লগারদের সকলকেই নাস্তিক আখ্যা দিয়ে চলেছেন!

আল্লাহ্‌ পাক মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে তাগিদ দিয়েছেন এবং এটিকে তিনি ফরয কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পবিত্র কোরআনে তিনি প্রথম শব্দটিই হাজির করেছেন ‘ইকরা’। আমাদের নবীজী জ্ঞান অর্জনের জন্য সূদুর চীন পর্যন্ত যেতে বলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগ হল শুদ্ধ জ্ঞানার্জনের একটা ভান্ডার। এখানে অসত্য জানবার কোন অবকাশ নেই। মত দ্বিমতের মাধ্যমে এখানে উঠে আসে নিখাদ জ্ঞান এমনকি সেই তথ্য ও যেটি কেউ লুকিয়ে রাখতে চায়। তাহলে ব্লগারেরা নিশ্চয়ই একটা ফরয পালন করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। আর দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী ব্লগ এবং ব্লগিং সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন না করে ব্লগারদের সকলকেই নাস্তিক হিসেবে অবিহিত করে তাদের মৃত্যু কামনা করে চলেছে প্রতিনিয়ত। যা বেশ দুঃখজনক।
একটা কমিউনিটিতে আমরা নানা মত, নানা ভেদ, নানা জাতের মানুষ বসবাস করি। কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউ বৌদ্ধ, কেউ খ্রিস্টান। যদি ধরতে যাই তাহলে সেই হিসেবে মুসলিম ছাড়া বাদ বাকী সকলেই তো নাস্তিক! তারা শিরক করে। তবে কি তাদের কারো বেচে থাকবার অধিকার নেই? যদি তাই হয় তবে কেন শুধু ব্লগারদেরই হত্যা করা? হত্যাই যদি একমাত্র পন্থা হয় তবে ব্লগারদের সাথে বিধর্মীদের ও হত্যা করে দেশে ইসলাম কায়েম করা হউক কারন তারাও তো এক অর্থে ‘নাস্তিক’।

ছোট বেলায় পড়া একটা গল্প দিয়ে শেষ করলাম,
আমাদের নবীজী প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে যেতেন আর এক বুড়ি তার পথে কাটা বিছিয়ে রাখতেন। নবীজীর পায়ে কাটা বিধার পর ও তিনি কিছু না বলে, কাটা তুলে, মসজিদে চলে যেতেন। একদিন নবীজী দেখলেন তার পথে কাটা নেই, তিনি চলে গেলেন সেই বুড়ির বাড়িতে। সেখানে গিয়ে দেখেন বুড়ি অসুস্থ। তিনি তার সেবা করে, তাকে সুস্থ করে তোলেন। বাকীটা সকলেরই জানা।

-আমার তো মনে হয়, এটাই হল ইসলাম যেখানে আল্লাহ্ নিজে বলেছেন ‘ লা কুম দিনুকুম, ওয়ালিয়াদিন’।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২২
২৬টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×