যদিও মুভি রিভিউ সচরাচর লেখা হয় না তবু এই মুভিটির রিভিউ লেখা থেকে নিজেকে সংবরণ করতে পারলাম না। মুভিটি যদিও খুব বেশি আলোচিত নয় , কারণ , হলিউড , বলিউডের জয়জয়কার এই উপমহাদেশে এবং সম্প্রতি এটি অনলাইনে রিলিজ পেয়েছে এবং আমাদের দেশে বলিউড , হলিউড ছাড়া কোনো ভিনদেশি মুভি হলগুলোতে রিলিজ পায় অথবা পেয়েছে কিনা আমার জানা নেই। যাই হোক , মুভি রিভিউ শুরু করা যাক।
মুভিটি মুহাম্মদ [স.] এর বাল্যকাল নিয়ে রচিত একটি চমৎকার আত্মজীবনীমূলক ছবি এবং আমার দেখা অন্যতম সেরা। মুভিটির সিনেমাটোগ্রাফি , মিউজিক , অভিনয় সব ছিল ১০০ তে ৯৮ পাওয়ার যোগ্য। তাই মুভিটি সিনেমাটোগ্রাফি ক্যাটেগরিতে অ্যাওয়ার্ডও লাভ করে।
৭ম শতকে মুহাম্মদ [স.] কে নিয়ে কুরাইশ বংশীয় নেতা এবং মুহাম্মদ [স.] এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব এর সংগ্রাম এবং তাদের পালনীয় ধর্মকে টিকিয়ে রাখতে উভয় পক্ষের নিরলস সংগ্রামের পথচলা , এই নিয়েই কাহিনী আবর্তিত হয়। প্রথম দৃশ্যে , আবু সুফিয়ান , বনু আবদে শামস গোত্রের প্রধান নেতা , মুহাম্মদ [স.] এর ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে বলে , সে এই ধর্ম থেকে কোনো লাভ পাচ্ছে না এবং সে মুহাম্মদ [স.] এর চাচা আবু তালিবের সঙ্গে এ বিষয়ে সাক্ষাৎ করে তাকে জানিয়ে দেয় , তাকে সহযোগিতা না করা হলে এবং তাদের সাথে এক হয়ে না চললে , আবু তালিবের সাথে তাদের যুদ্ধ অনিবার্য , তাকে একটি সময় বেঁধে দেয়া হয় চিন্তা ভাবনা করার জন্য. এর মাঝেই চাচা আবু তালিব মুহাম্মদ [স.] এর বাল্যকাল এর কথা চিন্তা করতে থাকেন।
দৃশ্যে , কুরআনে বর্ণিত ''সূরা ফিল'' এর কাহিনী সচিত্র দেখানো হয় , মুহাম্মদ [স.] এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব আবরাহা হস্তী বাহিনীর কাছ থেকে কাবা শরীফ রক্ষায় মহান আল্লাহ'র কাছে প্রার্থনা করেন। দৃশ্যে , আবাবিল পাখির কাবা শরীফকে রক্ষা এবং আবরাহা হস্তী বাহিনীকে গুটিয়ে দেয়ার দৃশ্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই যুদ্ধের পরপরই মা আমেনা এর কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে একটি সন্তান , যার নাম রাখা হয় , মুহাম্মদ। যদিও তার নাম রাখা নিয়ে তাদের গোত্রের মধ্যে বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয় , পরে দাদা আব্দুল মুত্তালিব এবং চাচার সমঝোতায় ''মুহাম্মদ'' নাম নির্ধারিত হয়। মুভিটির দৃশ্যগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
মুহাম্মদ [স.] মা আমেনা অথবা তার সমগোত্রের কারো বুকের স্তন্য পান করছিলেন না , ব্যতিক্রম ছিলেন শুধুমাত্র মা হালিমা। তার কাছেই পরবর্তীতে শিশু মুহাম্মদ [স.] কিছুকাল থাকেন এবং এদিকে কুরাইশ বংশীয় নেতারা ঘোষণা করেন , কোনো বাচ্চার জন্ম মাথার পেছনে একটি বিশেষ চিহ্ন নিয়ে হলে সেই বাচ্চাটি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং বাচ্চাটিকে খুঁজে বের করতে তাদের গোত্রে ঘোষণা দিয়ে দেয়া হলে , দাদা আব্দুল মুত্তালিব মুহাম্মদ [স.] এর বিপদ টের পেয়ে তাকে মা হালিমার সাথে তাদের গোত্রে পাঠিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন এবং এ সংবাদ পেয়ে মা আমেনা ভেঙে পড়েন , তার কোলের সন্তানকে এভাবে দূরে চলে যেতে হবে , তিনি মানতে পারছিলেন না।
কিন্তু এরমাঝেও শিশু থেকে বাল্যকাল এ পদার্পন করা মুহাম্মদ [স.] কে বিপদ পিছু ছাড়ছিলো না। মা হালিমা একবার অসুস্থ হলে , তাকে বৈদ্য এবং মূর্তি দিয়ে সুস্থ করে তোলার ব্যাপারটি মুহাম্মদ [স.] মানতে না পেরে মূর্তি গুলো সরিয়ে দেন এবং মা হালিমা ''মুহাম্মদ'' এর সংস্পর্শে এসে সুস্থ হয়ে উঠেন। এই ব্যাপারটি বৈদ্যরা জেনে ফেলে এবং তাদের সঙ্গীদের দিয়ে মুহাম্মদ [স.] এর খোঁজ নেয় , কিন্তু মা হালিমা তাদের রুখে দেন পরবর্তীতে আরো বড় বিপদ টের পেয়ে মা হালিমা তার স্বামী হারিস কে খবর দেয় সেদিনই রাতে আবার মুহাম্মদ [স.] কে ছিনিয়ে নিতে সেই গোত্রের সৈন্যদের সাথে হারিস এবং জায়েদের লড়াই হয়। হারিস সিদ্ধান্ত নেন , মুহাম্মাদকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসবেন , কেননা এই জায়গা তার জন্য আর নিরাপদ নয়। মা হালিমা এতে ভেঙে পড়েন।
মা আমেনা তার সন্তানকে আবার ফিরে পেয়ে খুশি হন। মুহাম্মদ [স] এরপর কিছুদিন মা আমেনার সান্নিধ্যে ছিলেন কিন্তু এরপরের কাহিনী আরো করুন হয়ে উঠে যখন মা আমেনা এবং দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান। মারা যাবার আগে দাদা আব্দুল মুত্তালিব , মুহাম্মদ [স.] এর সমস্ত দায়িত্ব চাচা আবু তালিবের নিকট দিয়ে যান।
এরপর , মুহাম্মদ [স.] বিভিন্য জায়গায় হিজরত করেন , বিভিন্য ধর্মযাজকেরা তার সম্বন্ধে ভবিষ্যৎ বাণী করেন এবং মুহাম্মদ [স] বিভিন্ন জায়গায় কুসংস্কার এবং কু-প্রথা বিলোপে সোচ্চার হয়ে উঠেন , বাল্যকালেই।
কুরাইশ বংশীয় আবু সুফিয়ানের ধর্মকে প্রত্যাখ্যান এবং কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে মুভির প্রথম অংশের সমাপ্তি হয়।
মুভিটির সিকুয়েল হবে আরো ২ টো , যেখানে মুহাম্মদ [স.] এর পুরো জীবনী সচিত্র দেখানো হবে। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে , মুভিটিতে মুহাম্মদ [স.] এর মুখচ্ছবি এবং ভয়েস দেখানো/ শোনানো হয়নি এর পরিচালক : মাজিদ মাজিদি , এ.আর. রহমান মুভিটির মিউজিক কম্পোজার। মুভিটির রিভিউ এখানে আমি সংক্ষেপে বর্ণনা করলাম এর কাহিনী নির্মাণশৈলী এবং চিত্রনাট্য আরো মুগ্ধ করবে যে কাউকে।
মুভির ডাউনলোডলিংক : Click This Link
টর্রেন্ট : Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫০