১৭৮০ সালে মধ্য-আফ্রিকার আদিবাসী পিগমী মানুষদের জাল দিয়ে শিকার করে নিয়ে এসেছিল ইংরেজ বিজ্ঞানীরা।চিড়িয়াখানায় পুরে রেখছিলো।না, মানুষ বলে ওদের ওরা মনে করে নি।হাজার হাজার মানুষ কালো বর্ণের বেঁটে মানুষদের দেখতে ভীড় করতো চিড়িয়াখানায়।কালো জন্তুগুলো যে মানুষ ছিলো তা বুঝতে ইউরোপীয়দের বহুকাল সময় লেগেছে।বাদামী মানুষগুলোকে সাদারা আগেও ভালো চোখে দেখেনি,এখনও না।এই বর্ণবাদ আসলো কোথা থেকে?
সোশাল ডারউইনিজম।ডারউইন তত্ত্বের অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।হারবার্ট স্পেনসার নামে ঊনবিংশ শতাব্দীর এক ইংরেজ দার্শনিকের তথাকথিত দার্শনিক।আর্থ সামাজিক তত্ত্বছিলো সারভাইভাল দ্যা ফিটেস্ট।স্পেনসারের এই তত্ত্বের সাথে ডারউইনের অরিজিন অব দ্য স্পেসিস তত্ত্বেরর সাথে মিল করিয়ে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হলো।সেটা গোটা ইউরোপ,আমেরিকা লুফে নিলো।সেই সময়ের সমাজের উঁচু তলার মানুষ,তাত্ত্বিক,সমাজবিদ,বুদ্ধিজীবী,রাজনীতিবিদ কেউ দ্বিমত করে নি,প্রতিবাদ করেনি।ঊনবিংশ আর বিংশ শতাব্দী জুড়ে সোশাল ডারউইনিজমের জনপ্রিয়তার ফসল ক্রীতদাস প্রথা,ঔপনিবেশিকতা।শুধু তাই নয়, সামাজিক ডারউইন দিয়ে শ্রেণীভেদ,জাতভেদ কে যৌক্তিক বলা হয়েছে।আমি উঁচুতে,তুমি নিচুতে।এর মানে আমি ওপরে উঠতে পারি, তোমার ওঠার ক্ষমতা নেই।তুমি আমার চেয়ে বুদ্ধি কম রাখো,তোমার গায়ের বর্ণ কালো সুতরাং বেঁচে থাকার যোগ্যতা তোমার চেয়ে আমার বেশি।দূর্বল প্রাণী মরে যায়,সবল প্রাণী বেঁচে থাকে,অথবা দূর্বল প্রাণীকে সবলের অধীনে বেঁচে থাকতে হয়,এই যুক্তিতে মানুষের বেলায় জাত ভিত্তিতে প্রয়োগ করেছিলো পশ্চিমের দার্শনিকরা। এশিয়াবাসী, আফ্রিকাবাসী আর লাতিন আমেরিকার মানুষের জাত দূর্বল,।ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকার জাত সবল।মানুষ হিসাবে কালো ও বাদামীরা নিম্মমানের,নিম্নজাতের -এই শিক্ষা সাদাদের মস্তিস্কের কোষে শতাব্দী জুড়ে লালন করছে।এ তো সহজে বিলুপ্ত হবার নয়!!!ডারউইনের মতে প্রাণীকুলের ভিতরেই পরিবর্তন ঘটে,প্রতিকূল পরিবেশটিকে অনূকুল করতে, বেঁচে থাকাকে সহজতর করতে।যারা অনূকুল পরিবেশ পাচ্ছে না,তাদের বেঁচে থাকা হচ্ছে না।মানুষের বেলায় এই অনূকুল পরিবেশটি না থাকার কারন প্রাকৃতিক নয়,না থাকার কারন মানুষেরই তৈরী কুৎসিত রাজনীতি।হার্ভাডের বিখ্যাত শরীরতত্ত্ব বিশারদ এডওয়ার্ড উইলসন বলেছেন" একটি পিঁপড়াকে বুঝে কোনো লাভ নেই,বুঝতে হবে পিঁপড়ের পুরো কলোনীকে।কোনো ব্যক্তির ডিএনএ-এর চেয়ে মূল্যবান সেই ব্যক্তির জাত,তার ডিএনএ।"তাহলে উনার কথা অনুযায়ী দেশের কোনো মানুষ অপরাধ করলে তার শাস্তি পুরো জাতিকেই মাথা পেঁতে নিতে হবে।এশিয়া,আফ্রিকার সাথে ইউরোপের তফাত বোঝাতেই উইলসন অনেক ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন।তবু আমাদের শিক্ষা হয় না।আমরা সুযোগ পেলেই ইউরোপীয়দের পা চাঁটা শুরু করি।শুধুই আফসোস।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০৭