আহা কি আনন্দ আজি বাংলার আকাশে বাতাসে! পেয়ারা ফাকিস্তানের খেলা আজি এদেশের মাটিতে! আজন্মকাল ধরিয়া যেন এই দিনটির লাগি অপেক্ষা করিয়াছিলাম।
ফাকিস্তানের ভ্রাতাকূল (আহা, নাহয় একাত্তরে মারিয়া কাটিয়া ধর্ষিয়া একাকার করিয়াছিলেন, তাই বলিয়া কি ভ্রাতা ডাকিবো না! মেরেছো কলসীর কানা তাই বলে কি প্রেম দেবো না!) আসিতেছেন এতদস্থলে, এই আনন্দ রাখিবো কই!

আহা আজি নরকূল ঝাঁকে ঝাঁকে ফাকিস্তানের পতাকা উড়াইবে!
আহা আজি নারীকূল "ওগো আফ্রিদি আমায় বিবাহ করো গো!" (ওহো, ভুল হৈলো। "অ্যায় আফ্রিদি মুঝসে শাদি করো না!" হৈবে) বলিয়া আকুলিবিকুলি হইয়া প্ল্যাকার্ড ধারণ করিবে!
আহা আজি শিশুকূল গণ্ডদেশে ফাকিস্তানের মানচিত্র আঁকিয়া হাততালি দিয়া নাচিবে!

মুক্তিযুদ্ধে (এহহে রে, মুক্তিযুদ্ধই বা বলি কেন! উহা তো নেহাত একখানি গণ্ডগোল বৈ আর কিছু নয়! বড়জোর ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ বলা যাইতে পারে, নাকি?) কবে কি হইয়াছে না হইয়াছে তাহা ভাবিয়া আর মাথা কুটিয়া মরি কেন! আরে ঐসময়ে কি আমরা জন্মিয়াছিলাম নাকি যে শুধুশুধু অতবড় অপবাদ দিতে যাইবো! তখন যাহা হইয়াছে, হইয়াছে। যাহারা মরিয়াছে, মরিয়াছে। যদি কেহ ধর্ষিতা হইয়া থাকে তো হইয়াছে। বুদ্ধিজীবী হত্যা হইয়া থাকিলে তাও বেশ, হইয়াছে। আরে যাহা কিছু তাহাদের সাথে হইয়াছে সকলই তো তাহাদের নিজের দোষেই হইয়াছে, নাকি? খামোখা উহা লইয়া মাতামাতি করিয়া আমরা আমাদিগের ভাইসকলের অপমান হইতে দিতে পারি বুঝি? ছি ছি, এ কিন্তু আমাদের ভারী অন্যায়!
কেন যে লোকে বৃথাই ক্রীড়ার মাঝে রাজনীতি টানিয়া আনে! আরে বাপু ক্রীড়া হইলো বিনোদনের ব্যাপার, ইহার মাঝে দেশ- স্বাধীনতা- মুক্তিযোদ্ধা- বীরাঙ্গনা নিয়া কুস্তি করিয়া কি লাভ? যে লক্ষ লক্ষ মানুষ কুকুরের ন্যায় মরিলো, যে হাজারো নারী লাঞ্ছিত নিপীড়িত হইয়া মাথা কুটিলো তাহারা কি আমাদের 'আপনার কেহ' নাকি যে এমন মড়াকান্না কাঁদিতে হইবে! আরে ফাকিস্তানের তরে প্রাণ লুটাইয়া দিবো এই হইলো আমাদিগের অভীষ্ট লক্ষ্য। আরে আমরা তো আর একাকী নই, কাহাকেও দলে পাই না পাই আমাদের পেয়ারের জামাত শিবিরের ভ্রাতাকূল তো রহিয়াছেনই! আর এম্নিতেও এই ভূখণ্ডের শতকরা ৭০ভাগ মানুষই হইলেন আমাদিগের ন্যায় ফাকিস্তানের একনিষ্ঠ সমর্থক, ভাবিতেই শরীরের রক্ত কিরূপে উদ্দীপ্ত হইয়া উঠে একবার ভাবুন তো! আমরা তো বলি ৭০ ভাগ কেন, সাকুল্যে ১০০ ভাগ হইলেই বা ক্ষতি কি ছিলো বাপু! আপন ভ্রাতাকে বুকে টানিয়া লৈবো, উহার নামে ময়দানে চিৎকার করিয়া গলা ফাটাইবো, চৌকা-ছক্কা যাহাই মারুক নৃত্য করিয়া ঠ্যাঙ ভাঙিবো, আর কিছু পারি না পারি নিদেনপক্ষে পাক সার জমিন সাদ বাদ বলিয়া গান তো গাহিতে পারিবো! ন্যায়-অন্যায় নিয়া মরিতেছে কোন শ্যালকে!
কিছু বরাহ শাবক আবার দেখি ইহার বিরুদ্ধে সোচ্চার হইতেছে, জনমত জড়ো করিতেছে। পেয়ারা ফাকিস্তানের পতাকা এদেশের মাটিতে উড়াইতে দিবো না, ম্যাচ শুরু হইবার পূর্বে ফাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত বাজাইতে দিবো না--- হুঁহ, মরিয়া যাই ঢঙ দেখিয়া! আরে ইহারাই তো আমাদের পূর্বজনমের ভ্রাতা, ইহারা মুসলমান আমরাও তাই, ইহাদিগের মুখের ভাষাও আমাদিগের ভাষা হইতো- নেহাত '৫২তে একখানা বিশাল দুর্ঘটনা ঘটিয়া গেলো বলিয়া হইতে পারিলো না আরকি, তাই বলিয়া কি উহাদিগকে ছাড়িয়া দিবো? কদাচ নহে! (আসলে হৃদিমাঝারে একখানি কথা লুকাইয়া রাখিয়াছি তাহা হইলো- সবকিছু ছাড়িয়া ছুড়িয়া, ওষ্ঠে নারায়ে তাকবীর বোল তুলিয়া ফাকিস্তান রাষ্ট্রেই আবারও ফিরিয়া যাইতে ইচ্ছা করে, নেহাত মুখ ফুটিয়া বলিলে পৃষ্ঠদেশে জুতার বাড়ি পড়িবার সমূহ সম্ভাবনা, তাই বলিতে পারি না!)
সুতরাং অদ্য শুভদিনে শুভক্ষণে ফাকিস্তান ফাকিস্তান বলিয়া ঢাক পিটাইবো এবং মুখে ফেনা তুলিবো, ফাকিস্তান জিতিলে আনন্দে কুরুক্ষেত্র বাধাইবো এবং হারিলে বুক চাপড়াইয়া কাঁদিবো এই আমাদিগের মনষ্কামনা! আরে ফাকিস্তান ছাড়া এই ক্ষুদ্র মানবজীবনে আর আছে কি?!?
********************************************
********************************************
একটি যৌথ প্রযোজনা পোস্ট। প্রথম পোস্টটি গতকাল দিয়েছিলো ছোটভাই রাজি, তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়টি দিলাম আমি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১:১৭