somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবীজির (সা.) জীবনী লেখার কাজ শুরু করেছি: হুমায়ুন আহমেদ

২৩ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রশ্ন : আপনি অনেক দিন ধরে বলছেন যে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী আপনি লিখতে চান। সেই লেখার প্রস্তুতিটা কী রকম?

হুমায়ূন আহমেদ : আমার প্রস্তুতির কথা বলব, কিন্তু এখানেও কিছু সমস্যা আছে। সমস্যা হলো দুই ধরনের। প্রথম সমস্যা হলো, আমার মধ্যে কিছু ছেলেমানুষি আছে তো…আমি যখন সব কিছু ঠিকঠাক করলাম, তখন একটা ঘটনা ঘটে। শুরু থেকেই বলি। বাংলাবাজারে অন্যপ্রকাশের একটি স্টল আছে। স্টলটি উদ্বোধনের জন্য আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক দিন পরে আমি বাংলাবাজারে গেলাম। স্টলের ফিটাটিতা কাটলাম। এক মাওলানা সাহেব প্রার্থনা করলেন। আমি খুবই অবাক হয়ে তাঁর প্রার্থনা শুনলাম। আমার কাছে মনে হলো, এটি বইপত্র সম্পর্কিত খুবই ভালো ও ভাবুক ধরনের প্রার্থনা। একজন মাওলানা এত সুন্দর করে প্রার্থনা করতে পারেন যে আমি একটা ধাক্কার মতো খেলাম। মাওলানা সাহেবকে ডেকে বললাম, ‘ভাই, আপনার প্রার্থনাটা শুনে আমার ভালো লেগেছে।’ মাওলানা সাহেব বললেন, ‘স্যার, আমার জীবনের একটা বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল আপনার সঙ্গে একদিন দেখা হবে। আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।’ আমি তাঁর কথা শুনে বিস্মিত হলাম। আমি বললাম, ‘এই আকাঙ্ক্ষাটি ছিল কেন?’ মাওলানা সাহেব বললেন, ‘আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই কারণ আমি ঠিক করেছি, দেখা হলেই আপনাকে আমি একটা অনুরোধ করব।’
‘কী অনুরোধ শুনি?’
‘আপনার লেখা স্যার এত লোকজন আগ্রহ নিয়ে পড়ে, আপনি যদি আমাদের নবী করিমের জীবনীটা লিখতেন, তাহলে বহু লোক এই লেখাটি আগ্রহ করে পাঠ করত। আপনি খুব সুন্দর করে তাঁর জীবনী লিখতে পারতেন।’
মাওলানা সাহেব কথাগুলো এত সুন্দর করে বললেন যে আমার মাথার ভেতর একটা ঘোর তৈরি হলো। আমি তাঁর কাঁধে হাত রেখে বললাম, ‘ভাই, আপনার কথাটা আমার খুবই মনে লেগেছে। আমি নবী করিমের জীবনী লিখব।’ এই হলো ফার্স্ট পার্ট। চট করে তো জীবনী লেখা যায় না। এটা একটা জটিল ব্যাপার, কাজটা বড় সেনসেটিভ। এতে কোথাও একটু উনিশ-বিশ হতে দেওয়া যাবে না। লিখতে গিয়ে কোথাও যদি আমি ভুল তথ্য দিয়ে দিই, এটি হবে খুবই বড় অপরাধ। এটা আমাকে লেখা শুরু করতে বাধা দিল।



প্রশ্ন : আপনি কি মহানবীর জীবনী লেখার কাজটা শুরু করেছিলেন?
হুমায়ূন আহমেদ : নাহ্, আমি লেখার কাজ শুরু করিনি। আমি অন্যদিন-এর মাসুমকে বললাম, ‘তুমি একটা সুন্দর কাভার তৈরি করে দাও তো। কাভারটা চোখের সামনে থাকুক। তাহলে আমার শুরু করার আগ্রহটা বাড়বে।’ মাসুম খুব চমৎকার একটা কাভার তৈরি করে দিল। বইটার নামও দিলাম_’নবীজী’। তখন একটা ছেলেমানুষি ঢুকে গেল মাথার মধ্যে। ছেলেমানুষিটা হলো, আমি শুনেছি বহু লোক নাকি আমাদের নবীজীকে স্বপ্নে দেখেছেন। কিন্তু আমি তো কখনো তাঁকে স্বপ্নে দেখিনি। আমি ঠিক করলাম, যেদিন নবীজীকে স্বপ্নে দেখব, তার পরদিন থেকে লেখাটা শুরু করব। স্বপ্নে এখন পর্যন্ত তাঁকে দেখিনি। যেহেতু এক ধরনের ছেলেমানুষি প্রতিজ্ঞার ভেতর আছি, সে কারণে লেখাটা শুরু করতে পারিনি। ব্যাপারটা হাস্যকর। তবু আমি স্বপ্নের অপেক্ষায় আছি।

প্রশ্ন : আপনার প্রস্তুতি কী? মানে পড়াশোনা আর অন্যান্য…।
হুমায়ূন আহমেদ : আমার প্রস্তুতি ভালো। পড়াশোনা ভালোই করেছি। বইপত্র জোগাড় করতে পেরেছি। বন্ধুরাও বইপত্র সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছেন। কাজেই এখন আমি বলতে পারি যে নবীর জীবনী লেখার জন্য আমার প্রস্তুতি যথেষ্ট হয়েছে।



প্রশ্ন : বাংলা ভাষায় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যেসব জীবনী লেখা হয়েছে, এর মধ্যে আপনার পছন্দের কোনটা?
হুমায়ূন আহমেদ : সত্যি কথা বলতে কি, আমার তেমন পছন্দের কোনো জীবনী নেই। জীবনীগুলোর মধ্যে ভক্তি চূড়ান্তভাবে বেশি। আমার লেখার মধ্যেও ভক্তি থাকবে। কিন্তু একটু অন্যভাবে থাকবে এবং আরো কিছু ব্যাপার থাকবে।

প্রশ্ন : ধানমণ্ডিতে আপনার বাড়িটা যখন করলেন, তখন আমি দেখেছি, আপনি একটা নামাজঘর করেছেন। নুহাশপল্লীতেও আপনি নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রেখেছেন। এটা কোন চিন্তা থেকে করেছেন?
হুমায়ূন আহমেদ : নামাজঘর করার চিন্তাটা ধর্মীয় ভাব থেকে যতটা না এসেছে, তার চেয়ে বেশি এসেছে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের বই পড়ে। তাঁদের বইয়ে দেখি, তাঁদের একটা ঠাকুরঘর আছে, পূজাঘর আছে। তাঁরা প্রতিটি বাড়িতে একটা অংশ আলাদা করে রাখেন উপাসনার জন্য। এই কাজটা আমরা করি না। আমাদের প্রার্থনার জন্য আলাদা জায়গা রাখি না। নামাজঘর বানাই না। আমি বানাতে চেয়েছি। আর নুহাশপল্লীতে আমি নামাজের জায়গাটা করেছি আমার মায়ের জন্য। একটা খোলা মাঠে_লোকজন নেই, একটা গাছের নিচে বসে নামাজ পড়তে হয়তো বা তাঁর ভালো লাগবে_এ কথা মনে করেই শ্বেতপাথর বসিয়ে একটা জায়গা আলাদা করে দিয়েছি।



[শিলালিপিতে ইমদাদুল হক মিলনের নেয়া একটি সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ]
২৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে "রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ": পুনর্বাসন নাকি নতুন ষড়যন্ত্র?

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫৬


বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে এক অনিশ্চিত ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গত ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারিয়েছে, এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরানো -----------------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:১০





মহাকাশে সময় কাটানো এবং পৃথিবীর অপরূপ দৃশ্য দেখা অনেকের কাছেই আজীবনের স্বপ্ন। তবে মানবদেহ শুধু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে কাজ করার জন্যই বিকশিত হয়েছে। তাই মহাকাশের শূন্য মাধ্যাকর্ষণে সময় কাটানোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার একটা ব্যক্তিগত সমুদ্র থাকলে ভালো হতো

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।

আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে... সাজাই এ ঘর ফুলে ফুলে ...

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল দ্বার খোল, দ্বার খোল....
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে লাগে দোল। সাথে সাথে দোলা লাগে বুঝি আমাদের অন্তরেও। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজড ! নতুন করে ওপেন করার সুযোগ নেই......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫


..বলে মনে করেন জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্বনামধন্য থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রধানের সাথে বৈঠকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×