জানি লেখাটা অনেকের চরম বিরক্তির উদ্রেক করবে তবুও দিলাম। মাহে রমজান বলে কথা কারণ মাহে রমজান নিয়ে আমি যে একটা পোস্টও করিনি। আগে তো রমজানের ফজিলত নিয়ে কত কিছুই লিখতাম।
যাকগে কিছুক্ষণ বকবক করি।
----------------------------------------------
বুদ্ধি হবার পর থেকে কোনদিন ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজা ভঙ্গ করিনি। সেই কুটিকাল থেকেই রোজা রাখা আমার অভ্যাস।
একবার রোজা রেখে সারাদিন রৌদ্রের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ খেলে বিকেলে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, পস্রাব লাল টকটকে হয়েছিল, চোখে অন্ধকার দেখছিলাম, মনে হচ্ছেছিল যেন আমি মাহাশূন্য মিলিয়ে যাচ্ছি । অনেকেই জোড়াজোড়ি করতেছিল রোজা ভাঙ্গানোর জন্য কিন্তু আমি রোজা ভঙ্গ করিনি এই ভেবে যে আর মাত্র ১/২ ঘন্টাই তো বাকি যাই ঘটুক আমি রোজা ভাঙ্গব না।
একবার ছোটাখাট এক এক্সিডেন্টে আমি কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান হারিয়েছিলাম হাত পায়ের কয়েক জায়গায় ছিলে গিয়েছিল। আধা জাগ্রত অবস্থায় কে যেন আমার মুখে চামচ দিয়ে সেলাইন ঢেলে দিচ্ছিল আমি যখন বুঝতে পারলাম আমি তো রোজা আমি কেন খাচ্ছি, সাথে সাথে খাব না খাব না বলে চিৎকার করতে লাগলাম এই বলে যে, আমার কিছুই হয়নি সব ঠিক আছে এটা তেমন কিছু না সুতরাং রোজা ভেঙ্গে লাভ নেই। পরে অবশ্য মা,নানী,খালা জোড় জবরদস্তি করে আমাকে রোজা ভঙ্গিয়েই ছাড়ছে।
শুধু পনি খেয়ে রোজা রাখার অভ্যাস আমার আছে। রমজান মাসে আমি পাক্কা মুসল্লী হয়ে যেতাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ত্রিশটি রোজা সাথে ত্রিশটি খতমে তারাবী না পড়লে যেন রমজান অপূর্ণ রয়ে গেল। রমজান মাসটি ছিল আমার ধর্মীয় উৎসবের মাস। মাঝে মাঝে শয়তানের পা্ল্লায় পরে যদি নামাজ না পড়তাম তাহলে আব্বা,আম্মা, দুজনেই প্রচন্ড রাগ করতেন, এমন রোজা রখার মানে কি? নামাজ না পড়ে রোজা রাখা আর হিন্দুদের উপোস থাকা নাকি সমান কথা। কোন সুস্থ মানুষ যদি রোজা না রাখে সে যত বড় সম্মনীয় ব্যাক্তিই হোক আর আমাদের যত ঘনিষ্ঠ আত্নীয়ই হোক না কেন আব্বা তাকে দুই চারটা বাণী হুনিয়ে দিবেই
যারা রোজা রাখে না উনার চোখে তারা পশুর সমতুল্য এরা নিকৃষ্টতম জীব এদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাই শ্রেয়। পশুদেরই শুধু ধর্ম থাকে না তাদের কাজ হচ্ছে খাওয়া আর হাগু করা । আব্বার মতে প্রতিটি মানুষের যথাযথ ভাবে ধর্ম পালন করা উচিৎ যারা ধর্ম পালন না করে তারা নিকৃষ্টি জীবের চেয়েও অধম, তারা মানুষ নামের কলঙ্ক। ( কিন্তু তার ছেলের, মানে আমার যে এই অবস্থা তা জনতে পারলে আর রক্ষা নাই হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে ফেলবে অথবা মানসিক ভারসমস্য হারিয়ে ফেলবে )
আমার আব্বার ধর্মীয় বাড়াবাড়িটা আমাদের পরিচিত সবাই জানে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সে এক লম্বা কাহিনী এ পোস্টে তা আলোচনা করা সম্ভব নয়।
অনেক বকবক করে ফেললাম আপনাদের ধৈর্য্যচূতি ঘটাতে চাই না, যে কারণে পোস্টটি দেয়া তা বলছি শিঘ্রই, আর তা হচ্ছে এই রমজানে আমার অন্যন্য নতুন এক অনুভূতি হয়েছে।
এটু খুলেই বলি- কোনদিন যদি কোন কারণে রোজা নাও রাখতে পারতাম ইফতারের সময় ঠিকই রোজাদারের মত ইফতার করতাম।
রমজান মাস ইফতারের সময় হয়েছে অথচ আমার সমনে ইফতারী নেই এমন ঘটনা জীবনে ঘটেনি... কিন্তু... কিন্তু... কিন্তু.... এবারের রমজানে নতুন এক অনূভুতির পরশ পেলাম।
আল্লাহর রহমতে এবারের রমজানে আমি একটা রোজাও করিনি বা আল্লাহ পাক আমাকে সে তৌফিক দান করেন নি ।
তবে রোজা না রাখলেও রোজাদারের মত ইফতারটা রেগুলার করতেছি। গত কয়েকদিন আগে ইফতারের ঘন্টাখানেক আগে বাইরে বের হলাম, ভাবলাম যেহেতু আমি রোজা থাকি না প্রতিদিন ঘটা করে ইফতার করার কি দরকার? তার চেয়ে বরং বাইরে ঘুরাঘুরি করি আর মানুষের ইফতার করা দেখি।
হাঁটছি, হাঁটছি হাঁটছি আর এফ এম চ্যানেল পরিবর্তন করছি প্রতিটি চ্যানেল যেন এক একটি ইসলামী জলশায় পরিণিত হয়েছে। ইফতারের আগে দেশের সবগুলো ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াই ইসলামী জলশায় পরিনিত হয়, যা হোক এটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। আজানের সময় হয়ে যাচ্ছে, রাস্তা ঘাট প্রায় ফাঁকা সবাই ইফতারীর আয়োজনে ব্যাস্ত। একটু পরে আজান পড়ে গেল, আশে পাশের দোকানে, রাস্তায়, গাড়িতে, যে যেখানে পারছে সেখানে বসে ইফতার শুরু করল। আবাল,বৃদ্ধা,বণিতা, ধনী,গরীব সবাই মিলে মিশে বিভিন্ন জায়গায় জটালা পাঁকিয়ে ইফতার করছে আর আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখছি। একদল র্যাব সদস্যদের দেখলাম রাস্তার পাশেই কাগজ বিছিয়ে গোল হয়ে বসে ইফতার করছে ভাবলাম একটা ছবি তুলি... কিন্তু... কিন্তু.. যদি মাইর দেয়!! সে ভয়ে আর তুললাম না। অনেকেই দেখলাম ডাকা ডাকি করতেছে কে কে রোজা? আসেন চলে আসেন আমাদের এখানে এক সাথে ইফতার করি। ওই ভাই পানি নেন পনি, ঠান্ডা পানি। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সাথে খাবার বিনিময় করছে।
সবাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যাস্ত সবার মধ্যেই এক ধরণের প্রশান্তির ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে সমগ্র নগরী যেন থমকে দাঁড়িয়েছে এই ইফতারীর আয়োজনে। কিন্তু আমি .. আমি কি করছি হুমমম ? সবাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যাস্ত আর আমি হাঁটছি আর দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখছি নিজেকে কেমন যেন এতিম এতিম মনে হইল :v তাদের সাথে একসাথে বসে ইফতার করতে পারলে মন্দ হত না। কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয় আমি যে এখন আর মানুষ নই অমানুষ হয়ে গেছি ( আল্লাহ পাক আমার সমস্ত জ্ঞানকে কেড়ে নিয়েছেন আর যার জ্ঞান নেই সে মানুষ না সে অমানুষ ) কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজেকে কেমন যেন ভীন গ্রহের প্রাণী মনে হইল। সবাই ইফতারীতে ব্যাস্ত আর আমি কি না একা একা রাস্তায় হাঁটছি!! রাস্তা ঘাঁট প্রায় ফাঁকা নিজেকে মনে হইল যেন এলিয়েন, সে এসে পৃথিবীবাসীর ইফাতরীর আয়োজন দেখছে।
রাস্তায় দুই একজন বিদেশীকে (চাইনিজ,নাইজেরিয়ান) হাঁটতে দেখে সম্ভীত ফিরে পেলাম, ভাবলাম না আমি এলিয়েন না আমার মত মানুষ এখনো এই গ্রহে আছে তখন আবার নিজেকে বিদেশী বিদেশী মনে হইল
ইতিমধ্যে এফ, এম এ গজল শুরু হয়ে গেছে সৃষ্টিকর্তার মহান গুণগান সম্বলীত গজল... এই সুন্দর ফুল... এই সুন্দর ফল... মিঠা নদীর পানি খোদা.. তোমার মেহেরবাণী খোদা.. তোমার মেরবাণী...। মনে আবেগ ঝেঁকে বসল মনের অজান্তেই বলে উঠলাম, হায় গড তুমি আমার অন্তরে এ কেমন সীল মোহর মেরে দিলে, আমার আজন্ম লালিত বিশ্বাসের দরজায় কেন অবিশ্বাসের পেড়েক ঠুকে দিলে? এ জন্য দায়ি কে?... ইত্যাদি এরকম হাজারো প্রশ্ন মনে উদয় হতে লাগল। নাহহ.. আবেগ বড়ই নাছাড়বোন্দ একে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। কি আর করা এফ,এম বন্ধ করে গান শুনতে লাগলাম গান,লালনের গান। আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দায়াময় ।
সব জায়গায় দেখি দয়াময় বসে আছেন মনব জাতিকে উদ্ধার করার জন্য, তাদের শঙ্কট নিরশনের জন্য, কিন্তু এই অধম তাকে এখনও খুঁজে পেল না।
ওয়ারফেজও দেখি বিধাতার কাছে শক্তি চাচ্ছে, ক্যামতে কি??
সবাই গড নিয়ে পড়ে থাকুক যদি তারা সেখানে,শক্তি পায় শ্বান্তি পায়। কিন্তু আমি এখনও খুঁজে পাইনি কিছু, কিচ্ছু পাই নি, কিছুই পাইনি সব ফাঁকা।
আমার মহাবিশ্ব তাই গড বিহীন।
পাহাড়,নদী, নালা,আকাশ, বাতাস,পতাল অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সব, সব তন্ন তন্ন করে খূঁজেও আমি কিছু পাইনি।
আমি গডকে ছাড়িনি গডই আমাকে ছড়ে দিসে।
আর্যশ্চ্য তো আপনারা কি ভাবছেন আমি আপনাদের সাথে মিথ্যা মিথ্যা বকবক করছি??
তাহলে আপনাদের আরও কিছু ছবি দেখাই এই ছবিগুলো আমি নিজ হাতে তুলেছি কিন্তু দুঃখের বিষয় কোথাও একটা গড পাওয়া গেল না। আপনারা নিজ চোখে দেখেন, নাই কিচ্ছু নাই। যা আছে তা নিখাদ প্রকৃতি, ফুল,ফল,পাখি,গাছ, আকাশ,পানি প্রভৃতি। প্রকৃতির বাইরে আমি কিচ্ছু পাইনি আপনারাও দেখেন কিচ্ছু নাই। তবে প্রকৃতিকে যদি কেউ গড বলে স্বীকার করতে বলে তাহলে আমার আপত্তি নেই।
আরও কত প্রমাণ চাই আপনার বলেন?
এমন হাজার ছবিই তো আছে আমার কাছে সব কি আর আপলোড করা যায়? আপলোড দিতে কষ্ট লাগে না বুঝি!!
স্বয়ং গড আমাকে কইসে, তোকে এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মান্ডে একা একা ছেড়ে দিলাম, দেখ আমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারছ কি না?
আমি কইলাম- আমি পারব, আমি চ্যালেঞ্চ গ্রহণ করিলাম।
গড কহিলেন- তাহলে প্রচার কর গড বলতে কিছু নাই গড বলতে কিছু ছিলনা কখনও।
আমি কইলাম- আমি এই দায়িত্ব ঠিকঠাক ভাবে পালন করিব।
গড কহিলেন- তাহলে আমিও তোকে সঠিক পথের সন্ধান দান করিব।
অনেক তো ছবি দেখলেন কি পেয়েছেন কিছু?
চলুন এবার গডকে ডাকাডাকি করি দেখি গড কোথায় আছে?
আরও ভালু করে গভীর ধ্যানের সহিত গডকে ডাকাডাকি কইত্তে হপে তা না হলে গডকে পাওয়া যাবে না।
ছবি তোলা হারাম নিজের বেলায় আরাম খেয়াল কইরা
বি............... দা............য়..... ভাল থাকা হয় যেন সবসময়
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:২১