ভাষানটেকে স্কুলের টয়লেটে প্রথম
শ্রেণির ছাত্রীকে পঞ্চম শ্রেণির
যে ছাত্রটা ধর্ষণ করলো, ওর কথা
ভাবছিলাম।
.
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় আমি
জানতাম, একটা ছেলে আর একটা
মেয়ে একে অন্যকে মালা পরিয়ে
দিলে তাদের মধ্যে বিয়ে হয়ে
যায়। তারপর কিছুদিন পর মেয়েটার
পেটে আল্লাহ্ একটা বাবু পাঠিয়ে
দেয়। এর বেশি কিছু আমি জানতাম
না। ধর্ষণ? সে তো অনেক পরের কথা।
ক্লাস সিক্সে থাকতে একদিন
পত্রিকার পাতায় ‘ধর্ষণ’ লেখাটা
দেখতে পেয়ে এক ফুফাত বড় ভাইয়ের
কাছে গিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা ধর্ষণ
কী?’
.
প্রমাদ গুনে বড়ভাই বললেন, ‘বড় হয়ে
নাও, পরে বুঝবে।’
- ---- ------- -----
একটা ঘটনা যদি এমন হয় যে
ঘটনাটাকে সেটার তীব্রতা দিয়ে
বিভিন্ন লেভেলে ভাগ করা যায়,
তবে এক লেভেল থেকে অন্য
লেভেলে উঠে যেতে খুব বেশি
কিছু লাগেনা। যেটা লাগে সেটা
হচ্ছে অভ্যস্ত হওয়া। কথাটা সহজ করে
বলি।
.
একটা সময় ছিল যখন ঢাবিতে দুজন
ছেলে আর মেয়ের মধ্যে কোন কথা
বলার প্রয়োজন হলে প্রক্টোরের
লিখিত অনুমতি নিতে হত তাদের।
প্রথা ভেঙ্গে ছেলেমেয়েরা কথা
বলা শুরু করে দিল এক সময়। গা সওয়া
হয়ে গেল, চোখে মেনে নিল
ব্যাপারটা। ছেলেমেয়ের কথা
বলাটা স্বাভাবিক হয়ে এক সময়।
.
.
নিয়ম অনুযায়ী ছেলে মেয়ের এই
‘নির্দোষ’ কথা বলা থেকে আরও
হায়ার কোন লেভেল যাওয়ার কথা
ছিল এরপর। আর হয়েছেও তাই । ছেলে
মেয়ের কথা বলা থেকে ব্যাপারটা
একসময় হাত ধরাধরির পর্যায়ে গেল।
গা সওয়া হয়ে গেল, চোখে মেনে
নিল ব্যাপারটা। প্রেমিক-প্রেমিক
া হাত ধরাধরি করে রাস্তায়
হাঁটাহাঁটি করছেনা, পার্কে বসে
আছেনা এই ব্যাপারটা এখন কল্পনা
করা পৃথিবীর অনেক কঠিন কাজগুলোর
একটা।
.
.
কমার্স কলেজের ঐ ছেলে-মেয়েটার
ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্যে জড়িয়ে
ধরে প্রেমের প্রস্তাব দেয়া আর
ঘটনাটা ভিডিও করে রাখা হচ্ছে
আরও একটা লেভেল। ধন্যবাদ কলেজ
কর্তৃপক্ষকে যে তারা এই লেভেলটার
সাথে সমাজকে অভ্যস্ত হতে দেয়নি
বরং অঙ্কুরেই সেটাকে বিনষ্ট করে
ফেলেছে। ছাত্রত্ব বাতিল আর
টিসি দেয়ার কারণে এই লেভেলের
ঘটনা দেশের অন্য কোথাও ঘটানোর
আগে এখন দশবার ভাববে কেউ।
.
যদি এই ঘটনাকে সহজ ভাবে ছেড়ে
দেয়া হত তবে কী হত? প্রকাশ্যে
জড়িয়ে ধরা থেকে আরও কয়েকবছর পর
ঘটনাটা যেত ভিন্ন একটা লেভেলে
– প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া, ওয়েস্টে যা হয়
আর কি। সবগুলো লেভেল কমপ্লিট
হতে আর বাকি নেই বেশি।
.
যে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলাম –
পঞ্চম ধাপে কোন সমস্যা দেখা
দিলে আমরা সেটার সমস্যা খুঁজি
চতুর্থ ধাপে। গোঁড়াতেই যে সমস্যা
ছিল, সেটা আমাদের মাথায় ঢুকে
না। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন আর
অনিয়ন্ত্রিত অন্তর্জাল – এই দুটো
আমাদের সমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে
তিলেতিলে। নইলে ক্লাস ফাইভের
একটা ছেলে কীভাবে জানে ধর্ষণ
কী আর কীভাবে করতে হয়?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ সকাল ৭:৫৯