মেলবোর্ণের সূর্যাস্তের দৃশ্যটি গুগল থেকে নেয়া।
দেখতে দেখতে সামুতে কখন যে একটি দশক পেরিয়ে গেল টেরই পাইনি। পাব কি করে? ব্লগে আসলে তো। আসলে সত্যি কথা, এখন আর আগের মত ব্লগে তেমন আসার সুযোগ হয়ে ওঠে না। তার প্রমান এখানেই রয়েছে। ০১ লা জুলাই, ২০২০ এর পরে আর কোন পোস্ট না দেয়াই তার প্রমান। অবশ্য পোস্ট না দিলেও সামুতে একটু আধটু ঢু মেরে যাওয়া একেবারে বন্ধ ছিল না কখনোই। মাঝেমাঝে ঠিকই এসেছি এবং পরিচিত অনেকের লেখাই পড়েছিও। সামুতে লগ ইন করে একটু পূর্বে দেখলাম, বয়স বেড়ে ১০ বছর হয়ে অতিক্রম করছে ৫ম মাস। বাহ, বেশ আনন্দের।
যা হোক, জীবনের নানান চড়াই উৎড়াইয়ে ব্যস্ততার মাঝেই কেটে যায় আমাদের মুঠি মুঠি মুহূর্তগুলো। আর এই মুহূর্তগুলো থেমে থাকে না এক লহমার জন্যও কখনো। গহীন নিরবতায় বরং নিরন্তর ধাবমান মুহূর্তরা। আর নিরন্তর ধাবমান এই মুহূর্তের কাটার সাথে আমাদের বয়সের কাটাও কিন্তু বেগবান একইরকম দূরন্ত গতিতে। কেউ কেউ বলেন, বয়স বাড়ে। আমারও মাঝেমাঝে এমনটা মনে হয়। মন বলে ওঠে, বয়স বেড়ে যাচ্ছে। আসলে বয়স কি আমাদের বাড়ে? না কি, কমে ক্রমান্বয়ে? যত দিনের হায়াত বরাদ্দ দিয়ে মহান মালিক পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আমাকে, তার আর কতটা হাতে আছে? তার অধিকাংশই যে খরচ হয়ে যায়নি, তার নিশ্চয়তা কি? বেশিরভাগটাই যে শেষ হয়ে যায়নি, সে কথা বলার যৌক্তিকতা কি? তাহলে বয়স বাড়ে- এ কথা বলার সুযোগ কোথায়? অতি সামান্য কিছু সময় যা এখনও সামনে রয়েছে, তাও তো কেটে যাচ্ছে খুবই দ্রুত। ফুরিয়ে যাচ্ছে দেখতে না দেখতেই। আর হায়াতের মূল বরাদ্দ থেকে মুহূর্তদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে ক্রমশঃ। তো, তাহলে বয়স বা হায়াত আমার সত্যিাকারার্থে বাড়ছে, না কি আসলে কমেই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত?
বয়স এবং সময় আমাদের ক্রমেই ফুরিয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা ডুবে আছি নিত্য উদাসীনতায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের হিসাবের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে।’ -সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ০১
জীবন পথের বাঁকে বাঁকে নানা কিছুর সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। সুখ-দুঃখের মিশেলেই আমাদের অতিশয় ক্ষুদ্র পার্থিব এই জীবন। ব্যাধি ও জরাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যায় এখানে প্রতিটি প্রাণ। কাজেই আমাদের সময় সচেতন হতে হবে। আল্লাহ তাআ'লা বলেন, ‘তিনি দুর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন; তারপর দুর্বলতার পর শক্তি দেন, আবার শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য।’ -সুরা রুম, আয়াত : ৫৪
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, পরে শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর জমাট রক্ত থেকে, তারপর তোমাদের শিশুরূপে বের করেন, তারপর হও যৌবনপ্রাপ্ত, তারপর উপনীত হও বার্ধক্যে। তোমাদের কারো বা আগেই মৃত্যু হয়ে যায়।’ -সুরা মুমিন, আয়াত : ৬৭-৬৮
এক হাদিসে নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘পাঁচটি বিষয়কে অপর পাঁচটি বিষয় আগমনের আগে গনিমত মনে করো। বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দরিদ্রতার আগে সচ্ছলতাকে, কর্মব্যস্ততার আগে অবকাশকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৫৪৬০
অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘দুটি নেয়ামতের মাধ্যমে যথাযথ উপকৃত হতে অনেক মানুষই ব্যর্থ হয়। তা হচ্ছে- সুস্থতা ও অবসর সম।’ -বুখারি, হাদিস : ৬০৪৯
খলিফাতুল মুমিনীন হযরত ওমর (রা.) তার কোনো এক বক্তব্যে একটি অসাধারণ এবং শিক্ষণীয় উক্তি করেছিলেন। তিনি বলেন,
‘তোমার কাছে হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।’ -তিরমিজি, হাদিস : ৪/৬৩৮
এমনটাই হওয়া উচিত প্রকৃত বিশ্বাসী ব্যক্তির শান। প্রকৃত বিশ্বাসী নিজের কথা, কাজে স্বচ্ছ থাকবেন, এটাই সত্য। অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। অন্যকে হেয় করবেন না। কাউকে কষ্ট দিবেন না। ঠকাবেন না। মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআ'লার হক এবং অধিকারসমূহও যথাযথভাবে আদায় করতে সচেষ্ট থাকবেন।
অতএব, অতি সংক্ষিপ্ত আমাদের এই মানব জীবনে সময়ের সদ্ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সামনের দিনগুলোতে পরিশুদ্ধ আমল এবং নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদতের প্রতিশ্রুতির সাথে সাথে জীবনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দৃপ্ত অঙ্গীকারে আবদ্ধ হই আমরা।
ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ আগুন সময় পাড়ি দিয়ে ব্লগের সুদিন দুর্দিনে এই কমিউনিটির সাথেই যারা ছিলেন, আছেন আজও পুরাতন সেইসব ব্লগারদের অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি নতুন নতুন অনেক ব্লগার যুক্ত হয়েছেন, হচ্ছেন এবং হবেন এখানে- তাদেরকেও আন্তরিক অভিবাদন। নতুন পুরাতন সকলের পদচারনায় মুখর হোক বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ অনলাইন পাঠশালা সামহোয়্যার ইন ব্লগ- এই প্রত্যাশাই আজকের এই দিনে। ব্লগ মডারেটর, ব্লগ পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২৬