নিউজিল্যান্ডের খুনিটাকে সন্ত্রাসী বলা জায়েজ হবে কি?
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকার আল নূর জামে মসজিদে নামাজরত মুসল্লীদের উপর হামলা হয়েছে। কাছাকাছি শহরতলি লিনউডের মসজিদেও হামলা চালানো হয়।
সয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র চালিয়ে অর্ধশত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী ব্যক্তির ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাকারী স্বয়ংক্রিয় বন্দুক নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মসজিদের দিকে যাচ্ছেন। মসজিদের প্রবেশ কক্ষ থেকেই মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে শুরু করেন। মসজিদের ভেতর ছুটোছুটিরত মুসল্লিদের প্রতি টানা গুলি করতে থাকেন। এরপর মসজিদের এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে ঘুরে ঘুরে গুলি করতে থাকেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে যাঁরা মসজিদের মেঝেতে পড়েছিলেন, তাঁদের দিকে ফিরে ফিরে গুলি করছিলেন তিনি।
ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর পর ১৬/১৭ মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। এতে দেখা গেছে, ঠিক যেন ভিডিও গেম খেলছে কেউ একজন। ভিডিও গেমের মতো করে একজন বন্দুকধারী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করছে। হামলার ভিডিও দেখে ধারণা করা হচ্ছে, বন্দুকধারী হামলার আগে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। হয়তো তাঁর মাথায় ভিডিও ক্যামেরা বসানো ছিল। ধারণা করা যায়, হামলাকারী হামলাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন। অবশ্য কিছু সময়ের ভেতরে ফেসবুক থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সে ভিডিওটি। কিন্তু ততক্ষনে অনেকেই দেখেছেন সে ভিডিও। কেউ কেউ ডাউনলোড করে রেখে দিয়েছেন সেটি।
ঠান্ডা মাথায় যাদের খুন করা হয়েছে তাদের পরিচয় হচ্ছে তারা মুসলিম। আর যিনি বন্দুক হাতে মসজিদে ঢুকে পাইকারীভাবে খুন করলেন তার পরিচয় হচ্ছে, তিনি মুসলিম নন। ভিন্নধর্মী। যতটুকু জানা যায়, খৃষ্টান বংশোদ্ভূত। তার এই পরিচয়টির জন্য তিনি আজ অর্ধশতাধিক মানুষকে খুন করেও সন্ত্রাসী নন। জঙ্গি নন। জিহাদী কিংবা টেররিস্ট নন। বিশ্বখ্যাত মিডিয়াগুলো তাকে অন্তত একটিবারের জন্যও এসব খেতাবে ভূষিত করেনি। তারা ঘূনাক্ষরেও তাকে খৃষ্টান জঙ্গি বলেনি। ইহুদি সন্ত্রাসী তকমা লাগায়নি তার নামের সাথে।
আচ্ছা, এই হামলাকারী ব্যক্তিটি যদি মুসলিম হতেন? তাহলে অবস্থা কি দাঁড়াতো? 'মুসলিম জঙ্গি', 'মুসলিম সন্ত্রাসী' বলে এতক্ষণে তারস্বরে চিৎকার করে করে তারা কি কান ঝালাপালা করে তুলতেন না? 'মুসলিম জঙ্গি' বলে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তুলতেন না? তাবত বিশ্বের মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করার জন্য তারা কি মুখে ফেনা তুলতেন না? কেন এই দ্বিচারিতা? কেন? এই বৈষম্য কেন? 'জঙ্গি', 'সন্ত্রাসী', 'জিহাদী', 'চরমপন্থী', 'উগ্রবাদী', 'টেরোরিস্ট' শব্দগুলো কি শুধুই মুসলিমদের জন্য? এই জাতীয় শব্দাবলীর যাবতীয় পেটেন্ট কি কেবলমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্যই বরাদ্দকৃত? ধিক! শত ধিক! সভ্যতা নামের এমনতরো নিকৃষ্ট দুরাচারী দ্বিচারিতার প্রতি!
বন্দুক হাতের লোকটি অমুসলিম হলে কোনো সমস্যা নেই। বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। 'মানসিক ভারসাম্যহীন' কিংবা 'অসংলগ্ন' অথবা এই জাতীয় কোনো অযুহাতে বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা পরিলক্ষিত হবে। তিনি মুসলমান হন? তাহলে এটা নির্ঘাৎ এক ‘জেহাদি’ সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্র। 'জঙ্গি' অপতৎপরতা। আর একমাত্র সমাধান: তাবত বিশ্বের সকল স্থান থেকে মুসলমান খেদাও। মুসলিম জঙ্গিদের ঝেটিয়ে তাড়াও।
এফবিআই ডেটাবেইস থেকে বের হওয়া একটা প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৮০-২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ঘটা মাত্র ৬ শতাংশ সন্ত্রাসী ঘটনায় মুসলিম সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল। যুদ্ধাক্রান্ত সিরিয়াকে বাদ দিলে ২০১৬-১৭ সালেও বিশ্বের মোট সন্ত্রাসী ঘটনার বেশির ভাগই ঘটেছে অমুসলিমদের দ্বারা (গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স ২০১৮)।
ছবিঃ অনলাইন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:২৩