somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালাতুত তারাবীহ: আকীদাহ, সুন্নাত এবং বিদ‘আত

০৯ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রাককথন

প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীগণ এবং পূর্ববর্তী উত্তম জামানাগুলোর মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, তারাবী নামায বিশ রাকাত।

প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তারাবীহ সালাত সম্মন্ধে একাধিক মতামতযুক্ত হাদিস পরিদৃষ্ট হয়। ২০ রাকাআত পড়েছেন বলে প্রমান পাওয়া যায় নিম্নোক্ত হাদিসে।

হাদিস ০১-

عن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة والوتر

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে বিশ রাকাআত এবং বিতির পড়তেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}

হাদিস ০২-

عن جابر بن عبد الله قال خرج النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فى رمضان فصلى الناس اربعة وعشرون ركعة واوتر بثلاثة

হযরত জাবের রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাআত [৪ রাকাআত ঈশার, আর ২০ রাকাআত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাআত বিতির পড়ালেন। [তারীখে জুরজান-২৭}

বিশ রাকাআত তারাবীহর ধারাবাহিকতা

সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীগণ এবং পূর্ববর্তী উত্তম জামানাগুলোর মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, তারাবী নামায বিশ রাকাত। সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুম এর যুগ থেকে চলে আসা হারামাইন শরীফাইন তথা মক্কাতুল মুকাররমায় অবস্থিত বাইতুল্লাহ শরীফ ও মদিনাতুল মুনাওওয়ারার মসজিদে নববীতে বিশ রাকাআত তারাবীহর আমলকে অব্যহত রাখেন। আলহামদুলিল্লাহ, যা অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে।

বিভ্রান্তির সূচনা: বিভ্রান্তির ডালপালা বিস্তৃতি

শীয়াগণ ও শীয়া প্রভাবিত মুতাযিলাগণ সাধারণভাবে সাহাবীগণের বিরুদ্ধে কুৎসা ও বিদ্বেষ প্রচার করেন। বিশেষত উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর বিরুদ্ধে তাদের অপপ্রচার ও বিদ্বেষ সীমাহীন। এ সকল অপপ্রচারের একটি বিষয় হল- তারাবীহ। তারা তারাবীহকে বিদ‘আত বলেন এবং উমার রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু -কে বিদ‘আতী বলেন। নাউযুবিল্লাহ। তারা বলেন, উমার রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু ইসলামের মধ্যে নতুন কিছু বিষয় প্রচলন করেন যার একটি তারাবীহ। তারাবীহ বিদ‘আত। তারা বলেন, উমার নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তা বিদ‘আত। বুখারী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ সংকলিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তারাবীহের জামা‘আত প্রচলনের পরে উমার বলেন: (نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ): “এটি ভাল বিদআত’। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, সকল বিদ‘আতই বিভ্রান্তি এবং জাহান্নামী! কাজেই উমার নিজের স্বীকারোক্তিতেই বিভ্রান্ত ও জাহান্নামী! নাউযূ বিল্লাহ!!

আসুন, একটু পর্যালোচনা করি বিষয়টি

আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করলেই তাদের বিভ্রান্তি বুঝতে পারব। আমরা প্রথমে দেখব তারাবীহের মধ্যে কোনো নতুনত্ব আছে কি না।

দ্বিতীয়ত দেখব নতুনত্বে খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবীগণের জন্য কোনো বিশেষ মর্যাদা আছে কি না।

তারাবীহের মধ্যে কী নতুনত্ব রয়েছে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে ছিল না? তারাবীহ? না তার জামা‘আত? উভয় কর্মই সুন্নাতে নববী দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে রামাদানের কিয়ামুল্লাইল নিয়মিত পালন করেছেন, পালন করতে তাকিদ দিয়েছেন, কয়েক দিন জামাআতে পালন করেছেন, জামাআতে পালনের ফযীলত বর্ণনা করেছেন, তাঁর সময়ে ও পরবর্তী সময়ে ছোট ছোট জামাআতে বাড়িতে ও মসজিদে সাহাবীগণ ও তাবিয়ীগণ তা আদায় করেছেন। তাহলে আমরা দেখছি যে, উমার রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু একটি সুন্নাত জীবন্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয হওয়ার আশঙ্কায় নিয়মিত জামাআতে তা আদায় করেন নি। তাঁর ওফাতের পরে ফরয হওয়ার সম্ভাবনা তিরোহিত হয়, তবে বড় জামাআতে তারাবীহ আদায় না করার নিয়মটি রয়ে যায়। আবূ বাকর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু-এর দু বৎসরে তিনি এ দিকে নযর দিতে পারেন নি। এছাড়া সে সময়ে অধিকাংশ মুসলিমই ভাল হাফিয ও কারী ছিলেন, কাজেই জামাতে আদায়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতো কম। উমার রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বড় জামাতে তারাবীহ আদায়ের সুন্নাতটি পুনর্জীবিত করেন। তিনি কোনো বিদ‘আত প্রচলন করেন নি, বরং সুন্নাত জীবন্ত করেছেন।

এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে তিনি কেন একে “সুন্দর বিদ‘আত” বললেন? এর উত্তর খুবই সুস্পষ্ট। তিনি এখানে বিদ‘আত শব্দটি পারিভাষিক অর্থে নয়, বরং আভিধানিক অর্থে ব্যবহার করেছেন। আভিধানিক অর্থে বিদ‘আত অর্থ ‘নতুন’ বা নব-উদ্ভাবন। আর কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় বিদ‘আত অর্থ সুন্নাতের ব্যতিক্রম কোনো নতুন বিষয়কে দীনের বা ইসলামের অংশ বানানো। উমার রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এখানে বিদ‘আত বলতে দ্বিতীয় অর্থ বুঝান নি। তিনি বুঝিয়েছেন যে, আমাদের দৃষ্টিতে এটি একটি নতুন বিষয়; কারণ নিয়মিত জামাতে তারাবীহ আদায় অপ্রচলিত হয়ে গিয়েছিল। তবে যেহেতু বিষয়টি মূলত সুন্নাত, বিশেষ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়মিত করেন নি; সেহেতু তা আপাত দৃষ্টিতে নতুন হলেও সুন্দর নতুন।

যেমন আমরা বলি, ‘আল্লাহ প্রেমে মাদকতা বা উন্মত্ততা কতই না ভাল মাদকতা’। এর অর্থ এ নয় যে, কিছু কিছু মাদক দ্রব্য বৈধ অথবা আল্লার প্রেম মাদকতা হওয়ার কারণে তা অবৈধ। এর অর্থ বাহ্যিকভাবে একে মাদকতা বা উন্মত্ততা বলে মনে হলেও তা প্রশংসনীয়। ইমাম শাফিয়ী বলেন: ‘নবী-বংশের ভালবাসা যদি রাফিযী-মত হয় তাহলে জিন-ইনসান সকলেই সাক্ষী থাকুক যে, আমি রাফিযী-শীয়া।’ (ইমাম শাফিয়ী,আদ- দিওয়ান, পৃ. ১৪)। অর্থাৎ নবী-বংশের প্রেম শীয়াত্ব-ই নয় এবং নবী-বংশের ভালবাসায় কেউ শীয়া হয় না।
তাহলে তারাবীহর মধ্যে কোনো বিদ‘আত বা নতুনত্ব নেই, বরং সবই প্রমাণিত সুন্নাত। এবার আমরা দ্বিতীয় বিষয়টি পর্যালোচনা করব। খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবীগণ কি উম্মাতের অন্যদের মতই? না সুন্নাতের ব্যাখ্যায় তাঁদের বিশেষ কোনো মর্যাদা আছে? রাসূলুল্লাহ সা.-এর বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি যুক্তি ও বিবেক নিশ্চিত করে যে, তাঁদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সা.-এর সকল নির্দেশ ও সুন্নাতের প্রেক্ষাপট জানতেন। কোথায় সংযোজন, বিয়োজন বা ব্যতিক্রমের সুযোগ রাসূলুল্লাহ সা. রেখে গিয়েছেন তাও তাঁরা ভাল জানতেন। তাঁরা যদি সুন্নাতের কোনো ব্যাখ্যা দেন তা নতুন বলে মনে হলেও সুন্নাত বলে গণ্য হবে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:

فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ.

“আমার পরে তোমরা যারা বেঁচে থাকবে তাঁরা অনেক মতবিরোধ দেখবে। কাজেই তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার পরের হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাত দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। খবরদার! নব উদ্ভাবিত কর্মাদি থেকে সাবধান থাকবে; কারণ সকল নব উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদ‘আত এবং সকল বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা।” তিরমিযী, আস-সুনান (৪২-কিতাবুল ইলম, ১৬ বাব- আখয বিসসুন্নাহ) ৫/৪৪, নং, ২৬৭৬; আবু দাউদ, আস-সুনান ৪/৩২৯ (কিতাবুস সুন্নাত, বাব লুযূমিস সুন্নাহ) নং ৩৯৯১/৪৬০৯;, ইবন মাজাহ, আস-সুনান (মুকাদ্দিমাহ, বাব ইত্তিবায়ি সুন্নাতিল খুলাফায়ির রাশিদীন) ১/১৫-১৬ নং ৪২ ও ৪৩। হাদীসটি সহীহ।

এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, খুলাফায়ে রাশেদীনের কর্মও সুন্নাত। বিদ‘আত অর্থ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খুলাফায়ে রাশেদীনের কথা, কর্ম, রীতি বা সুন্নাতের ব্যতিক্রম উদ্ভাবিত বিষয়। কাজেই তাঁরা যদি সুন্নাতের ব্যতিক্রম কিছু করেন তাহলে তাকে বিদ‘আত বলার অধিকার পরবর্তীদের নেই, কারণ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সুন্নাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিস্তারিত দেখুন: যাহাবী, আল-মুনতাকা মিন মিনহাজিল ইতিদাল পৃ. ৫৪১; মোল্লা আলী কারী, শারহুর ফিকহিল আকবার, পৃ. ১২২; আলী ইবনু নাইফ শাহ্হূদ, আল-মুফাস্সাল ফির রাদ্দি আলা শুবুহাতি আ’দাইল ইসলাম ১৩/৮, ১২৫, ১২৬, ১৯১; শুবুহাতুর রাফিযাতি হাওলাস সাহাবা ১/২৭৬; তুওয়াইজিরী, শারহুল ফাতওয়াল হামাবিয়্যাহ, পৃ. ৪৪৫; ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, এহইয়াউস সুনান, পৃ. ৬১-৮৯ ও ৯৭-১০৭।

“তারাবীহ” প্রসঙ্গে উমার রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু-এর বক্তব্যে “বিদ‘আত” শব্দকে পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত দাবি করে শীয়াগণ যেমন বিভ্রান্ত হয়েছেন, মূলধারার অনেক আলিমও তেমনি বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। এ কথা দিয়ে তাঁরা দুটি বিষয় প্রমাণ করতে চান:

(১) পারিভাষিক বিদ‘আত বা সুন্নাতের ব্যতিক্রম কোনো কিছুকে দীনের অংশ বানানো ভাল বলে গণ্য হতে পারে এবং

(২) উমার রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু যেমন তারাবীহের বিদ‘আত প্রচলন করেছেন তেমনি নতুন নতুন বিদ‘আত প্রচলনের অধিকার পরবর্তী যুগের মুসলিমদেরও আছে।

এই বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে এখানে সংক্ষেপে নিম্নের বিষয়গুলো উল্লেখ করা যায়:

(১) সকল হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “সকল বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা”। এর বিপরীতে একটি হাদীসেও বলা হয় নি যে, ‘কিছু বিদ‘আত পথভ্রষ্টতা ও কিছু বিদ‘আত ভাল’। কাজেই একটি বিশেষ কর্মকে কোনো সাহাবী আভিধানিক অর্থে বিদ‘আত বলে থাকলে সে হাদীসের দ্বারা অন্যান্য সকল হাদীসের সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন অর্থ বাতিল করা যায় না। হাদীস শরীফে সর্বদা “বিদ‘আত” শব্দকে নিন্দার অর্থে বলা হয়েছে। নিন্দার জন্য বিদআতের সাথে কোনো বিশেষণ যোগ করা হয় নি। উমারের এ বক্তব্য দ্বারা বিদআতের ভাল হওয়ার সম্ভাবনা স্বীকার করা আর ইমাম শাফিয়ীর বক্তব্য দ্বারা রাফিযী-শীয়া মতবাদ ভাল হওয়ার, কোনো কেনো রাফিযীর ভাল হওয়ার বা ইমাম শাফিয়ীর রাফিযী হওয়ার দাবী একই প্রকারের ভুল।

(২) আমরা দেখেছি যে, উমার রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু-এর এ কর্মটি কোনোভাবেই বিদ‘আত নয়, নতুনও নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ, বাণী ও কর্ম দ্বারা প্রমাণিত সুন্নাত। কাজেই উমারের কথাকে যদি “ভাল বিদ‘আত” বা বিদআতে হাসানার মানদণ্ড ধরা হয় তাহলে বলতে হবে, যে কর্ম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন, করার ফযীলত উল্লেখ করেছেন কিন্তু বিশেষ কারণে নিয়মিত করতে পারেন নি বা তাঁর পরে অব্যাহত থাকে নি, সে কর্ম পুনরুজ্জীবিত করাকে বিদআতে হাসানা বা ভাল বিদ‘আত বলা হয়।

(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নি, অথচ খুলাফায়ে রাশেদীন বা সাহাবীগণ করেছেন এরূপ কর্ম দু প্রকারের হতে পারে:

(ক) তিনি নিজে বিশেষ কারণে না করলেও তা করার উৎসাহ বা অনুমতি তাঁর সুন্নাতে রয়েছে। যেমন কুরআন গ্রন্থাকারে সংকলিত করা, খারিজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইত্যাদি। তারাবীহের জামা‘আতও এ পর্যায়ের।

(খ) তাঁরা জাগতিক প্রয়োজনে বা সুন্নাত পদ্ধতিতে ইবাদত পালনের উপকরণ হিসেবে তা উদ্ভাবন করেছেন। যেমন কুরআনে বিভক্তিচিহ্ন বা হরকত প্রদান, আরবী ব্যাকরণ শিক্ষার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নিয়মকানুন প্রচলন ইত্যাদি। এগুলিকে তাঁরা বা অন্য কেউ “দীনের অংশ” বানান নি। অর্থাৎ কেউ বলেন নি যে, কেউ যদি আরবী ব্যাকরণ শিক্ষা ছাড়াই বা বিভক্তিচিহ্ন ছাড়াই বিশুদ্ধভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মত সুন্নাত পদ্ধতিতে কুরআন পাঠ করে তাহলে ব্যাকরণ বা বিভক্তিচিহ্ন বাদ দেওয়ার কারণে তার সাওয়াব কম হবে।

(গ) আমরা দেখেছি যে, সুন্নাতে নববীর ব্যাখ্যার ও সুন্নাতের আলোকে কোনো কিছু প্রবর্তন করার যে অধিকার সাহাবীগণের ছিল, তা অন্যদের নেই এবং থাকতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীহের নিয়মিত জামা‘আত বর্জন করেন বিশেষ কারণে। খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবীগণ বুঝেন যে, কারণটি তিরোহিত হওয়ার পরে এ মাসনূন কর্মটিকে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রন্থাকারে কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিয়েছেন, গ্রন্থ দেখে কুরআন পাঠের ফযীলত বলেছেন, তবে ওহী নাযিলের ধারাবাহিকতা চলতে থাকায় চূড়ান্ত গ্রন্থায়ন করতে পারেন নি। তাঁর ওফাতের পরে সাহাবীগণ তা করেছেন। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহর তাওয়াফের সময় দৌড়ে দৌড়ে তাওয়াফ করেছিলেন মুশরিকদের শক্তি প্রদর্শনের বিশেষ উদ্দেশ্যে। খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবীগণ বুঝেন যে, কারণটি তিরোহিত হওয়ার পরেও আমলটি অব্যাহত রাখাই সুন্নাত।

সাহাবীগনের অনন্যতা সর্বত্র সমভাবে গ্রহনযোগ্য

এভাবে সুন্নাতের সাথে ব্যাখ্যামূলক সংযোজন-বিয়োজন একমাত্র সাহাবীগণই করতে পারেন। সাহাবীগণের পরে আর কেউ কোনোভাবে কোনো কারণ বা অজুহাতে সুন্নাতের সামান্যতম ব্যতিক্রম কোনো কিছুকে দীনের অংশ বানাতে পারেন না। সাহাবীগণ সুন্নাতের ব্যতিক্রম কিছু প্রচলন করেছেন যুক্তিতে নতুন কোনো কথা, কর্ম বা রীতি উদ্ভাবন করে তাকে দীনের অংশ বানানোর অধিকার কারো নেই। এরূপ করলে কুরআন ও হাদীস সাহাবীদের যে মর্যাদা ও বিশেষত্ব দিয়েছে তা নষ্ট করা হয় এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্যের অবমূল্যায়ন করা হয়।

সমাপ্তিকথন:

আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ, তিনি আমাদের সহীহভাবে দ্বীন বুঝার এবং আমল করার তাওফিক দান করুন। প্রশংসা মহান রবের জন্য, দরূদ ও সালাম প্রিয়তম হাবিবের প্রতি, শুরুতে এবং শেষে।

নিবন্ধটি তৈরিতে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে:

১। তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত এই বিষয়ক নিবন্ধ।
২। মাওলানা আব্দুল মতিন রচিত দলিলসহ নামাজের মাসায়েল।
৩। আল কুরআন।
৪। ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী
৫। বুখারি শরীফ।
৬। তিরমিজি শরীফ।
৭। মুসলিম শরীফ।
৮। আবু দাউদ শরীফ।
৯। নাসায়ী শরীফ।
১০। ইবনে মাজাহ শরীফ।
১১। সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব।
১২। মুসনাদ আহমদ।
১৩। কুরআনের আলো ডট কম ওয়েসাইট।
১৪। ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া।
১৫। নুজুলুল আবরার।
১৬। আল ইনতিকাদুর রাজী’।
১৭। আল মিসবাহ।
১৮। ইলাউস সুনান।
১৯। আল আরফুল জাদি।
২০। শরহুল মিনহাজ।
২১। আল বুলুগুল মারাম।
২২। মিযানুল ই’তিদাল।
২৩। তুহফাতুল আহওয়াজী।
২৪। আলমুগনী।
২৫। ইরশাদুস সারী।
২৬। শরহুন নুকায়া।
২৭। ইতহাফুল সাদাতুল মুত্তাকীন।
২৮। কিতাবুল আসার লিআবী ইউসুফ।
২৯। মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা।
৩০। মুখতাসার কিয়ামুল লাইল।
৩১। আল বাহরুর রায়েক।
৩২। মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার।
৩৩। সিয়ারু আলামিন নুবালা।
৩৪। কানযুল উম্মাল।
৩৫। শরহু মুয়াত্তা।
৩৬। সুনানু বাইহাকি।
৩৭। http://assunnahtrust.com

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১০:১৬
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×