নিউজে দেখতে পেলাম আমেরিকার টেক্সাস থেকে ৭টি কুরবানীর গরু সরাসরি আমদানি হয়েছে। বিক্রিও হয়ে গেছে ২৫ লক্ষ থেকে ২৮ লক্ষ টাকা! এই ব্যাপারটা খুব হাস্যকর লাগলো । আমেরিকায় বহু বছর থাকার পরেও আমেরিকার গরু- খাসির মাংসের স্বাদ কখনো বাংলাদেশের গরু- খাসির চেয়ে উপাদেয় মনে হয়নি।
উত্তর আমেরিকায় সব সময় মিডল ইস্টের সাথে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করে থাকে । সে হিসেবে ২১ আগস্ট আমেরিকায় কোরবানীর ঈদ । বিদেশে শত কাজের ভীডে কোরবানী দেওয়াটা খুব ঝামেলার বলে বেশীর ভাগ লোক বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়ে দেন কোরবানীর জন্য । আমিও তাই করে থাকি । তবে ছোট বেলা থেকে ঈদের দিন ঘরে মাংস না হলে মোটেও আনন্দ হয় না । এমনিতেই এই দেশে ঈদ যে কেমন করে আসে আর কখন চলে যায় সেটা বোঝাই যায় না। তাই আমি সব সময় চেষ্টা করি এই দেশে কোরবানী দিতে ।
নিউ ইয়র্ক কোরবানী দেওয়াটা অন্যান্য স্টেটের তুলনায় কিছুটা সহজ । নিউ ইয়র্কে বাঙ্গালী পাকিস্তানি ও আরবীয় মুসলমান সংখ্যায় অনেক বেশী হওয়াতে এখানে কোরবানী দেওয়াটা কিছুটা সহজ । এখানে দুইভাব কোরবানী দেওয়া যায় । প্রথমত — প্রায় সব হালাল মাংসের দোকানে রোজার ঈদের পর থেকেই কোরবানীর অর্ডার নিয়ে থাকে । কোরবানীর অর্ডার দিতে চাইলে হালাল মাংসের দোকানে নগদ টাকা ও যার নামে দেওয়া হবে তার নাম লিখে দিয়ে আসতে হবে । কোরবানীর ঈদের দিন বিকালে যেয়ে দোকানে খোঁজ নিতে হবে মাংস এসেছে কিনা । যদি এসে থাকে তবে ক্যাশ টাকা যেটা আগে পরিশোধ করা হয়েছিলো তার রশিদ দেখিয়ে মাংস আনতে হবে । এভাবে কোরবানী দেওয়ার অসুবিধা হলো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে মাংস বয়স্ক গরুর বা খাসির হয়ে থাকে । ৩/৪ ঘন্টাতেও সিদ্ধ হয় না । প্রথম দুই বছর এভাবেই দিয়েছিলাম । কিন্তু মাংস খাওয়ার সময় খুব অসুবিধা হয়েছিলো তাই এখন আর এভাবে দেই না ।
হালাল লাইভ পোলট্রির দোকান এখানে লাইভ খাসি গরু জবাই করে কোরবানি দেওয়া হয়
দ্বিতীয়ত — ঈদের ১০/১২ দিন আগে হালাল লাইভ গরু ছাগলের দোকান আছে নিউ ইয়রক সিটিতে বেশ কয়েকটা । সেখানে যেয়ে নিজের পছন্দ মত খাসি সিলেক্ট করে ওজন করতে হয় । এবার প্রতি কেজি হিসেবে এসেছে ১১ ডলার করে । সে হিসেবে ৪০ কেজির একটি খাসি পছন্দ করে তার কানে নাম্বার লাগিয়ে দিয়ে এসেছি । দাম পড়েছে ৪৪০ ডলার । সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে দিতে হয় । টাকা পরিশোধের রশিদের সাথে খাসির নাম্বার লিখে দিয়েছে । ঈদের দিন সেই নাম্বার ধরে খাসির রশি ধরে লাইনে দাঁড়াতে হবে । এখানে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কোরবানী করা হয় । তাই সকাল সকাল প্রথম জামাত পরেই চলে যেতে হয় ।
বাংলাদেশে থাকতে কখনো সরাসরি কোরবানি দেখার সাহস পেতাম না । ছুরি চাকু দেখলেই খুব ভয় পেতাম। এই দেশে আসার পর প্রথম কয়েক বছর ভয় পেলেও এখন কিহুটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি । মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য ও তার এবাদত হিসেবে পশু জবেহ করা। এই বোধটি যেদিন হৃদয়ে ধারন করেছি তারপর থেকে আর ভয় পাইনা। ভয় পাইনা এখন আর কোন বৈরি কিছুতেই ।
এবারের এই মঙ্গলবার হওয়াতে ঈদের সারাদিন অফিসে থাকতে হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় ঘরে ফিরে মাংস নিয়ে ঘরে ফিরে আসতে রাত ১০ টা বেজে যাবে। এই সময়টাতে বাংলাদেশের জন্য ভীষণ মন কাঁদে ।
বাংলাদেশের সবাইকে ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সকল বাংলাদেশি ও মুসলিম অমুসলিম সকলকে পবিত্র ঈদ উল আযহার শুভেচ্ছা জানাই ।
লেখাটি উৎসর্গ করলাম ব্লগার @ অধৃষ্য কে । তার লেখা "কী লিখবো? কীভাবে লিখবো? " লেখাটি পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখাটি লিখতে পারলাম । অসংখ্য ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাই তাকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:২৯