ব্লগে এক কাদিয়ানী অনুসারীর আবির্ভাব ঘটেছে। বিশ্ব মুসলিমকে তাদের লন্ডনমুখী কেবলার দিকে দাওয়াত দিয়ে হাবিয়া জান্নাতে পৌঁছে দিতে সে গায়ে পড়ে লিঙ্ক বিলাচ্ছে। সুখে থাকতে ভূতে কিলাইলে যা হয় আর কি!
লক্ষ্য করার বিষয়, প্রত্যেক দলের অনুসারীদের মধ্যে দলনেতার চরিত্র সংক্রমিত হয়। এ লোকটিও তার গুরুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তথা মিথ্যাবাদিতা ও নির্লজ্জতা ভালোভাবেই আত্মস্থ করেছে। এ জাতীয় "সালসা বিক্রেতা" ব্লগারদের মনে আকাঙ্ক্ষাই থাকে তাদের বিরুদ্ধে কিছু একটা লেখা হোক যাতে তারা প্রচার পেতে পারে। আমারও তাই খায়েশ হল লোকটা এতই যখন কান্নাকাটি করছে, একটু আলোচনায় আসার পথ তৈরী করে দেই, পাছে না আবার তার পেটে লাথি পড়ে!
গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নিজেকে আসলে কি দাবী করেছিল এটা একটা রহস্যাবৃত বিষয়। তবে কথা হচ্ছে তার দাবীতে সে নবীই হোক অথবা ছায়ানবী অথবা মাহদী অথবা ঈসা; ইতিহাস বলে, এ ধরণের দাবী সে একাই করেনি। মুহাম্মাদ (সা) এর জীবদ্দশায়ই মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার মুসায়লামার আবির্ভাব ঘটেছিল। মহানবী (সা) এর মৃত্যুর পরে তো নবী দাবীকারী লোকদের পৌষ মাস শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্তভাবে তাদের পরিণতি কি হয়েছিল তা কারও অজানা নয়। বাকী রইল মাহদী ও ঈসা হওয়ার দাবী।
মাহদী আগমনের ভিত্তি কি?
মুসলিমরা বিশ্বাস করে কিয়ামতের পূর্বে তাঁদের মধ্যে একজন নেতার আবির্ভাব ঘটবে। যিনি বিশ্বজয় করবেন এবং সুশাসনে সারা পৃথিবী ভরিয়ে দিবেন। তাঁর উপাধী হবে "মাহদী"। যেহেতু কুরআনে এ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। সুতরাং মাহদী আগমনের ভিত্তি হচ্ছে হাদীস। অতএব, 'মাহদী একজন আগমন করবেন' এই জ্ঞানের উৎস যে হাদীস, যার ভিত্তিতে গোলাম আহমাদ মুসলিমদেরকে তার বায়আত ও আনু্গত্যের দাবী করলেন, সেই হাদীসইতো বলে দিচ্ছ্, মাহদীর নাম কি হবে, পিতার নাম কি হবে, কোন বংশে আসবেন, কোথায় আবির্ভূত হবেন, কত বছর শাসক হিসেবে পৃথিবীময় রাজত্ব করবেন। এসবের একটাও কি ব্রিটিশরাজত্বের প্রভুভক্ত এক কেরানি গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সাথে মিলে? উত্তরটা পাঠকদের গবেষণার জন্য রেখে দিলাম।
পৃথিবীতে এ পর্যন্ত মাহদী দাবীকারীর সংখ্যা সম্ভবত হাজারেরও বেশি। তাদের অনেকের নামধামও হাদীসের সাথে মিলে যায়। মাহদী দাবী করে মক্কায় কাবা ঘর দখলে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তারাই যেখানে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হয়েছে সেখানে পাকিস্তানী "কাদিয়ানী" কোন ছার!
প্রতিশ্রুত মাসীহঃ
এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। মাসীহের আগমন যদি প্রতিশ্রুতই হয় তবে সে প্রতিশ্রুতি কোথায় যার মাধ্যমে আমরা বিষয়টি জানলাম?
উত্তরঃ কুরআনের (৪৩ঃ৬১) নং আয়াত এবং হাদীস।
উপরোক্ত আয়াত এবং হাদীস থেকে জানা যায়, একজন আসবেন, তিনি স্বয়ং ঈসা (আ)। এখন প্রতিশ্রুত একজন আসবেন এটা যদি মানতেই হয়, তবে তিনি স্বয়ং ঈসা (আ) এটাও মানতে হবে। একই বাক্যের অর্ধেক মানা আর বাকী অর্ধেক অস্বীকার করে নিজের নাম প্রচার করা কোন ধরণের সততার মধ্যে পড়ে?
নবীদের নবুওয়াত দেন আল্লাহ আর কাদিয়ানীকে নবুওয়াত দিয়েছে ব্রিটিশরাঃ
কাদিয়ানীদের বিষয় সুস্পষ্ট কথা হচ্ছে, ভারতবর্ষে নিজেদের রাজত্ব দীর্ঘায়িত করার আকাঙ্ক্ষায় ব্রিটিশরা মুসলিমদের জিহাদী স্পৃহা নষ্ট করতে ও তাদেরকে বিভিন্নভাগে ভাগ করতে এই কাদিয়ানী এবং এর মত আরও কিছু দালাল সৃষ্টি করেছিল। মুসলিমদের শ্রেণী অনুযায়ী এই দালালদের ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়েছিল।
উদাহরণ স্বরূপ-
* সাধারণ শিক্ষিতদের পেছনে ব্যবহার করা হয়েছিল আলীগড় কেন্দ্রিক সৈয়দ আহমদ খানকে।
* রক্ষণশীল মুসলিমদের পেছনে ব্যবহার করা হয়েছিল আহমাদ রেযা খান বেরেলভীকে।
* অশিক্ষিত সাধারণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করতে লাগানো হয়েছিল নবুওয়াত সহকারে মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে।
বিশ্বাস এবং কার্যপদ্ধতি আলাদা হলেও এদের প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা ছিল রাজভক্তির মহিমা গাওয়া এবং ব্রিটিশ-বিরোধী যে কোন আন্দোলন-সংগ্রামের বিরোধিতা করা। তাইতো দেখা যায়, সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভী (বালাকোটের শহীদ) যখন জিহাদ শুরু করলেন এবং সীমান্তে পৃথক ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করলেন তখন তার বিরুদ্ধে "ওয়াহাবী" ফতোয়া নিয়ে এগিয়ে আসলেন এক শ্রেণীর তথাকথিত সুন্নী আলেম। ওই প্রথম উপমহাদেশে "ওয়াহাবী" শব্দের ব্যবহার যা এখনো আমাদের সমাজে সুন্নি-ওহাবী দ্বন্দ্ব হিসেবে প্রচলিত। মিথ্যা অভিযোগ হলেও মুসলিমদের একাংশকে ঠিকই সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভীর বিরুদ্ধে উস্কে দিতে সক্ষম হলো তারা। যার ফলে বালাকোটের ট্রাজেডি রচিত হল।
গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর লেখা যা কাদিয়ানীরা এখনো প্রচার করে তার মধ্যেই ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে যে এই লোকের আসল উদ্দেশ্যই ছিল ব্রিটিশদের দালালী করা এবং বিরোধী আন্দোলনকে হারাম ফতোয়া দেয়া।
সিয়ালকোটের পাঞ্জাব প্রেস হইতে মুদ্রিত শাহাদাতুল কোরানের ষষ্ঠ মুদ্রণে ‘সরকারের লক্ষ্য করার যোগ্য’ শীর্ষক পরিশিষ্ট রহিয়াছে। তাহাতে মির্জা সাহেব লিখিয়াছেন, “অতএব আমার ধর্ম- যাহা আমি বরাবর প্রকাশ করি এইযে, ইসলামের দুইটি অংশ রহিয়াছে। প্রথমত আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য স্বীকার করা। দ্বিতীয় সেই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা যাহা শান্তি স্থাপন করিয়াছে, অত্যাচারীদের হাত হইতে উদ্ধার করিয়া নিজের আশ্রয়ে আমাদিগকে গ্রহণ করিয়াছে। আর তাহা হইতেছে বৃটিশ সরকার।” (৩য় পৃষ্ঠা)।
“এবং আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি যে, আমার মুরীদের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাইবে জেহাদের বিধান সমর্থনকারীদের সংখ্যা ততই হ্রাস পাইবে। কারণ আমাকে মসীহ এবং মাহদী হিসাবে মানিয়া লওয়াই জেহাদের বিধানকে অস্বীকার করা।” (১৭ পৃষ্ঠা)।
কাদিয়ানী খলিফার ঘোষণা-
“আহমদিয়া আন্দোলনের সহিত বৃটিশ সরকারের যে সম্পর্ক রহিয়াছে তাহা অন্যান্য জামায়াতের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের অবস্থান এমন যে, সরকার এবং আমাদের স্বার্থ এক হইয়া গিয়াছে। বৃটিশ সরকারের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জন্য অগ্রসর হওয়ার সুযোগ উপস্থিত হয়। খোদা না করুন- ইহার যদি কোন অনিষ্ট হয় তবে আমরাও সেই আঘাত হইতে রক্ষা পাইব না।” –আলফজল পত্রিকা, ২৭শে জুলাই, ১৯১৮
"ইংরেজ সরকারের করুণা- দৃষ্টি লাভের পর তাহারা সৈন্য বিভাগ, পুলিশ, আদালত এবং অন্যান্য সরকারী অফিস সমূহে নিজেদের লোকজনকে ভর্তি করাইতে লাগিল। কাদিয়ানীরা মুসলমান সাজিয়া মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট চাকুরীর কোটা হইতে বড় একটা অংশ অপহরণ করিতে লাগিল। অপরদিকে সরকারপক্ষ হইতে মুসলমান সমাজকে সান্ত্বনা দেওয়া হইল যে, এই দেখ- এত বড় বড় চাকুরী তোমাদিগকে দেওয়া হইল। প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট চাকুরীর বিরাট একটি অংশ কাদিয়ানীদিগকে দেওয়া হইতেছিল। এই সুযোগে কাদিয়ানীরা মুসলমানদের প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিয়া নিজেদের মুসলমান বিরোধী সংগঠন মজবুত করিতে লাগিল। সরকারী কন্ট্রাক্ট, ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং জমিসংক্রান্ত ব্যাপারেও এইনীত অনুসৃত হইল।"
(উপরোক্ত চার অনুচ্ছেদ "কাদিয়ানি সমস্যা" বই থেকে সংগৃহীত)
কাদিয়ানীদের সাথে ব্রিটিশদের এই দহরম-মহরম এখনো বিদ্যমান যে কারণে পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হয়ে এরা আজ লন্ডনে শিকড় গেড়েছে।
যাহোক আমার কথা হচ্ছে একজন একটা কিছু দাবী করল এবং এর পক্ষে কিছু চন্দ্রগ্রহণ-সূর্যগ্রহণ, মুবাহালা জাতীয় দলীল পেশ করল, এতেই যদি তাকে মানা জরুরী হয়ে যায় তবে এ জাতীয় দাবীদারের তো আমাদের দেশেই অভাব নেই।আমরা কেন দেশি মাল রেখে আমাদের ওপর গণহত্যা চালানো পাকিদের প্রোডাক্ট গ্রহণ করব? (আমাদের চুশীল, বাম এবং শাহবাগীরা আবার পাকিস্তানের এই প্রোডাক্টের খুব ভক্ত কিনা!) আমাদের দেওয়ানবাগী কি কাদিয়ানীর তুলনায় কোন অংশে কম?
আসুন বাবা দেওয়ানবাগীর দাবীকৃত কিছু শান-মান দেখি এবং কাদিয়ানির সাথে তুলনা করি-
১। বাবা দেওয়ানবাগীর দাবীমতে তিনি হচ্ছেন রাসূল (সা) এর জামাতা আর কাদিয়ানী?
২। বাবা দেওয়ানবাগীকে ২০০৭ সাল থেকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে (২০১৩ সালে যারা সাঈদীকে দেখেছে, তারা মূলত দেওয়ানবাগীকেই সাঈদী ভেবেছে)। কাদিয়ানীকে কি চাঁদে দেখা যায়?
নাহ, আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা এই পেটমোটা শয়তানকে দেখলে বমি আসে।
আল্লাহ আপনি এসব ঈমান হরণকারী প্রত্যেক ভণ্ড থেকে আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯