মেস/বাড়ি ভাড়া, চাকুরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন 'নাগরিকত্ব সনদ পত্র' নামে চরিত্রের সার্টিফিকেট যেন না নিলেই নয়। সে যাইহোক কার্যত এখন আমারও এই সার্টিফিকেট লাগবে। তো গেলাম ইউনিয়ন পরিষদে। কর্তব্যরত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন চেয়ারম্যান এটা স্বহস্তে দিয়ে থাকেন। ইউ.পি থেকে এবার রওনা দিলাম চেয়ারম্যানের বাড়ি। পথিমধ্যে চেয়ারম্যানের সাথে দেখা। জানালেন তিনি (বাইক নিয়ে) কার্যালয়েই (ইউ.পি) যাচ্ছেন। তাই আমাকেও ঘুরে আবার সেখানে যেতে হবে। গিয়ে দেখি তিনি কার্যালয় থেকে উধাও। কর্তব্যরত ব্যক্তি জানালেন একটা জরুরি কাজে তিনি কোথায় যেন এইমাত্র গেলেন। অপেক্ষার বাঁধ যখন ভেঙে গেল তখন ঘুরে বাড়ি চলে আসলাম। পরদিন গিয়েও চেয়ারম্যানকে কার্যালয়ে না পেয়ে কর্তব্যরত ব্যক্তির নিকট থেকে তাঁর নাম্বার নিয়ে দিলাম কল। তিনি সন্ধ্যার আগে ফ্রি হতে পারবেন না কারণ মিটিংয়ে আছেন বলে জানালেন। পরদিন কার্যালয়ে গিয়ে আবার ফোন দিলাম। এবার তিনি জানালেন 'নাগরিক সনদ পত্র' তো কেবল তিনিই না কার্যালয় থেকেও দেয়া হয়। (কেমন লাগে বলেন) যাইহোক, কর্তব্যরত ব্যক্তি জানালেন সেটা নাকি চেয়ারম্যানের উপস্থিতেই কেবল। ধৈর্য্যের বাঁধ শক্ত করে আবার রওনা দিলাম চেয়ারম্যানের বাড়ি। গিয়ে কলিং বেলে চাপ দিতেই দেখি শর্টসার্কিটে নষ্ট হয়ে আছে। যাইহোক, চেয়ারম্যান তার পি.এসকে পাঠালেন আমার কাছে। (মাইরি! চেয়ারম্যানেরও পি.এস) যাইহোক, পি.এসের নিকট থেকে সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত সনদ পেলাম। সনদ নিজ হাতেই পূরণ করতে হল। এখন শুধু এতে চেয়ারম্যানের সীল/ সাক্ষরের পালা। চেয়ারম্যান ভাত খেয়ে এসে হাসিমাখা মুখে জানালেন এটাতে সাক্ষরের জন্য আমাকে আবার কার্যালয়ে যেতে হবে। এই বলে তিনি বাইক নিয়ে কার্যালয়ে রওনা দিলেন। (মনে মনে বলছিলাম আগামী নির্বাচনে ভোট চাইতে আসিস...
যাইহোক, ভেঙে পড়া ধৈর্য্যের বাঁধকে জোড়া-তালি দিয়ে শক্ত করে দিলাম কার্যালয়ে রওনা। গিয়ে দেখি তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত। (একটা টানা দীর্ঘশ্বাস) এরপর তাঁর পি.এসকে ইশারায় ডেকে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে আসার কথা বললাম। যথারীতি উনি করেও নিয়ে আসলেন। অবশেষে শেষ হল আমার 'চরিত্রের সার্টিফিকেট' সংগ্রহের ভোগান্তি।
আসুন এবার একটু বৃত্তের বাহিরে নজর দিই।
চরিত্রের কথিত এই সনদ চেয়ারম্যান স্বহস্তে দিয়ে থাকেন বলা হলেও তিনি এতে কেবল মাত্র সাক্ষর ছাড়া আর কিছুই করেন না। ইভেন পড়েও দেখেন না যে আমি এটা আমার নামে পূরণ করেছি নাকি কোন টেরর ব্যক্তির নামে করেছি। বুঝা গেল সন্ত্রাসীও চাইলে কায়দা করে এই সনদ নিতে পারে যেখানে তাকে সৎ চরিত্রের সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে।
চেয়ারম্যান তাঁর সার্টিফিকেটে উল্লেখ করেছেন তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন যদিও সনদ নিতে গিয়েই তিনি সর্বপ্রথম আমার মুখখানা দর্শন করেছেন। যে ছেলের নাম পর্যন্ত তিনি ইতঃপূর্বে জানতেন না তিনি সেই ছেলেকে সৎ, নিষ্ঠাবান, রাষ্ট্র বিরোধী কাজের সাথে যুক্ত নয় সহ ব্লা ব্লা... সার্টিফাই করলেন।
প্রত্যেক নাগরিককেই যখন একই সনদ নির্বিচারে দেয়া হয় সেটা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা আর না দেয়ার পার্থক্য আমার মোটা মাথায় ঢুকলো না।
আদতে চুলের চেয়েও মূল্যহীন এই কথিত চারিত্রিক সার্টিফিকেটের নামে 'নাগরিক সনদ পত্রের' চাহিদা বাজারে বছরের পর বছর বহাল তবিয়েতে আছে। কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। নো ওয়ান কেয়ারস। জাতি হিসেবে আমরা কতই না কিউট!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:২৯