ভেজা কলাপাতার ঘ্রাণ,
ভেজা মাটি, পিচ্ছিল ঘাট,
কাণা ছুঁয়ে ওঠা খালের জল,
উঠোনে তক্তা বিছানো হাঁটাপথ,
তলা ফুঁড়ে জল গলানো একটি ডিঙি
আর কিছু শাপলার স্মৃতি
গলা সমান বিলে পায়ের নখে ভর করে
পাপড়ি মেলে হাসিমুখে মাথা উঁচিয়ে থাকে,
আরও আছে ঘরের দাওয়ায় বরষার স্রোত,
আর জালে ওঠা কতক পাঁচমিশালি মাছ,
পথভুলে রাস্তায় নেমে আসা সাপের ছানা!
আমার এই রূপকথার মতন
উপন্যাসের পাতায় লেপ্টানো
স্ফটিকের বিকিরণে তাতানো
জল-কাদার গ্রামীণ স্মৃতিগুলোই
বরষা-বিলাস।
এইসব প্রাচীন গল্প আজ আবেদনহীন,
আজ বরষার মানে পাল্টেছে ঢের!
এখন একটি হুড তোলা রিকশা দেখা যাবে,
তাতে পর্দা টানা, জড়াজড়ি করে বসে থাকা
এক জোড়া মানব-মানবী, কিছু সীমারেখা মেনে নিয়ে
কিছু মৌনতায় লঙ্ঘন, লজ্জা আর শিহরণের মিশ্রণে নতমুখ;
কিংবা পুরো পরিবার মিলে ছাদে গিয়ে বরষায় স্নান,
কিংবা অফিস ফেরত মানুষগুলোর কাকভেজা মাথা,
বরষার ফোটায় ফোটায় নেয়ে ধুয়ে সাফ হয়ে ওঠা
পিচঢালা পথে পাথরের কুচিগুলো যেন মার্বেল মণি!
বড় বড় দালানগুলোর দেয়াল ভিজে মলিনতার আঁচড় পড়া,
রাস্তার দু'ধারে জমে ওঠা পানি!
বড়জোর কিছু হেঁড়েল বখাটে ছেলের দল
অখ্যাত কোন কোরাস ধরে হেঁটে যাবে পুরো রাস্তাটা
জানালায় উঁকি দেওয়া কোন ষোড়শীর লোভে!
এর বেশি প্রত্যাশা করি না এ সভ্যতার কাছে,
সেই একই আকাশ, আকাশের মেঘ,
মেঘের গর্জন, একই বৃষ্টির ঢল আজও আছে,
শুধু মাটি নেই, সাপ নেই, শালুক নেই,
ডিঙি নৌকাটি নেই, জলে ভেজা সুপারির খোল নেই,
একটি উঠানও নেই, আমার সে গ্রাম নেই,
আমার সে প্রেম নেই,
মৃত প্রেমিকার কবরটিও এখন ভেঙে সমান হয়ে গেছে!
আমি বেঁচে আছি, ভূষণ্ডির বয়েস নিয়ে,
বুকে একটা গ্রাম নিয়ে,
স্মৃতির জঙ্গলে অজস্র গাছপালা নিয়ে,
কাদামাটি নিয়ে, সেই যৌবনের প্রেমের গল্প নিয়ে,
এইসব বরষার রাতের
প্রতিটি গ্রামীণতার ভুশুড়ি ভাঙা সাক্ষী হয়ে
আমি বেঁচে আছি বরষা বিলাসের নামে
প্রতিবার বরষাতে বিলাপে ভিজব বলে!