somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভীড়ের মধ্যে নারী : এবং কতিপয় যুবকের হাত (দ্বিতীয় খণ্ড)

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা এবারে সমাধান নিয়ে ভাববো। প্রথম পর্ব মন দিয়ে পড়ে থাকলে খেয়াল করবেন যে, সমাধান সম্পর্কে ওখানেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। সমস্যার মূল জানা গেলেই সমাধানটি করতে পারা যায়। যখন আপনি জানেন যে, আগুন ছুঁলে হাত পোড়ে, আগুন ছোঁবেন না, হাতও পুড়বে না ব্যস হয়ে গেল প্রতিকার।

একবার কেউ আপনার গায়ে হাত দিল, আপনি ভয় পেলেন বা লজ্জা পেলেন, আপনার সঙ্গে বন্ধু আছে বা বাবা আছেন, অর্থাৎ এমন কেউ আছেন যে, তাঁর সামনে এরকম একটা ন্যাক্কারজনক ব্যাপার প্রকাশ পেলে আপনার মাথা হেঁট হয়ে যাবে ভেবে আপনি কিছু বললেন না, ফলে ওই অসভ্য লোকটা এক ধরনের সমর্থন বা আপনার মৌন সম্মতি ধরে নিল ব্যাপারটাকে এবং দিগুণ উৎসাহে আপনার গায়ে হাত বোলাতে লাগলো। আপনি সঙ্কোচে চুপ থাকতে লাগলেন এবং আরো দশজনের ক্ষতি করতে লাগলেন।

আপনি যখন চুপ আছেন তখন লম্পটটার মনে হতে পারে যে, আপনিও তার মতো এই অবৈধ আনন্দকে উপভোগ করছেন বা আপনিও ব্যাপারটাতে ইচ্ছুক। লম্পটটার মধ্যে এই ধারনা তৈরি হওয়াও অমূলক নয় যে, মেয়েরাও গায়ে হাত দিলে ভেতরে ভেতরে এক্সাইটেড হয় বা খুশি হয়। ফলে, গোটা ব্যাপারটাই তার কাছে উত্তরোত্তর উৎসাহের হয়ে ওঠে।

অথচ বাস্তবতা তো এটা নয়, সকল পুরুষকে বলি, শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত কারো স্পর্শ যে কতটা অস্বস্তি আর যন্ত্রণাদায়ক সেটা নারীমাত্রেই জানেন শুধু। গায়ে এসিড ঢেলে দিলে যে যন্ত্রণা হয়, আপন শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত কারো ঘৃণ্য স্পর্শের যন্ত্রণা নিঃসন্দেহে তারচেয়েও বেশি প্রদাহময়।

যাইহোক, তাহলে প্রথম ও প্রধান সমাধান হলো প্রতিবাদ। যারা এই ঘৃণ্য কাজগুলো করে তারা তো অপরাধী, এবং অপরাধীর কোন মনোবল থাকে না। তারা অত্যন্ত ভীরু হয়, তারা মিনমিন করে, তারা জোরগলায় প্রতিবাদও করতে পারে না।

কারো স্পর্শ টের পাচ্ছেন, তো খপ করে হাতটা ধরে ফেলুন, দেখুন হারামিটা কেমন শামুকের মতো গুটিয়ে যায়! এরপরে আওয়াজ তুলুন ও যথাসম্ভব শব্দ করে একটি থাপ্পড় লাগান। আপনার কাজ শেষ। বাকিটা আপনার চারপাশের অন্য ভাইগুলো চালিয়ে নেবে।

সমসময় মনে রাখবেন, ভীড়ের মধ্যে সবাই লম্পট নয়, এবং একজন পুরুষের কোরআন ছুঁয়ে বলা কথার চেয়ে একজন নারীর কেবল মুখের কথাকেই এরকম পরিস্থিতিতে সমাজ বেশি বিশ্বাস ও সমর্থন করে। এরকম লম্পটকে ধরে আপনি একটা চড় দেবেন, তো দেখবেন আরো একশো চড় সাথে সাথেই পড়তে শুরু করবে চারপাশ থেকে। আপনাকে শুধু এই কাজটুকুই করতে পারতে হবে। আপনার তখন আর কোন ভয় নেই, অসংখ্য মানুষ দেখবেন আপনাকে সাপোর্ট করছে।

আপনার বন্ধু বা সহচারী কিংবা এতগুলো মানুষের কাছে আপনি লজ্জা পাবেন ভাবছেন?

মোটেই না! আপনার সম্মান এতে আরো বাড়বে। বাড়বে একারণে যে, আপনার সহচারী বা অন্য মানুষগুলো বুঝতে পারবে যে, এই ভদ্রমহিলা তার অধিকার ও সম্মান সম্পর্কে সচেতন। তারা আরো বুঝতে পারবে যে, এই ভদ্রমহিলা তার যৌনাচারে সতী ও নিষ্ঠাবতী, এই ভদ্রমহিলা এমন নরম বা মেরুদণ্ডহীন ভীতু (লুতুপুতু) কেউ নয় যে, যে কেউ তার শরীরকে স্পর্শ করতে পারবে!

আপনার এই একটি প্রতিবাদ আরো দশজনের মনোবল বাড়িয়ে দেবে, আর যদি প্রতিবাদ করতে না পারেন, তবে এভাবেই নির্যাতিত হতে থাকবেন, আপনি নিজেও এবং আপনার কারণে অন্যেও।

আপনার একটি আওয়াজই থামিয়ে দিতে পারে সব। একটাকে গণপিটুনি দিতে পারলেই একশোজনের শিক্ষা হয়ে যাবে। আর আপনি আজ চুপ করে থাকবেন, তো আরো একশোটা লম্পট উৎসাহ পাবে। আরো একশো লম্পট সৃষ্টি হবে।

আবার অনেকসময় কিছু হারামি দেখা যায়, এরা নির্যাতিতাকে বলে ওঠে, এত মেয়ে থাকলে আপনার গায়ে কেন হাত দিল?
কিংবা বলে, আপনি যে পোশাক পড়েছেন তাতে ওদের তো মাথা খারাপ হবেই!

এদেরকেও আগে একটা চড় দেবেন এবং উত্তর দেবেন পরে। সোজা বলবেন যে, তারমানে ভীড়ের মধ্যে তুইও হাত দিস? তোরা একই গ্রুপের লোক?
দেখবেন যে যুধিষ্ঠির বাবা কেমন লেজ তুলে পালায়!

ফোন বের করে ওদের শুনিয়ে সোজা ডায়াল করবেন পুলিশ স্টেশানে। ওরা তাতেই প্রস্রাব করে দেবে ভয়ে।

এখানে আমার পুরুষ পাঠকদের মধ্যেও অনেকে আছেন ওই যুধিষ্ঠিরের দলে। এঁরাও ভাবেন যে, এত মেয়ে থাকতে ওই মেয়েটার গায়ে কেন হাত দিল? নিশ্চয়ই মেয়েটারও দোষ আছে!

বলি, বাবা, কোন মেয়েই লম্পটদেরকে গায়ে হাত দিতে ডেকে আনে না। ওই মেয়েটার গায়ে হাত দিয়েছে কারণ, লম্পটটা ওই মেয়েটাকেই হাতের নাগালে পেয়েছে। এখানে পোশাক কোন বিষয় নয়, ওরা হাতের কাছে যাকে পায় তাকেই ধরতে চেষ্টা করে। যদি তোমার পরিবারের কাউকে হাতের নাগালে পেত, তবে তাকেও একইভাবে নির্যাতন করত।
এইসব যুধিষ্ঠিরেরা, এখনও সময় আছে, দৃষ্টিভঙ্গি পালটাও!

আপনাদের অনেক সাহসের কথা শোনালাম, তবে মনে রাখবেন, কারো প্রতি অবিচার যেন না হয়ে যায়। যেহেতু ভীড়ের মধ্যে আপনি কাউকে অপবাদ দিলে জনসাধারণ আপনাকেই সমর্থন করবে সেহেতু অযথা কাউকে এরকম শাস্তি দিতে যাবেন না দয়া করে।

উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি ছেলেকে গণপিটুনি খাওয়ানোর নজীরও আমার জানা আছে। এটা বললাম মুদ্রার অপর পিঠ। আপনার কারণে যেন অযথা কারো জীবন নষ্ট না হয়।

ভীড়ের মধ্যে গায়ে লাগা সব হাতই যে লম্পট, এরকম ধারণা নিয়ে যদি চলেন, তবে আপনিও ভুল করবেন। নিঃসন্দেহে কোন হাতটি অনিচ্ছাকৃত আর কোন হাতটি উদ্দেশ্যমূলক তা আপনাদের না বোঝার কথা নয়। গায়ে সামান্য হাত লাগলেই চড় দেবেন বা চেঁচামেচি জুড়ে দেবেন সেটাও প্রথমে উচিত নয়। আগে নিশ্চিত হোন, এবং সব কথার বড়ো কথা, সিন ক্রিয়েইট (আড়ম্বর) না করেও যদি ব্যাপারটা সমাধান করা যায় তবে আর শোরগোল কেন?

ভীড়ের লম্পটগুলো গায়ে হাত দেয় একটু একটু করে। প্রথমে অনিচ্ছাকৃত ভঙ্গিতে হাত ছোঁয়ায়, এরপরে চুপচাপ দেখলে বা মৌন সমর্থন পেলে তবেই হাতকে ক্রমান্বয়ে দৃঢ় করে। তাই, গায়ে কারো হাতের অস্তিত্ব পাওয়া মাত্রই সেদিকে ফিরুন, কটমট করে তাকান, হাত যারই হোক, সে পিছিয়ে যাবে। এটুকু করা নিশ্চয়ই দুঃসাহসিক বা অসাধ্য কিছু নয়।

নারীর পোশাক নিয়ে লিখব ভেবেছিলাম। তবে সেটা আলাদা প্রবন্ধে লিখব ।

ভীড়ের মধ্যে এমন কাপড় না পরা উচিত যাতে আপনি জনগণের সমর্থন থেকে বঞ্চিত হন।

ভীড়ে চলতে জিন্স পরাকে আমি সমর্থন করি। কেননা, জিন্স শক্ত বলে শরীরের কোমলতা জিন্সের ওপর দিয়ে অনুভব করা যায় না। তাই জিন্স পরা মেয়েদের গায়ে লম্পটেরা হাত দেয় না খুব একটা। আর জিন্স পরুয়াদের ওরা ভয় পায়।
১৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×