অনেকে বলে পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মেয়ে থাকতে পারে কিন্তু খারাপ মা একটিও নেই। এই কথার সাথে আমি সম্পুর্ন একমত নই। কারন পরে বলছি।
জন্মের পর একটি শিশুকে পরম মমতায় আদর ভালবাসা দিয়ে বড় করে মা। পৃথিবীতে অগমনের সাথে সাথে কেদে ওঠা শিশুকে বুকের দুধ দিয়ে শান্ত করে মা। শীতের রাতে সন্তান যখন প্রসাব করে সব ভিজিয়ে ফেলে তখন নিজে ভিজা জায়গায় থেকে সন্তানকে শুকনা জায়গায় রাখে এই মা। রাতে নিজে না ঘুমিয়ে সন্তানের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখে মা। মায়ের হাত ধরেই শিশু হাটা শেখে। মায়ের কাছ থেকেই প্রথম ভাষা শিক্ষা করে বলেই বলা হয়েছে মাতৃভাষা। একটি সন্তান জন্ম থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত মায়ের অবদান অসংখ্য। এ বলে হয়ত শেষ করা যাবে না।
সন্তানের সব আবদার থাকে মায়ের কাছেই। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ায় এই মা। নিজের প্রয়োজন না মিটিয়ে সন্তানের চাহিদা পূরন করে এই মা। আর প্রথম থেকেই মায়ের সকল কাজে সহযোগিতা করে বাবা। কিন্তু এই সন্তান যখন বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে তখন বাবা মায়ের অনুভুতি কেমন হয় কল্পনা করেছেন? অধুনিক সমাজ ব্যবস্হায় প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে কে না চায়? সবাই চায় ফার্স্ট হতে। অনেক অনেক টাকার মালিক হতে। আর এই টাকার নেশাই পরিবারকে দূরে ঠেলে দেয়। উপরে ওঠার সিড়িতে পিছু টান হয়ে পড়ে বাবা মা। সময়ের ক্ষেপন করে বাবা-মাকে সময় দিলেই হয়ত পিছিয়ে পড়বে। তাই বাধ্য ছেলে মেয়ের মতো বাবা মাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে। গরিব মধ্যবৃত্ত সমাজ ব্যবস্হার তুলনায় উচ্চ বৃত্ত সমাজ ব্যবস্হায় এই প্রথা বেশি প্রচলিত।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে বলি। এক মিনিট চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, আপনার টাকা পয়সা মুল্যবান সম্পত্তি কতটুকু সময়ের জন্য কাজের লোকের কাছে রাখবেন, রেখে বাহিরে যাবেন? রাখবেন না বললেই চলে। কিন্তু নিজের সন্তানকে ঠিকই কাজের মেয়ের কাছে রেখে চাকরিতে চলে যাচ্ছেন। ছোটদের ডে কেয়ার নামক আশ্রমে রেখে আপনিও ব্যস্ত প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে। ফিগার নষ্ট হবে বলে বুকের দুধ না দিয়ে দিচ্ছেন কৌটার দুধ। অনেক সময় এক বিছানায় না রেখে রাখছেন দোলনা নামক বিছানায়। ছোটবেলা থেকেই শিখাচ্ছেন তোমাকে ফার্ষ্ট হতে হবে। ফার্র্ষ্টই ভাল এছাড়া আর কিছু হওয়া যাবে না। ভাল রেজাল্ট করলে তুমি বড় চাকরি করতে পারবে। বড় চাকরি মানেই টাকা। টাকার পিছনে ছুটতে শেখান সেই ছোট বেলা থেকেই, তো বড় বেলায় এরা কি ফেরেশতা হয়ে মায়ের সেবা করবে? না । আপনি যা শেখাবেন তাই বাস্তব প্রয়োগ ঘটাবে।
সব দোষ ছেলে মেয়েদের। মা-বাপ সব ফেরেশতা, কত কষ্ট করে লালন পালন করে। দিবস আসলে সব গুলো আবেগের ডিব্বা নিয়ে বসে। মায়ের এতো এতো অবদানের কথা লিখে ভাসিয়ে ফেলে। গুগলে সার্চ দিন “মায়ের হাতে সন্তান খুন” দেখুন তো রেজাল্ট কি আসে। একজন দেখলাম একটা পোষ্টে হাদিসের এক অংশ দিয়েছে, “সন্তান প্রসব করতে গিয়ে যদি কোন মায়ের মৃত্যু হয় তবে মা বিনা হিসাবে জান্নাতি” কথা সত্য তবে শর্ত মাকে অবশ্যই ঈমানদার হতে হবে। স্টার জলসা দেখা মা হলে হবে না।
আমি মায়েদের বদনাম করার জন্য পোষ্ট লিখতে বসিনি, আসলে সত্য একটু বেশি তেতো আর কি। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিতো কোন সন্তান তার বাবা মাকে কখনো বৃদ্ধাশ্রমে দিতে পারে না, পারেই না। হোক সে আস্তিক বা নাস্তিক। আর বাবা মা ও পারে না সন্তানের ভালবাসা ক্যারিয়ারে সাথে ভাগ করতে। যে মা সন্তানকে ডে কেয়ারে রাখবে সে তো বুড়ি হলে বৃদ্ধাশ্রমে যাবেই। এটাই নিয়তি। যে মা ছোট বেলা থেকেই শিখাবে তোমাকে ফাষ্ট হতেই হবে,(প্রশ্ন পেয়ে হোক বা যেভাবেই হোক) সে সে তো বৃদ্ধাশ্রমে যাবেই। সবার আগে দরকার নৈতিক শিক্ষা। যে শিক্ষা থেকে আমরা আজ কয়েকশত গুন দূরে অবস্হান করছি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হা দূরে থাক পারিবারিক শিক্ষা ব্যবস্হায় আজ নৈতিকতার বা্লাই নেই। যার ফল তো ভোঘ করছিই।
সন্তানরা আসুন বাবা-মায়ের কথা ভাবুন, আর মা-বাবারা সন্তনের কথা। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করুন। দেখবেন পৃথিবীর সব কিছু কত সুন্দর হয়ে উঠবে আপনার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:০৭