বিয়ার গ্রিলস তখন সভ্য ছিল... সাদা চামড়ার মানুষ, কাজে কর্মেও সাদা ছিলেন তিনি... তিনি একসময় ট্রাভেলার ছিলেন, সার্ভাইবার না... বিশ্বের নানান দেশ ঘুরতেন কিন্তু কখনও জংগলে যেতেন না...
.
একদিন যথারিতি ভাবলেন বাংলাদেশে ঘুরতে আসবেন... যেই ভাবনা সেই কাজ.. দুবাই ট্রানজিট থেকে বাংলাদেশে এয়ারলাইন্স এর একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বিয়ার গ্রিলস.. উড়তে উড়তে এক সময় তার প্রচন্ড ছোট কাজ পায়.. কিন্তু বাংলাদেশ বিমানের টয়লেটের অবস্থা দেখে লুকয়ে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য "ভার্জিন কোলার" বোতলেই কাজটি সেরে ফেলেন তিনি.. চুপচাপ বিমানের সীট স্ক্রিনে জসিমের ঠেলাগাড়ি ঠেলে কোটিপতি হয়ে যাওয়ার সিনেমা দেখতে দেখতে বাংলাদেশের প্রতি তার কিউরিওসিটি আরও কয়েকগুন বেড়ে গেল....
যথারিতি বিমান চলতে লাগলো... বিমানটি ঢাকায় ল্যান্ড করার কথা থাকলেও একটা চাকা খুলে পড়ে গিয়েছিল বলে চট্টগ্রামেই জরুরী অবতরন করে বসে... বেচার বিয়ার গ্রিলস শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে নাভাল রোড ধরে হাটছে... সমুদ্রের নোনা বাতাসে তার প্রচন্ড পানির পিপাসা পেল... দোকানে গিয়ে ভার্জিন কোলার দিকে আঙুল তুলে দাম জিজ্ঞেস করে দেখে ২০ টাকার কোলার দাম ৫০ টাকা... এ কেমন বিচার??
বুদ্ধিমান বিয়ার তার ব্যাগ থেকে তৎক্ষণাৎ বিমানে দেয়া ২০ টাকার ভার্জিন কোলার বোতল বের করে ঢকঢক করে দোকানদারের দিকে পৈশাচিক দৃষ্টি দিয়ে সব পানি খেয়ে নিল... ভাবখানা এমন ছিল যেন দোকানদারকে বলছিল, "ব্যাটা ২০ টাকার পানি ৫০ টাকা রাখো না???"
পরোক্ষনে বিয়ারের মনে পড়লো সে তার নিজের ড্রেন করা পানি খেয়ে ফেলেছে...আর সেই থেকেই বিয়ার গ্রিলস এর ছাইপাঁশ খাওয়া শুরু..।।
নিজের ইউরিন নিজে গলাধঃকরণ করে প্রফুল্ল বিয়ার গ্রিলস নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেল...
.
তখন সকাল আটটা... চট্টগ্রামের পুরাতন রেল স্টেশন থেকে চট্রলা এক্সপ্রেস ধরে রওনা দিল ঢাকার উদ্দেশ্যে...
ঢাকায় নেমে কমলাপুর থেকে চড়ে বসলেন গাবতলীর আট নাম্বার বাসে...মহিলা সীটে ঘাপটি মেরে বসে আছেন তিনি... সাদা চামড়ার বিদেশি দেখে সেদিন আর কোন মহিলা তাকে সীট থেকে উঠার জন্য বাজে ব্যবহার করেন নি... বাস শাহবাগ মোড় অতিক্রম করার সময় দেখলেন কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলছে... বাস আর সামনে চলে না... নেমে পড়লেন বাস থেকে... হাটতে লাগলেন আন্দোলনের ভিতর দিয়ে... হঠাৎ পুলিশের জলকামান নিক্ষেপ...! ভিজে একাকার বিয়ার গ্রিলস.. ভেজা জামা প্যান্ট হাতে নিয়ে ছোট প্যান্ট পড়ে চলে আসলেন বাংলা মোটর... সেখান থেকে আবার উঠে পড়লেন বাসে...
.
সন্ধ্যায় এসে নামলেন গাবতলি গরুর হাটের অপজিটে... শরীর ভেজা, পেটে প্রচন্ড ক্ষিদা... হঠাৎ দেখলেন একটা ভেনের উপর দোকান! পুরো ঢাকায় স্ট্রিট ফুড এর দোকান তার মনকে আকৃষ্ট করেছে... বেয়ার দোকানের দিকে এগিয়ে গেলেন... দোকানের নাম "তাইরেনাইরে হালিম এন্ড চটিপটি"
উতি উৎসাহী বিয়ার বিশ টাকা দিয়ে একটা হালিম আর কারওয়ান বাজারর মাছের বরফ মিশ্রিত ইশপি ট্যাং এর এক গ্লাস শরবত মেরে দিলেন..
.
পরের দিন সোহোরাওয়ার্দি মেডিকেলের ৬৯ নাম্বার বেডে বিয়ার গ্রিলসের জ্ঞান ফিরলো... তিনি আবিষ্কার করলেন শাহবাগে ভিজে যাওয়া শার্টপেন্ট, ট্রাভেল ব্যাগ, মোবাইল, মানিব্যাগ, ঘড়ি কোন কিছুই আর তার সাথে নেই... পরনে শুধু জাঙ্গীয়া দেখিয়া সহায় সম্ভলহীন বেয়ার ভাঙ্গীয়া পড়েছিলেন... হাসপাতালের দেয়া সাদা রঙ এর পায়জামা পড়ে বেরিয়ে পড়লেন ... শ্যামলি স্কয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বিয়ার গ্রিলস... পেটে ক্ষিদা, পকেটেও কানাকড়ি নাই... এদিকে হঠৎ কিছু ছেলেপেলে এসে বিয়ার কে জড়িয়ে ধরে সেলফি তুলতে লাগলো... বিয়ার তো অবাক! কিছু না বুঝতে পেরে মদনের মত দাঁড়িয়ে রইলো সে... পরে জানা গেল সে শাহবাগে আন্দোলনের মধ্যদিয়ে খালি গায়ে হাটার সময় কিছু মিডিয়া তাকে নিয়ে নিউজ করেছে যে, "ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে বিদেশিরাও" অন্যদিকে বিয়ার ফেসবুকেও ভাইরাল! কোন বান্দর জানি তার হাফ নুড ফটো কোটা সংস্কার আন্দোলনের গ্রুপে আপলোড করে দিয়েছে...
.
"এমেরিকান এম্বাসি-ঢাকা '' পেইজের এডমিন ওই ভাইরাল হওয়া ছবি দেখেন এবং তিনি চিনতে পারেন এটা তাদের স্বজাতি... তাই দেরি না করে বিয়ারকে খুঁজতে নেমে পড়ে ইউএস এম্বাসি... খুঁজতে খুঁজতে একটা সময় তাকে পাওয়া যায় মিরপুর-১ ওভারব্রিজ এর উপর... তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ইউএস এম্বাসি...
.
বিয়ারের যে বাংলাদেশে এত পপুলার হয়েছে তা সে বুঝতে পারেনি... দেশে গিয়ে যখন বিয়ার ফেসবুকে ঢুকে বাংলাদেশ লিখে সার্চ দিল, বিয়ার তো টাস্কি খেল!
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মিডিয়া, ফেসবুকে তাকে নিয়ে আলোচনা... বিয়ার গ্রিলস অবাক হল... তার মাথায় বাংলাদেশের মত এমন সব দেশে সেলিব্রেটি হওয়ার স্বাদ জাগলো...
কি কি করলে সেলিব্রেটি আর মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া যায় তার একটা লিস্ট করলো বিয়ার গ্রিলস...
১/ অবশ্যই সোজা পথ রেখে কঠিন পথে হাটতে হবে
২/ পানি থাকা সত্তেও নিজের পস্রাব খেতে হবে
৩/ গাবতলির হালিমের মত হালিম খেতে হবে
৪/ মাছের বরফ দিয়ে বানানো শরবত খেতে হবে
.
কিন্তু ভাগ্য বিয়ারের সুপ্রসন্ন না... সে আজও অন্যান্য দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে... বিভিন্ন দেশে গাবতলী আর রাস্তার পাশে হালিম আর ইশপি ট্যাং না থাকায় সে জঙ্গলে গেল এবং তার চাইতে খারাপ খাবার খেতে লাগলো...
.
এত সাঁপ বিচ্ছু আর পোঁকামাকড় খাচ্ছে, এত বাঁকা পথে হাটছে কিন্তু কোনটাই কাজ করছে না তার পক্ষে... যতই ছাইপাস খাচ্ছে কোনটাই গাবতলীর হালিম আর শরবতের ধারে কাছে যাচ্ছে না... সে অজ্ঞানও হচ্ছে না... মিডিয়া কাভারেজ ও পাচ্ছে না শুধু ডিস্কভারি চ্যানেল ছাড়া... এভাবেই বেয়ার গ্রিলস তার এডভেঞ্চার চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোথাও সেই স্বাদ খুঁজে পাচ্ছে না... তাই আজও বিয়ার গ্রিলস হাল ছাড়েন নি...
।
"বিয়ার গ্রিলস এর বাংলাদেশে একদিন"
লিখাঃ জে. আর শুভ
১৩/০৪/২০১৮ খ্রীঃ
ফেসবুকে আমিঃ http://www.facebook.com/zr.shuvo
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:০১