মোগল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ কবি এবং দক্ষিন এশিয়ায় উর্দু সাহিত্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি মির্জা গালিব চাকরি করেননি কোনদিন। তার জীবন চলেছে রাস্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, ধারকর্জ অথবা বন্ধুদের উদারতায়। পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া সম্পদ ক্ষয়/ভাগ হতে হতে একসময় তলানিতে ঠেকেছে। ২৭ টাকা মাসোহারাই ছিল একমাত্র উপার্জন। অথচ ঘরে খানেওয়ালা ২০ জন। আবার আছে মদ্যপানের বেহিসাবি খাসলত। এমন দুরবস্থা তবু চাকরি করবেন না। দিল্লী কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন তার বন্ধু। তিনি গালিবকে ওই কলেজের ফার্সি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিতে বললেন। গালিব গেলেন তার ওই বন্ধুর বাংলোতে নিয়োগ সম্পর্কে আলাপ করতে। বাংলোর সামনে পালকি থামিয়ে তিনি অপেক্ষা করছেন কখন তার বন্ধু তাকে প্রধান ফটক থেকে সম্ভাষন করে অন্দরে নিয়ে যাবেন। অভিজাততন্ত্রের এমনই রীতি ছিল। খানদানি লোক কোথাও গেলে গৃহকর্তা সদর দরজায় এসে সম্ভাষন করে নিয়ে যাবেন তা না হলে অভিজাতপনার বরখেলাপ হয়। গালিব আগে যতবার এসেছিলেন ততবারই তার বন্ধু তাকে সদর দরজা থেকে সম্ভাষন জানিয়ে অন্দরে নিয়ে গেছে। কিন্তু আজকে তার বন্ধু আসছে না। ত্যক্ত গালিব প্রহরী মারফত খবর পাঠালেন। কিন্তু বন্ধু অন্দর হতে বার্তাবাহক মারফত জানালেন অন্যান্য দিন যাই ঘটুক আজ তাকে বিনা সাদরেই যেতে হবে। আজ গালিব চাকরিপ্রার্থী আর তিনি চাকরিদাতা।তাই তাকে গ্রহন করতে আজ তিনি আসছেন না।
ক্ষুব্ধ গালিব ফিরে গেলেন। চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বন্ধুকে চিঠিতে জানালেন ভেবেছিলাম চাকরি মানসম্মান বাড়াবে অথচ এখন দেখছি তা সম্মান হ্রাস করে। যা অবশিষ্ট আছে তাও যাবে। কি দরকার!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯