দুইবার মোরগ মার্কা নিয়ে মেম্বার নির্বাচনে ফেল করা স্বত্বেও মেম্বার খেতাব পাওয়া আফতাবুল আলম যখন রমিজের দোকানে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বিশ্বরাজনীতি নিয়ে সমবেত জনতাকে ছবক দিচ্ছিলেন তখন লোকটিকে দেখা গেল বাজারের দক্ষিনভাগ হইতে জনতার সাথে হ্যান্ডশেক করতে করতে রমিজের দোকানের দিকে অগ্রসর হইতে। সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী পরিহিত আজমল হুদা যতটা আগ্রহের সহিত হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন লোকেরা তার আগ্রহের সিকিভাগও দেখাচ্ছে না। যতটুকু সৌজন্যতা না দেখালেই নয় তা দেখিয়েই লোকেরা নিজেদের নিয়ে মগ্ন থাকছে। আজমল হুদা বিগত কয়েক বছরে এই অঞ্চলের অন্যতম বিত্তশালী ব্যক্তিতে পরিনত হয়েছেন। স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় দেদারসে অনুদান দিচ্ছেন। নিজেও গ্রামে বিশাল পরিসরে এতিমখানা করেছেন একটা।জেলা সদরে দশতলা হাজী টাওয়ার তার বিত্তের খাতায় নতুন সংযোজন । তার সম্পদের সূচক বরাবর আসমানমুখী হইলেও আজমল হুদা আরেকটা অমিত সম্পদের জন্য চিরস্থায়ী হাহাকার লালন করছেন। তার বিবাহ জীবনের তিন দশক অতিক্রম হলেও কোন সন্তানের মুখ দেখেননি এখনো। তার স্ত্রীর অলংকার এবং জৌলুস বাড়লেও সন্তান জন্মদানের জন্য উর্বরা হতে পারেন নি কোন বসন্তকালেই।
রমিজের দোকানে প্রবেশ করেই আজমল হুদা আফতাবুল আলমের সাথে হ্যান্ডশেক করে দোকানে সমবেত সকলের জন্য চায়ের ফরমায়েশ দিয়ে তার অভিযোগ উত্থাপন করলেন জনৈক শাহাদাতের বিরুদ্ধে। আজমল হুদা তার সম্পদের সাথে প্রভাব বজায় রাখার জন্য ইদানীং সালিশ মজলিশে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। বলাবাহুল্য নিজের প্রতিপত্তির জোরে তিনি প্রায় সময় সালিশের রায় দিয়ে থাকেন। শাহাদাতের মত অন্য অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ সালিশ চলাকালে হু হা করলেও পরবর্তীতে সকলেই সালিশের রায় তুচ্ছ করেছে। নিজের রায়ের এমন কার্যকরহীনতা তিনি মানতে না পেরেই আফতাবুল আলমের শরণাপন্ন হয়েছেন। আফতাবুল আলমও স্বভাবসুলভ তেজি ভাব বজায় রেখে একজনকে আদেশ করলেন শাহাদাতকে তলব করতে। কয়েক মিনিট বাদে শাহাদাত রমিজের দোকানে হাজির হইলে আফতাবুল আলম হুংকার ছেড়ে সালিশের আদেশ অমান্য করার কারন জানতে চাইলেন। ভয়ডরহীন ভঙ্গিমায় শাহাদাত বলল, " হের কথা কেউ শুনেনা। "
"কেউ শুনেনা " এই কথাটি যেন ভুজঙ্গ তীরের মত বিদ্ধ হইল আজমল হুদার কলবে। নড়েচড়ে বসলেন সমবেত সকলে। আলাপ কোনদিকে চালিত করবেন তা বুঝতে না পেরে বিহবল হয়ে রইলেন আফতাবুল। আর চায়ের বিল একশ টাকার একটা নোট রমিজের দিকে ছুড়ে দিয়ে বিরস বদনে মজলিশ থেকে প্রস্থান করলেন আজমল হুদা। এই অবস্থায় তুলনামূলক বয়োজ্যেষ্ঠ বারেক হাজী পঁয়ত্রিশ চল্লিশ বছর আগের বিকালবেলার কথা বললেন। তখনকার তেজি যুবক আজমল হুদাকে দেখা গেল পিতার সাথে তুমুল বাহাসে লিপ্ত। পিতার প্রতি অবাধ্যতা এবং বিবাদ নিত্য নৈমিত্তিক ছিল বিধায় এটি সাধারন ব্যাপারই ছিল সকলের কাছে। এইজন্য পাশ দিয়ে যাওয়া লোকেরা সবিশেষ নজর দিচ্ছিলেন না সেদিকে। তবে খানিক পরে লোকেরা থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হল। দেখা গেল আজমল হুদা রাগের চুড়ান্ত ধাপে সজোরে এক লাথি কষে পিতাকে ভুপাতিত করে দিয়েছেন। ভগ্নস্বাস্থ্য পিতা বারান্দা থেকে ছিটকে পড়লেন ঊঠানে। লোকেরা বলে ভুপাতিত পিতা তখন পুত্রকে মনে রাখতে বললেন যে আগত দিনে তাকে লাথি দেওয়ারও কেউ থাকবেনা এবং তার কথা জগতের সকলেই তুচ্ছ করবে।
আফতাবুল আলম আরেককাপ চায়ের ফরমায়েশ দিয়ে প্রস্থান উম্মুখ লোকেদের উদ্দেশে বললেন, উপরওয়ালার লীলা বুঝা বেশ কঠিন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৩৪