প্রসারিত অবস্থা থেকে দুই হাত একত্রিত করে সংযুক্তি বুঝিয়ে ফারদিন বলল, "মাত্র পাঁচ দিন! মাত্র পাঁচ দিনে সব ব্যবধান ভ্যানিশ হয়ে দুইজন একদম একজন আরেকজনের ক্লোজ হয়ে গেছি । মাত্র পাঁচ দিনে! "
সেভেনে পড়ুয়া ফারদিন বলছিল নাইনে পড়ুয়া তিয়াশা এবং তার কাছে আসার গল্প। ফারদিন আরও বলছিল এই কাছে আসা কিংবা প্রেম, ভালবাসা একটা মিরাক্যাল। কখন কিভাবে ঘটবে তা বলা মুশকিল।
মিরাক্যালটা কি জানতে চাইলে ফারদিন জানাল হাফ ইয়ারলি পরীক্ষায় তিয়াশা আর তার একই কক্ষে সিট পরেছিল। ক্লাস টিচার সকলের রোল নম্বর বেঞ্চে পেস্ট করলেও ফারদিনের রোল নম্বর পেস্ট করতে ভুলে যায়। প্রথম পরীক্ষার দিন ফারদিন রোল নম্বর খুজে না পেয়ে যখন দিশেহারা প্রায় তখন উড়ু উড়ু ক্লাস টিচার "এইখানে বইসা পড় " বলে তিয়াশার পাশে ফারদিনকে বসিয়ে দেন। এই পাশে বসা থেকে খুচরো আলাপ এবং একসময় আলাপ ইমুতে অডিও/ভিডিও কলে পতিত হয়। ফারদিনের ভাষায় সব ব্যবধান উধাও হয়ে যায়।
অথচ এই ফারদিনকে নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক জনশ্রুতি চালু আছে। বন্ধুদের সাথে মিশতে না পারা, মেয়েদের দেখলে সংকুচিত হয়ে থাকা, জড়িয়ে কথা বলা ,নিজস্ব গন্ডির মাঝে আবদ্ধ থাকা, অদ্ভুত ভঙ্গিতে কথা বলা ইত্যাদি নানাবিধ কারনে তার বন্ধুরা( আদতে সহপাঠী ।বন্ধু নেই তার) এবং শিক্ষকদেরও কেউ কেউ তাকে সেমি অটিস্টিক বলেই বিবেচনা করতো। দুইজনের অসম বয়স এবং শ্রেনী ব্যবধানের দিকে ইঙ্গিত করলে ফারদিন জানায় দুজনের মনের মিল হয়ে গেলে এসব কোন বিষয়ই না। ক্লাসের একপাল গুন্ডামার্কা ছাত্রের মাঝে আপাত নিরীহ ফারদিনের এই যুক্তি সমীহ জাগানিয়া এবং অনেক তর্কের সলিল সমাধি ঘটায় ।
গিফট দেওয়া নেওয়া হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে ফারদিন জানায় গিফট দেয়া নিয়ে এখন কোন চিন্তা করছে না সে। এখন তার সমস্ত মনোযোগ সম্পর্ক "জমানোর" দিকে। সেভেনের ছাত্র ফারদিন 'জমানো' বলতে কি বুঝাচ্ছে তা ''দেশ কোনদিকে যাচ্ছে?'' বাহাসের সমান ভাবনার বিষয় ।
বার্ষিক পরীক্ষা কড়া নাড়ছে দরজায় ।সিটপ্ল্যান জানার জন্য ফারদিন সম্ভাব্য সব দপ্তরেই হানা দিয়ে দুইজনের সিট পূর্বেকার অবস্থায় রাখার চেষ্টা করেছে এবং বিফল হয়েছে ।অবশেষে তিয়াশা এবং নিজের রোল নম্বর এবং সেকশন একটা চিরকুটে লিখে দিয়ে পাশাপাশি সিট দেওয়ার আবদার জানিয়ে বলল, "এই জীবনে আর কিছু দাবি করব না। এই কাজটা করে দিয়েন।"
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০৫