ইচ্ছে করে আবার বাবার সেই আদুরে কন্যাটি হতে,
বায়না ধরে বাবার হাতের মুঠোতে তর্জনীটি রেখে গুটিগুটি পা ফেলে
সেই ছোট্ট আমিটি বৈশাখী পৌষমেলা দেখতে যেতে!
তিলের টকি, মাটির পুতুল, হাতি-ঘোড়া, গ্যাসবেলুন,
বাসন্তীরঙা সেই মাটির ফুলদানীটা আবার কিনে আনতে।
ইচ্ছে করে আবার বাবার সেই স্নেহময়ী কন্যাটি হতে,
সবজি বাগানে তপ্ত দুপুরে রোদের ঝাঁঝে কাজের মাঝে
ব্যস্ত বাবার গায়ে ছাতা হাতে শীতল ছায়া দিতে!
বেগুন, টমেটো, কুমড়ো,লাউ, ডাটা ও পুঁই শাকের কচি লতার মাঝে
বাবার সেই কোমল মমতা ফিরে পেতে।
ইচ্ছে করে আবার বাবার সেই মমতাময়ী কন্যাটি হতে,
মুরগীর খামারে নানান দরকারে বাবার হুটহাট
ডাক শুনার তরে এক পায়ে খাড়া থাকতে,
বাক্সভরা সদ্যোজাত আনা মুরগীর তুলতুলে ছানাগুলো
একমাত্র আমি-ই পরম মমতায় এক-দুই-তিন গুনে হিসেব করে করে বের করতে!
ইচ্ছে করে আবার বাবার সেই ভালবাসার প্রিয় কন্যাটি হতে,
দড়ি, বস্তা,কাস্তে নিয়ে বাবা যখন
তাঁর প্রিয় গরু বাছুরের
ঘাস খড়ের গাদা এনে ফিরতেন
তখন ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত বাবার পাশে পানি হাতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে!
ইচ্ছে করে আবার বাবার সেই আহ্লাদীপনা কন্যাটি হতে,
বাবার একটু আদর একটু বাড়তি যত্নের লোভে
যখন উস্কশুষ্ক চুলে এলোমেলো বসনে ধরতাম ছুঁতো;
বাবা তখন কাছে ডাকতেন আমায়
অতি আদুরে স্বরে বলতেন; পরিপাটি করে চলবি মা সবসময়
গায়ে জড়াবি পরিচ্ছন্ন জামা,
মাথার চুলে করবি ঝুঁটি,
আর ঠিকমতন পায়ে পরবি চটি!
আমিও এই সুযোগে আবদারের সুরে বলতাম;
বাবা এনে দিও তবে একটা ভালো তেল ও শ্যাম্পুর বোতল,
চুল বাঁধার হরেক রঙবাহারি মাথার ক্লিপ ফিতে,
কিনে দিও লাল টুকটুকে সুন্দর একটা রানীজামা
আর পিঁয়ূ পিঁয়ূ করা বাঁশিওয়ালা একজোড়া গোলাপী জুতো!
জানি বেলাশেষে সবারই হারিয়ে যায় একদিন এমন শৈশব-কৈশোরবেলা,
হারিয়ে যায় বাবা-মায়ের আদর শাসনে ঘেরা হাজারো চাওয়া পাওয়া!
তবুও বারবার ফিরে পেতে ইচ্ছে করে আমার সেই প্রিয় মেয়েবেলা।
বারবার বাবার স্নেহের ছায়ায়, আদরের মায়ায়
সবসময় ঘেঁষে থাকতে ইচ্ছে করে আমার এই বড়বেলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৩