গত পনের দিন যাবৎ গোপালগঞ্জ অবস্থান করছি। জেলাটির শহর থেকে শুরু করে ঘুরে বেড়িয়েছি একদম প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। যেদিন প্রথম আসি, সেদিনই বিকালবেলা গেলাম শহরের প্রাণকেন্দ্র "লঞ্চঘাট" নামক জায়গায়। এসে প্রথমেই খটকা লাগলো,
প্রথমত: জায়গার নাম লঞ্চঘাট হলেও আশেপাশে লঞ্চ তো নেইই, কোন নদীও নেই। আছে শুধু একটা খাল।
দ্বিতীয়ত: জাতীয় সংসদ ভবন ঘেষা চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় এসে পড়লাম নাতো? কারণ জিয়ার কবরে যাওয়ার জন্য যেই স্ট্রাকচার এর ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে, এখানকার ছোট খালের উপর অনেকটা সেরকমই ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে এখানে।। তাও আবার একাধিক। ব্রীজের ওইপাশেই হলো গোপালগঞ্জ জেলা স্টেডিয়াম। এখানে থাকা সুবিশাল ফ্লাড লাইটের আলোতে দিনে রাতে সবসময়ই খেলা চালানো যায়। যে লাইটগুলো এখানে মিরপুর স্টেডিয়াম এর আবহ এনে দিয়েছে। এরকম আধুনিক একটা স্টেডিয়াম জেলাভিত্তিক শহরে আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা আমার জানা নেই। এই স্টেডিয়াম এর পাশেই সুবিশাল জিমনেসিয়াম এবং সুইমিংপুল কমপ্লেক্স । যার আয়তন শেরপুর এর পৌর পার্ক এর সমান। সেখান থেকে কিছুটা দুরেই হলো হেলিপ্যাড। যেখানে একসঙ্গে তিনটা হেলিকপ্টার নামার সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে।। নিরাপত্তাজনিত কারনে এই হেলিপ্যাড এর তিনদিকেই পানি শুধুমাত্র একদিকে পাকা করা রাস্তা চলে গিয়েছে হেলিপ্যাড এর দোরগোড়ায়। এরকম হেলিপ্যাড আমি টুঙ্গিপাড়া এবং কোটালীপাড়াতেও দেখেছি।
এতো শুধু গেল একটা জায়গার বর্ননা। সারা জেলার প্রতিটি আনাচে কানাচে নানা ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং চোখে পড়ে। সেগুলোর স্ট্রাকচার যেমন অনেক আধুনিক, তেমনি আয়তনও অনেক বিশাল। জেলার ৯০% রাস্তাঘাট এমন উন্নত যা আমরা শেরপুর কিংবা ময়মনসিংহ বাসী কল্পনাও করতে পারিনা।। অনেক জায়গাতেই রাস্তার পাশে টাইলসে মোড়ানো বসার জন্য সুন্দর সুন্দর জায়গা। মোটকথা: দিয়ে যেকোন বিভাগীয় শহরগুলোও গোপালগঞ্জের চাইতে অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে আছে। এখানকার মানুষদের মুখেই শুনেছি, কোন মন্ত্রণালয়ে যদি গোপালগঞ্জ জেলার কোন কাজ বা প্রকল্প যায়, তা সবার আগে পাশ হতে বাধ্য। সম্প্রতি কিন্তু গোপালগঞ্জে রেলওয়ে নির্মাণ হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ এই প্রকল্পে কাজ করছে। উন্নয়নের এক মহাযজ্ঞ চলছে গোপালগঞ্জে।
কিন্তু এতো সুযোগ সুবিধা থাকার পরও এদের সংস্কৃতি, আচার আচরণ অন্যান্য জায়গার চেয়ে অনেক পিছিয়ে।। এসব ব্যপারে পিছিয়ে থাকলে কি হবে, নেতাগিরিতে আর দাপটে কিন্তু এরা সবসময়ই আগে। দেশের যেকোন জায়গায় গিয়ে "আমি গোপালগঞ্জের লোক " বললেই যে এক্সট্রা খাতির পাওয়া যায়, তা এরা বুঝে গেছে।। গত তিনমাস আগে পিরোজপুর এর নাজিরপুরের একজন গোপালগঞ্জ যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে বলেছিলেন, "জানেন ভাই, কাগজছাড়া গাড়ি নিয়েও এই রাস্তায় কখনো আটকে পড়িনা। কখনো যদি মোবাইল কোর্ট অথবা পুলিশ আটকায়, শুধু বলি গোপালগঞ্জ যাচ্ছি। সাথে সাথেই ছেড়ে দেয়।
পুনশ্চঃ আমি গোপালগঞ্জ এর উন্নতির বিরোধিতা করছিনা। শুধু এটাই চাওয়া দেশের প্রতিটি জেলায় যেন সুষম উন্নয়ন হয়। কারন সরকার গঠন করতে গেলে কিন্তু ৬৪ জেলার মানুষের ভোটই লাগে। (৫ই জানুয়ারির নির্বাচন এর কথা ভিন্ন) গোপালগঞ্জে যে উন্নয়ন হচ্ছে , তার ৫০% যদি অন্য কোন জেলায় হয়, সেই জেলাটি সব দিকদিয়েই স্বয়ং সম্পুর্ন হয়ে যাবে।