আমি বরাবরই ভোজন রসিক মানুষ। যেখানেই যাই, "খাই-খাই" করা ছাড়া থাকতে পারিনা। চাকরির কারনে সারাদেশে ঘুরছি, নতুন কোন জায়গায় গেলেই সবার আগে খোঁজ নেই, সেখানেই বিখ্যাত খাবার কোনটা। আজ সকালে খুলনায় এসেই এখানকার বান্ধবী বর্ষাকে জানালাম আমি তার এলাকায়। সে এটা শুনেই বললো "চুঁইঝাল এর খাসির মাংস না খেয়ে খুলনা ত্যাগ করবিনা" (সে আমার "খাই-খাই" স্বভাব সম্পর্কে পুর্বাবগত) ।
"চুঁইঝাল" !!!! নামটিই কেমন যেন লাগলো। এটা দেখতে কিংবা খেতে কেমন, কিছুই জানিনা। এটা খাওয়ার জন্য নাকি যেতে হবে "চুকনগর" নামক এলাকায়। ভেবেছিলাম আগামী শুক্রবার এই অদ্ভুত জিনিসটা টেস্ট করতে যাবো কিন্তু ইন্টারনেট ঘেটে বিস্তারিত ঠিকানা নিতে গিয়ে যা পড়লাম, তাতে আর দেরি সইলোনা। কাজ অর্ধেক ফেলে রেখেই উঠে পড়লাম বাসে। মনে নানাবিধ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ১৮ কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে অবশেষে সেই চুকনগর এ গিয়ে নামলাম। ওই বাজারের মোড়েই বিখ্যাত হোটেল আব্বাস, যেখানে বিক্রি করা হয় চুঁইঝাল এর খাসির মাংস।
হোটেলের চেহারা দেখে কিছুটা খটকা লাগলো। ভেবেছিলাম হয়তো অনেক বড় একটা হোটেল, কাস্টমারে গাদাগাদি থাকবে, কিন্তু দেখি ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো। ছোট্ট একটা রুমে ৮ টার মতো টেবিল। কাস্টমারও ততটা নেই। টেবিলে বসতেই হোটেল বয় ভাত ভর্তি প্লেট সামনে দিলো আর আরেকজন বিশাল এক গামলা নিয়ে সামনে হাজির। গামলার ভেতর বেশ বড়বড় করে কাটা কালচে রঙ্গের রান্না করা খাসির মাংস । আমি ফ্রেশ একটা মাংস আর কিছু ঝোল নিয়ে খাওয়া শুরু করতেই হোটেল বয় বলে উঠলো, "স্যার মনেহয় এবারই প্রথম খাইতাছেন "। আমি বোকার মতো মাথা নেড়ে সরল স্বীকারোক্তি জানিয়ে প্রশ্ন করলাম "কেমনে বুঝলেন? "
:- " আরে, আপনি তো আসল জিনিসই নেননাই।" বলতে বলতে গামলা থেকে কয়েকটা বস্তু আমার প্লেটের মাঝে দিলেন।
একটা আধা ইঞ্চি ব্যাসার্ধের আমগাছের ডালকে লম্বায় ১ ইঞ্চি আর মাঝামাঝি চারটি ভাগ করলে যেমন দেখাবে, জিনিসটা সেরকম। বিসমিল্লাহ বলে সেটা মুখে নিয়ে চিবোলাম, চিবানো শেষে সাজনার ছোবড়া যেমন হয়, তেমন বানিয়ে ফেলে দিলাম। এর মাঝখানের সময়টুকু শুধু পরম তৃপ্তিতে উপভোগই করেছি। এতটাই উপভোগ করেছি, চোখ মনেহয় আধবোজা হয়ে গিয়েছিল।। স্বাদের চোটে আরও একটা Big size খাসির মাংসের টুকরা নিয়ে খেলাম।। সত্যি বলতে কি, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানও এর স্বাদের কাছে নস্যি। মাংসটা মাঝামাঝি টাইপের সেদ্ধ করা আর এর ঝোলের ভেতর কেমন যেন একটা ঝাঁঝ রয়েছে যা স্বাদকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। খাওয়া শেষে বিল দিতে গিয়েতো অবাক। দুই পিস Big size মাংস আর দুই প্লেট ভাতের বিল ২০০ টাকা মাত্র।। অথচ যে স্বাদটা পেয়েছি, গাঁট থেকে ৫০০ নেমে গেলেও আপত্তি থাকতোনা।
কেও খুলনা গেলে অবশ্যই এই জিনিসটার স্বাদ পরখ করে আসবেন। আমার নেক্সট টার্গেট : আগামী শুক্রবার জামিলের বিখ্যাত ফিস কাবাব।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৪৪