১ম পর্ব
আমরা হাবালা চলে এসেছি। পাহাড়ের খাদের কিনারে অনেক গাড়ী দেখা যাচ্ছে। সৌদিরা কি যেন দেখছে। গাড়ী হতে বের হতেই পানি পড়ার আওয়াজ কানে এল। খাদের এক জায়গায় মেঘের মতো তৈরি হয়েছে। আযম ভাই ও আমি পায়ে হেটে রওনা দিলাম। পাহাড়ের কিনারে তারের বেড়া দেয়া। কাছে যেতেই আমাদের চোখদুটো বড় হয়ে গেল। ইন্টারনেটের ভিডিওটিতে পাশাপাশি ৩টি ঝর্ণা দেখেছিলাম। কিন্তু মনের মাঝে একটু সন্দেহ ছিল। সেই ঝর্ণার খোঁজে বের হয়ে অবশেষে দেখা পেলাম। -অবিশ্বাস্য, মায়াবী, ঐন্দ্রজালিক। যাদুবাস্তবতায় মোহবিষ্ট রইলাম কিছুক্ষণ।
বৃষ্টি কম থাকায় আজ প্রবলবেগে ১টি ঝর্ণা প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা ঝর্ণার উৎসের খোঁজে বের হলাম। পাহাড়ের উপরের পানিগুলো একসাথ হয়ে একটি ছোট খালের মতো তৈরি হয়েছে। আর সেই পানি প্রচন্ড স্রোতের সাথে পাহাড় হতে নীচে পড়ছে। আযম ভাই সাহসী মানুষ। তিনি লাফিয়ে ঝর্ণার মুখে চলে গেলেন। আমি যদি না যাই, মান সন্মান নিয়ে টানাটানি। আমিও ওনাকে অনুসরন করলাম। কাছ থেকে খরস্রোতা ঝর্ণাটিকে অনুভব করলাম।
এটুকু দেখেই আজ আমি তৃপ্ত। কিন্তু আজ আরো কিছু দেখার আছে। আমরা সুদা’র দিকে চললাম। রাস্তায় শাহরিয়ার ভাই তার ফ্যামিলি সহ আমাদের সাথে জয়েন করলেন। সুদা’য় একটি বাঁধ আছে। বৃষ্টিতে নিশ্চয়ই তা উপচিয়ে পড়ছে। আল সুদা হচ্ছে সৌদি আরবের উচ্চতম জায়গা। সেখানে পৌছতেই তীব্র শীত গায়ে ঝাপটা দিল। ওখানে অনেকেই ভীড় করেছিল, সবাই উপচে পড়া বাঁধটি দেখছিল।
আমি জানতাম আশে পাশে আরেকটি লেক ও বাঁধ আছে। গুগুল ম্যাপে দেখেছিলাম। আযম ভাইকে বলতেই তিনি তা খুঁজে বের করতে রাজী হয়ে গেলেন। আমি গুগুল ম্যাপ দেখে নির্দেশনা দিচ্ছি, আযম ভাই ড্রাইভ করছে। মিনিট দশেকের মাঝে আমরা বাঁধটি পেয়ে গেলাম। আমরা পাহাড়ের উপরে। নীচের বাঁধটি দেখে সবাই স্বীকার করল- এখানে আসার কষ্টটি বৃথা যায়নি। আমরা বাঁধের গোড়ায় চলে গেলাম। একস্থানে কিছু কংক্রিটের স্লাব দেয়া ছিল, তার চার পাশ দিয়ে পানি যাচ্ছে। আমরা স্লাবে উঠলাম। প্রবাহিত পানির মাঝে আমরা ক’জনা সন্ধ্যার আলো আধারিতে দাঁড়িয়ে আছি। ক্ষণিকের জন্য ভুলে গেলাম আমরা আরবে আছি।
একটি প্রফেসি’র কথা না বললেই নয়। ১৪০০ বছর আগেই মোহাম্মদ (সাঃ) বলে গিয়েছিলেন আরব উপদ্বীপ সবুজ হয়ে যাবে এবং এখানে নদী প্রবাহিত হবে। তার কিছু নমুনা আজ নিজ চোখে দেখলাম। আমাদের জন্য এগুলো নিদর্শন সরূপ। সময় হয়তো ঘনিয়ে এসেছে।
একসময় টুপ করে সূর্য্য ডুবে গেল। ফিরতি পথ ধরলাম। সবার চোখে মুখে তৃপ্তি খেলা করছিল।
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:১২