আগের পর্বের দারূণ পাঠকপ্রিয়তা দেখে খাবার নিয়ে নতুন করে আরেকটি পর্ব লিখলাম। আমার গবেষণা মতে ব্লগে খাবার ও ভ্রমণ বিষয়ক লেখাগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পায়। বলার অপেক্ষা রাখেনা- বাঙ্গালি বরাবরই ভোজন রসিক এবং ইদানিং ভ্রমণের মাধ্যমে জীবনকে জানতে চায়।
অফিসে আমার সকালটা শুরু হয় এক কাপ কফি দিয়ে-আরবীয় কফি। আমার সৌদি কলিগরা অফিসে এসেই কফি বানায়। আমাকে স্নেহ করে এক কাপ দিয়ে যায়। ছোট কাপে পরিবেশিত এই কফিকে আরবিতে “গাওয়া” বলে। কফিতে কোন চিনি ব্যবহার করা হয় না। সৌদিরা আড্ডা দিতে দিতে খেজুরের সাথে এই কফি পান করে থাকে। খুবই স্ট্রং এই কফি সহজেই শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। প্রথমদিকে এই কফি খেতে না পারলেও, এখন বেশ মজা করে পান করি।
একদিন অফিসে বসে আছি। আমার সৌদি কলিগ তার হাত থেকে এক খণ্ড রুটি ছিড়ে দিল। বলল, “খেয়ে দেখ, আমার বাসায় বানানো, অনেক মজা।” এমন এক খন্ড এবড়ো থেবড়ো আটার রুটি কি এমন মজার হতে পারে বুঝতে পারলাম না। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও মুখে দিলাম। আসলেই মজার, পুরো খণ্ডটি এমনি এমনি শেষ করে দিলাম। ভেবে পেলাম না কিভাবে সাধারণ রুটির খণ্ডটি এত স্বাদের হল।
আমি, আযম ভাই, শাহরিয়ার ভাই ও লিটু ভাই পাহাড়ী রাস্তায় ঘুরতে বেরিয়েছি। মসজিদ দেখে নামাজ পড়তে থামলাম। নামাজ শেষে সবাই চা খেতে চাইল। মসজিদের পাশেই এক বাচ্চা ছেলে চা ও রুটি বিক্রি করছিল। আযম ভাই জানালেন চা দিয়ে এই রুটি খেতে অসাধারণ লাগে। বিভিন্ন গ্রোসারি শপে ৬ পিসের রুটির প্যাকেট ১ রিয়ালে কিনতে পাওয়া যায়। অথচ এই রুটি ১ পিস ১০ রিয়াল। সৌদিরা লাইন ধরে কিনে নিয়ে যায়। আমরা সবাই চা ও ১ পিস রুটি নিলাম। চা দিয়ে ভিজিয়ে খেতে অমৃতের মত লাগল। লাকড়ির উনোনে ঘরে বানানো এই রুটি মনে তৃপ্তি এনে দিল।
আরেকটি রুটি আমার পছন্দের অন্যতম। সাধারণত টার্কিশ রেস্টুরেন্টে এই রুটি পাওয়া যায়। রুটির ভেতরে গার্লিক পেস্ট দেয়া থাকে। গরম গরম রুটি ও গার্লিক পেস্টের মিলিত মৌ মৌ গন্ধ ক্ষুধা আরো বাড়িয়ে দেয়। বার-বি-কিউ অথবা গ্রিলড মাংসের সাথে খেতে খেতে বাকী সব কাজের কথা ভুলে যাবারই কথা।
আরব দেশগুলোতে মিস্টি জাতীয় খাবারের মাঝে “কুনাফা” অন্যতম। আমারো খাবারটি অনেক ভালো লাগে। সেমাইয়ের মতো একধরণের ডো দিয়ে কুনাফা বানানো হয়। বিভিন্ন লেয়ারে মাখন, পনির, বাদাম দিয়ে অনেক হিটে খাবারটি তৈরি করা হয়। রেস্টুরেন্টে খাবারটির অর্ডার দিলে চুলায় গরম করে চিনির সিরা মিশিয়ে পরিবেশন করে। কুনাফা মুখে দেবার সাথে সাথে মনে হবে-বেহেশতি খাবার বোধয় এমনি হয়।
আমি সব সময় মাছ খেতে চাই। কিন্তু মাছ প্রসেস করাটা একটু ঝামেলার। সৌদিতে লোকের যে হারে মুরগী খেয়ে থাকে, তাতে মানুষগুলো একদিন মুরগীর মতো আচরণ শুরু করলে অবাক হব না।
দাম্মাম বেড়াতে গিয়েছিলাম। শামসু ভাই মাছ কিনে এনে নিজে গ্রিল করেছেন। স্বাদের কথা নাইবা বলি।
আরেকদিন এক সুপার মার্কেটে গেলাম। ফ্রোজেন সেকশনে সামুদ্রিক আইটেমের প্যাকেট পেলাম-স্কুইড, ক্রাব, বাচ্চা অক্টোপাস, চিংড়ি, আরো কিছু মিশিয়ে দারূণ একটি প্যাকেট বানিয়েছে। বাসায় নিয়ে আসলাম। শাকিলা আর রান্না করে না। এদিন সেদিন করতে করতে অনেকদিন পার করে দিল। অবশেষে শাকিলা রান্না করল। সে না খেলেও আমি পুরোটুকু আয়েশ করে খেলাম।
ওথায়েম মার্কেটে সাঈদ নতুন একটি মাংস খুঁজে পেল-অস্ট্রিচ মিট (উট পাখির মাংস)। আদিল ভাই এই মাংস আমাদের সবার মাঝে জনপ্রিয় করে তুললেন। আমিও খেয়ে দেখলাম – অনেক মজার। ছুটিতে দেশেও এই মাংস নিয়ে সবাইকে খাওয়ালাম।
রিয়াদ, দাম্মামে বাণিজ্যিকভাবে উট পাখির চাষ করা হয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে রেড মিটগুলোর মাঝে উট পাখি মাংস সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত। এই তথ্য পেয়ে আদিল ভাই এবং বাকী আমরা এত পরিমানে উট পাখির মাংস কিনলাম যে-ওথায়েমে মাংসই থাকে না।
আমাদের ধারণা অস্ট্রিচগুলো রাতে দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১১