somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Song of Solomon-২ (জানা অজানা-৩)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Song of Solomon-১

তপ্ত মরুভূমির মাঝখান দিয়ে একটি কাফেলা সিরিয়ার দিকে যাচ্ছে। ব্যবসায়, বাণিজ্য তাদের উদ্দেশ্য। কাফেলায় ১২ বছরের একটি বালকও আছে। কাফেলাটি অন্যসব কাফেলার মতো নয়, বালকটির মাঝে কিছু একটা ব্যতিক্রম রয়েছে। এক খণ্ড মেঘ কাফেলাটিকে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। কাফেলাটি বসরা শহরের কাছাকাছি চলে আসল।

নিকটস্থ গির্জার পাদ্রী বাহিরা দূর হতে কাফেলাটিকে দেখলেন। তিনি এমনটাই আশা করছিলেন। কথিত আছে,এই সন্ন্যাসী সর্বদা এই গির্জাতেই থাকতেন যেখানে তিনি পুরুষের পর পুরুষ ধরে হস্তান্তরিত একটি বই হতে তাঁর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

তিনি আশ্রমে অবস্থানকালে কাফেলার মধ্য থেকে বালকটিকে একটি মেঘ দ্বারা চিনতে পেরেছিলেন যা অন্যান্য লোকদের মাঝে তাঁকে ছায়া দিচ্ছিল। কাফেলাটি একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়ার জন্য থামল। বাহিরা দেখলেন মেঘটি গাছটিকে ছায়া দিচ্ছে,এবং এর শাখাপ্রশাখা বেঁকে বালকটির ওপর ঝুঁকে রইল যতক্ষণ না তিনি এর ছায়ার নিচে এলেন। বাহিরা যখন এটা দেখলেন,তিনি তাঁর আশ্রম থেকে বের হলেন।

আলাপচারিতার এক পর্যায়ে বাহিরা তাদের বললেন,“হে কুরাইশের লোকরা! আমি আপনাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করেছি। আর আমি চাই যে আপনারা সকলেই আসুন,বৃদ্ধ,যুবক,ক্রীতদাস ও স্বাধীন সবাই। তাদের একজন বললেন, “বাহিরা! আজ আপনার অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটেছে। আমরা প্রায়ই আপনার পাশ দিয়ে যাই, কিন্তু আপনি আমাদের সাথে এমন ব্যবহার আগে কখনোই করেন নাই। আজ আপনার কী হয়েছে?” তিনি বললেন,“আপনি যা বলেছেন সেটা ঠিক। কিন্তু আপনারা আমার মেহমান, আর খাদ্য পেশ করে আমি আপনাদের প্রতি উদার হতে চাচ্ছি যাতে আপনারা সবাই খেতে পারেন।” কাফেলার দল বালকটিকে মালপত্রসহ গাছের নিচে রেখে বাহিরার কাছে গেল। তারা তাকে বলল যে, একজন বালক ছাড়া সকলেই এসেছে যে তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ,কাজেই তাকে তাদের মালপত্রের সাথে রেখে এসেছে। বাহিরা বললেন,“তাকে আপনাদের সাথে এই খাবারে শরিক হতে দাওয়াত দিন।”

বালকটিকে খাবার খেতে নিয়ে আস হল। বাহিরা যখন তাঁকে দেখলেন তখন তাঁর সত্য পরিচয়ের চিহ্নসমূহ খঁজতে লাগলেন যেমনটা প্রাচীন কিতাবে লেখা ছিল। খাওয়ার পরে,লোকজন চলে গেলে বাহিরা তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, “বালক,আমি তোমাকে লাত এবং ওজ্জার কসম দিয়ে বলছি আমি যা জিজ্ঞেস করি তার উত্তর দাও।” বাহিরা এভাবে বললেন কারণ বাহিরা এই বালকের লোকদেরকে এই মূর্তিগুলোর নামে কসম করতে শুনেছিলেন। বলা হয় বালকটি তখন তাকে বলেছিলেন, “ লাত এবং ওজ্জার নামে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না,কেননা আল্লাহর কসম,এই দু্‌ইটি অপেক্ষা অন্য কিছুকে আমি বেশি অপছন্দ করি না।” বাহিরা উত্তরে বললেন, “তবে আল্লাহর কসম,আমি যা জিজ্ঞেস করি তা আমাকে বলো।” বালকটি বলল, “আমাকে যা ইচ্ছা জিজ্ঞেস করুন।” কাজেই তিনি তাঁকে তাঁর ঘুম, অবয়ব,এবং সাধারণ বিষয়াদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। বালকটির উত্তরগুলো,বাহিরা তাঁর সম্পর্কে যে বিবরণ জানতেন সেটার সাথে মিলে গেল। অত:পর তিনি তাঁর পিঠের দিকে তাকালেন এবং তাঁর দুই স্কন্ধের মাঝে নবুয়্যতের সীলমোহর দেখতে পেলেন,ঠিক যে জায়গায় তার বইতে বর্ণিত আছে।

পরে তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবের কাছে গিয়ে বললেন, “এই বালকের সাথে আপনার কী সম্পর্ক?” আবু তালিব বললেন, “সে আমার ছেলে।” বাহিরা বললেন, “না,সে আপনার ছেলে নয়। তাঁর পিতার জীবিত থাকার কথা নয়।” আবু তালিব বললেন, “সে আমার ভাইয়ের ছেলে।” যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো তাঁর পিতা কোথায় আবু তালিব বললেন, “সে তাঁর মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় তাঁর পিতা মারা গেছে।” বাহিরা বললেন, “সেটা সত্য। আপনার ভাইয়ের ছেলেকে নিয়ে ফিরে যান এবং তাঁকে ইহুদিদের থেকে সতর্কতার সাথে হেফাযত করুন,কারণ,আল্লাহর কসম,তারা যদি তাঁর সম্পর্কে তা জানে যা আমি জানি, তবে তারা তাঁর বিরূদ্ধে কুচক্রান্ত করবে। আপনার ভাতিজার জন্য অনেক বড় বিষয় রক্ষিত আছে। কাজেই,তাকে দ্রুত বাড়ি নিয়ে যান।”

আবু তালিব সিরিয়ার রাজধানীতে না গিয়ে স্থানীয় বাজারে ব্যবসার পণ্য বিক্রয় করেন এবং তাতে প্রচুর লাভ হয় এবং মক্কায় ফিরে যান।

আবু তালিব ভবিষ্যতে বালক মুহাম্মদের নব্যুয়াত প্রাপ্তির খবর পেয়ে যান।

যাদেরকে আমি কিতাব প্রদান করেছি,তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এরূপভাবে চিনে, যেমন চিনে তারা আপন পুত্রদেরকে এবং নিশ্চয়ই তাদের এক দল জ্ঞাতসারে সত্যকে গোপন করছে। (আল কোরআন ২:১৪৬)

এই কোরআন তো বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ।(আল কোরআন ২৬:১৯২)
নিশ্চয় এর উল্লেখ আছে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে। বনী-ইসরাঈলের পন্ডিতরা এটা অবগত আছে-এটা কি তাদের জন্যে নিদর্শন নয়?(আল কোরআন ২৬:১৯৬-১৯৭)


বালক মুহাম্মদ ও তার কাফেলা যে গাছটির নীচে বিশ্রাম নিয়েছিল অলৌকিকভাবে গাছটি এখনো বেঁচে আছে। অনেকেই মনে করেন এটিই সেই গাছ। গাছটি জর্ডানের Buqa'awiyya মরুভূমিতে সিরিয়ার বসরা শহরের নিকটে অবস্থিত, যার আশে পাশের ১০০ বর্গকিলোমিটারে আর কোন গাছ নেই।



গাছটি



(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এক পায়ে নুপুর আমার অন্য পা খালি ।

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:০৫




টিং টিং করে কিছু একটা মাথার কাছে বেজেই যাচ্ছে । কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় মেজাজ খারাপের চূড়ান্ত অবস্থা । হাতিয়ে যাচ্ছি । শব্দের উৎস খুজে পাচ্ছি না । চোখ বুঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের ত্যাগ, সন্তানের ভুল সিদ্ধান্ত

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫১



এক এলাকায় বাস করতেন এক অসহায় মা। স্বামী মারা যাবার পর অসংখ্য প্রতিকূলতা পেরিয়ে, সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে তিনি একমাত্র ছেলেকে বড় করেন। নিজের প্রয়োজন-সুবিধা বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে পড়াশোনার সুযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

=১। কে বা চিনে আমায় ২। চলো যে যার মত ভালো থাকি =

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:২৭


©কাজী ফাতেমা ছবি
#ভাবনা'রা
যত্ন করে লাগানো পাতাবাহার
কিংবা বারান্দার ঝুলে পড়া ঘাস ফুল
আর মানি প্লান্ট, কাঠ বেলী ওরা আমাকে চিনে,
রোজ বসে যেখানে দেখে নেই মুখশ্রী
ড্রেসিং টেবিলের আয়না সে আমাকে চিনে।

যে গ্লাসটায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীতে ফিরলেন বুচ ও সুনিতা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৩৫

মহাকাশ স্টেশনে ৯ মাস আটকে থেকে পৃথিবীতে ফিরলেন বুচ ও সুনিতা


আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) দীর্ঘ ৯ মাস কাটিয়ে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরতে সক্ষম হলেন দুই বিশিষ্ট মার্কিন নভোচারী... ...বাকিটুকু পড়ুন

'ওরা' পারেও....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

'ওরা' পারেও....

২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ফজরের ওয়াক্তে আমাকে আর Zahid Hassan কে র‍্যাব-১০ থেকে মিরপুর থানায় হস্তান্তর করে। সেই দিনই আমাদের কোর্টে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আনে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×