১ম পর্ব
২য় পর্ব
বাসায় এসেই ইন্টারনেটে সার্চ দিলাম। ২ টাকার নোটটি কোন একটি প্রতিযোগিতায় সুন্দর নোট হিসাবে প্রথম হয়েছিল। হামুদকে বাংলাদেশের একটি নোটের অর্জনের কথাটিও জানাতে চাচ্ছিলাম। হতে পারে ব্যাপারটি হাস্যকর- আরবের একটি অজপাড়াগাঁয়ের কোন এক প্রাইভেট মিউজিয়ামে বাংলাদেশের একটি নোট থাকলে কিবা আসে যায় ! কিন্তু আমার ভেতরের অনুরণন আমি থামাতে পারিনি।
একটু কষ্ট করতেই নিউজটি পেয়ে যাই। রাশা’র একটি অনলাইন পোর্টালের ভোটাভুটিতে ২ টাকার নোটটি সবচেয়ে সুন্দর নোট হিসাবে বিবেচিত হয়। নিউজটিতো পেলাম, কিন্তু টাকাটি পাব কোথায়? আমার কাছে এখানে কয়েটি নতুন নোট ছিল, কিন্তু কোনভাবেই তা আর খুঁজে পেলাম না। এর আগের শাকিলা’র ক্যাম্পাসের এক ফিলিপেনো নার্সকে ১টি চকচকে নোট দিয়েছিলাম। সে বিভিন্ন দেশের নোট সংগ্রহ করত। শাকিলা তাকে বারেবারে বলে দিয়েছিল- তোমাকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নোটটি দিচ্ছি।
বাংলাদেশে খোঁজ লাগালাম। শাবিপ্রবি’র এক ছোট ভাই ১ প্যাকেট নোট পাবার কথা জানাল। কিন্তু সে কোনভাবেই নোটগুলো কুরিয়ারে করে ঢাকা পাঠাতে পারল না। আমার শ্যালিকাও বিভিন্নজনের কাছে খোঁজ নিতে থাকল। পুরনো নোট পাওয়া গেলেও, চকচকে নতুন নোট পাওয়া গেলনা।
কিন্তু এখন কি করা যায়? মোশতাক ভাইকে ফোন দিলাম। জানালেন- ওনার কাছে থাকতে পারে। গিয়ে দেখি নোটের বিবর্ণ অবস্থা। স্বত্বত্যাগ করার শর্তে ১ টি নোট নিয়ে আসলাম। পথে মাহমুদ ভাইয়ের সাথে দেখা। তিনি জানালেন ওনার কাছেও থাকতে পারে। মাহমুদ ভাইয়ের কাছে ২ টি নোট পাওয়া গেল-মোশতাক ভাইয়ের নোটের চেয়ে ভালো অবস্থা। যাক কাজ চালানো যাবে।
পরেরদিন হামুদকে ফোন দিলাম-“আজ বিকালে কয়েকজনকে নিয়ে তোমার মিউজিয়ামে আসছি”। হামুদ স্বানন্দে জানাল সে বিকালে অপেক্ষা করবে। বিকালে আমি, মিলন, মোশতাক ভাই ও আলীম ভাই আপন আপন বেটার হাফদেরকে নিয়ে মিউজিয়ামে হাজির হই। প্রথমেই হামুদকে ২ টাকার ২ টি নোট দিয়ে এর বিশেষত্য জানাই। হামুদ তা সাদরে গ্রহন করে।
হামুদকে দেয়া নোট দুটি এবং বর্ণনা
সেদিন ঠিকমতো দেখতে পারিনি, আজ দেখলাম মিউজিয়ামটি ছোট হলেও বিভিন্ন কালেকশনে তা সমৃদ্ধ। বিভিন্ন প্রাচীন আরবী বই, পারসিয়ান জিনিপত্র, মোঘলদের তরবারি/ ছুরি, নেপোলিয়ানের ব্যবহৃত চায়ের সেট, হিটলারের নাজি বাহিনীর মেডেল সহ আরো অনেক কিছুই সাজানো আছে। হামুদ আমাদেরকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়। তার কাছে প্রাচীন কয়েকটি গ্রামোফোনও ছিল। ভেবেছিলাম হয়তো নষ্ট, কিন্তু হামুদ সেগুলোতে রেকর্ড বাজিয়ে শোনাল। সুরের ঝংকারে কয়েকশত বছর পেছনে চলে গেলাম।
মোঘল তরবারী
নাজি মেডেল
নেপোলিয়ানের ব্যবহৃত চায়ের সেটের একাংশ
হামুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাশের বিল্ডিং এ গেলাম। চমৎকার সাজানো গোছানো। সেখানে এন্টিক জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। মোশতাকভাই একটি পাথর বসানো লকেট কিনলেন। একটি রুমে দেখলাম বিভিন্ন পেইন্টিং প্রদর্শিত হচ্ছে। আরবের মেয়েদের আঁকার হাত দারূণ। মুগ্ধ হতেই হবে, কিন্তু তাদের তেমন প্রচারণা নেই। তারা এগুলো নিজেদের আনন্দের জন্য করে। শাকিলা একদিন বলেছিল, তার কয়েকজন স্টুডেন্ট নাকি এমন কিছু ছবি ক্যাম্পাসে প্রদর্শন করেছিল যা দেখে সে থ হয়ে গিয়েছিল।
সেখান থেকে আমরা সবাই চলে যাই আবহা’র কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে। অনেক ফ্যামিলি সেখানে ছিল। বাচ্চারা খেলছিল, কেউবা বারবিকিউ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। শাকিলার তৈরি চটপটি খেয়ে, অলস আড্ডা দিয়ে আমরা বাসার পথ ধরি।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩২