ফারাসানের নীলে-৭ (আরব ডায়েরি-৭৯)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
আল-রিফাই হাউজ থেকে সরাসরি জাহাজের টিকেট অফিসে চলে গেলাম। আগের অভিজ্ঞতা থেকে মেয়েদেরকে লাইনে দাঁড় করালাম। অনেক্ষণ পর তারা পরেরদিনের টিকেট নিয়ে বেরিয়ে এল। কিন্তু এবার ছেলেদের জন্য টিকেট দেয়নি। তাই এবার আমরা লাইনে দাঁড়ালাম। আধা ঘন্টা লাইনে অপেক্ষার পর জানাল এখন টিকেট দেয়া হবে না, মাগরিবের পর দেয়া হবে- সময় শেষ। মেজাজটাই গরম হয়ে গেল।
হোটেলে ফিরে এসে নাজমুল ভাইয়ের সাথে দেখা করলাম। তিনি জানালেন, ফারাসান দ্বীপের আশে পাশে মাঝে মাঝেই ডলফিনের ঝাঁক দেখা যায়। তবে সকালবেলা সম্ভাবনাটা বেশী থাকে। কিন্তু এখন আমাদের তেমন কিছুই করার নাই। আমরা বেরিয়ে পড়ি। কোরাল রিসোর্টের পাশেই স্পিড বোট ভাড়া দেয়া হয়। আমরা একটা বোট ২৫০ রিয়াল দিয়ে ভাড়া নিয়ে নেই। ডকে সারি সারি বোট বাঁধা আছে। সি গালেরা এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, কোথাও কোন হুড়োহুড়ি নেই, নিঃশ্চুপ ও শান্ত। বোটে ওঠার সাথে সাথেই ড্রাইভার আমাদের হাতে লাইফ জ্যাকেট ধরিয়ে দিল। কমলা রংয়ের লাইফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় সবাইকে অদ্ভুত দেখাচ্ছিল। হঠাৎ করেই স্পিড বোট এমন গতি নিল যে আমাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। শাকিলা ভয় পেল সবচেয়ে বেশী। ভয়টা সয়ে আসতেই আমরা ছবি তোলায় নেমে পড়লাম। আলী বেচারা মোশতাক ভাই ও দীবার ছবি তুলতে তুলতে হয়রান হয়ে গেল।
কখনও ভাবিনি রেড় সি’র বুকে স্পিড বোট দিয়ে ঘুরে বেড়াব। ছোট বেলায় রেড সি অথবা পারসিয়ান সি শুধু গল্পের বইয়ের পাতাতেই ছিল। মাগরিবের কিছু পরে আমরা আরেকটা দ্বীপে পৌছি। ডলফিনের কথা জিজ্ঞাসা করলে আমাদের ড্রাইভার আজকে সে সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। দেখলাম আরো দুটি বোট সেই দ্বীপে ভিড়েছে। তারা সবাই মিলে নামাজে দাঁড়াল। সেখানে মাগরিব ও এশা’র নামাজ একসাথে পড়ে নিলাম। পাশেই একটি দূর্গের মত একটি স্থাপনা, ঘেরাও দিয়ে রাখা ছিল। জানা গেল এটা একসময় স্বর্ণ খনি ছিল। অটোমান আমলে এখান থেকে স্বর্ণ আহোরণ করা হত, এখন পরিত্যাক্ত।
আমরা এই দ্বীপটি থেকেই আবার ফিরতি পথ ধরলাম। অন্ধকার নেমে এসেছে, দূরের বৈদ্যুতিক বাতিগুলো মিটি মিটি আলো ছড়াচ্ছে। আমরা পাঁচজন নীরবে, নিঃশব্দে রেড সি’র বুক চিরে ফারাসান দ্বীপের দিকে এগিয়ে চলছি।
হোটেলে ফিরে আমি ও মোশতাক ভাই বিচে চলে আসি। আধা ঘন্টা ধরে পানিতে ভিজে, ক্লান্ত দেহ নিয়ে কটেজের বারান্দায় রাখা ইজি চেয়ারে গা হেলিয়ে দেই। আজ রাতটা বারান্দাতেই কাটাতে হবে। ভেতরে মেয়েরা ঘুমাবে। আর বারান্দায় আমরা ৩ জন। নাজমুল ভাই এক্সট্রা তোশক, চাদর ও বালিশের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সামারের ছুটিতে এত ভীড় হয় যে অনেকে খোলা মাঠেও বিছানা, তাবু পেতে ঘুমায়। সে হিসাবে খোলা বারান্দায় রাতটা মন্দ কাটবে না।
ইজি চেয়ারে বসে ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। কেন যেন ভেঙ্গে গেল। তাকাতেই দেখি সামনের কটেজের বারান্দায় এক সৌদি উর্বশী-মুখটা খোলা। মায়াভরা চোখ, লম্বাটে মুখ। চোখাচোখি হতেই ভেতরে চলে গেল। সৌদি আরবের এ পাশটা যথেষ্ট রক্ষণশীল, সব মেয়েকেই কঠোর পর্দার মাঝে থাকতে হয়। কিন্তু একটু স্বাধীনতা পেলে তার স্বাদটুকু নিতে তারা ভুল করে না।
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন