১ম পর্ব
কাছেই একটা পাহাড়ের উপর তনুমা ক্যাম্পাস। শুক্রবার বিধায় বন্ধ ছিল। নীচে একটি ভ্যালি দেখা যাচ্ছিল, সেখানে অনেক গাছ। কচি ভাই জানালেন সেখানে গাধারা থাকে, মাঝে মাঝে সকালে ক্যাম্পাসেও চলে আসে।
তনুমা ক্যাম্পাস
গাধারা নাকি ওখানেই থাকে
আমরা বাসায় ফিরে আসলাম। এরই মাঝে বাকী সবাই চলে এসেছে। সবাই মিলে মজাদার নাস্তা পর্ব শেষ করলাম। খাওয়াদাওয়া শেষে কচি ভাই বিশেষ এক জায়গায় যাওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে নিয়ে বের হলেন। বাসার নীচে নামতেই মিশরি বড়ই গাছে ফল ঝুলে থাকতে দেখলাম। হলুদ পাকা ফল। ফলটি মুখে পুরতেই টক মিষ্টি স্বাদে জিহ্বা নড়েচড়ে উঠল। এটাকে ঠিক বড়ই মনে হল না। আমাদের দেশের লটকন ফলের মতোই কিন্তু অনেক রসালো ও মাংসল। আমি খেলাম সবচেয়ে বেশী।
গাড়ী নিয়ে কচি ভাইয়ের পেছন পেছন যাচ্ছি। শহরের ভেতরের সরু রাস্তা। হঠাৎ করেই আমাদের চারপাশ মেঘে ঢেকে গেল। কিছুই দেখতে পারছিলাম না। কচি ভাই যে কিভাবে রাস্তা দেখে যাচ্ছে, উনিই ভালো জানেন। তখনই কচি ভাইয়ের গাড়ী থেমে গেল। আমরা সবাই নামলাম। কচি ভাই জানালেন, উনি কোন মতেই রাস্তা দেখতে পারছেন না। এভাবে যাওয়া যাবেনা। আর তখনই এক দল হিংস্র কুকুর সাঈদকে তাড়া লাগাল। আমরা সবাই তড়িঘড়ি ব্যাক করলাম।
বাসায় এসে জুম্মার প্রস্তুতি নিলাম। নামাজ শেষে মসজিদের আশে পাশে বড় হাট বসে। বেশ সস্তায় ২টি চিনা হাঁস পাওয়া গেল। কিন্তু প্রসেস করার ঝামেলার জন্য কিনলাম না। দেখলাম খরগোশ উঠেছে। আমি বিভিন্ন সময় খরগোশ খেতে চাইলেও শাকিলা বলে দিয়েছে সে এসব রান্না করতে পারবে না। কাকড়া নিয়েও সে এমন কথাই বলেছিল। কিন্তু সাঈদ যখন দারূণ করে কাকড়া রান্না করেছিল, তখন শাকিলা ও শিমু বেশ মজা করেই তা খেয়েছিল। অনেক ঝাল ‘খালেক মরিচের’ খোঁজ করলাম, সেটাও মিলল না। সবাই খালি হাতেই বাসায় ফিরলাম।
বাসায় এসে দেখি এলাহী কারবার। রেশমা আপা নানবিধ খাবারের আয়োজন করেছেন। কোনটা রেখে কোনটা খাই এমন অবস্থা। রেশমা আপার রান্না সবসময়ই অতুলনীয়, আজও তার ব্যতিক্রম নয়।
ছবিঃ কচি ভাই
খাবার শেষ করতে করতে বিকাল হয়ে গেল। এখন ফেরার পালা। সাঈদ রাতে থাকার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। দেখলাম উসামাও থাকবে। সাঈদ ও কচি ভাই আমাকে ও শাকিলাকে রাতে থাকার জন্য চাপাচাপি করতে থাকল, না করতে পারলাম না। হাবিব স্যারও রয়ে গেলেন।
আদিল ভাই, মোশতাক ভাই, ফারুক স্যার, আসপিয়া ভাই ও মামুনকে বিদায় জানালাম। মামুন খুব থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু পরেরদিন এক্সাম ডিউটি থাকায় মন খারাপ করে চলে গেল।
হাবিব স্যার ডিজিটাল মানুষ, সবসময় অনলাইনে থাকেন। আমরা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ালাম। স্যার মোবাইলের মাধ্যমে ফেসবুকে সেসব ছবি আপলোড করেন।
মামুন আবহা পৌছে ছবিগুলো দেখে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হাবিব স্যারের ছবিতে সে কমেন্ট করে, ‘স্যার, ছবি দেন আপনি, মন খারাপ হয় আমার।’
রাতে মজার একটি ঘটনা ঘটল। উসামা ও হাবিব স্যার গেলেন আরবীয় এক ফ্যামিলির সাথে দেখা করতে। আরবীয় ভদ্রলোক উসামা’র সাথে তনুমা ক্যাম্পাসে শিক্ষকতা করেন।
হাবিব স্যার সেখানে থেকেই মোবাইলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন- ‘এই প্রথম আরবীয় নারীর সাথে হ্যান্ডশ্যক করলাম।’
মামুন আবহা থেকে হায় হায় করে উঠে- ‘বলেন কি? আমি তো মিস করলাম।’
স্যার রিপ্লাই দেন- ‘ভদ্রমহিলা ছিলেন সুদানি।’
মামুন শান্তি পায়-‘ভাগ্য ভাল আমি ছিলাম না।’
(চলবে)
৩য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২৩