নৌকা ঘাটে ভিড়তে জয়বাংলা শ্লোগানে আকাশ বাতাস হেলে উঠলো। সে কম্পনের ঢেউ বর্গীদেশে না পৌছলেও হাংগাইল্যাপাড়ার ইলশা হাজীর উঠোন পর্যন্ত পৌছবে এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত ছিল। গঞ্জে যাওয়ার আগে তেমন ব্যবস্থা করেই নৌকায় পা রেখেছিল ছ্যার ছ্যার। দিনের আনন্দ রাতের অন্ধকার পর্যন্ত গড়ালো উদিংগা বাজারে নিজস্ব আড়তে পান-তামুকের আসরের মধ্যদিয়ে। সেখানে ইয়ার দোস্তদের নিয়ে মৃতসঞ্জীবনী সূরা পান করে গায়ে গতরে জ্যান্তসঞ্জীবনির জোয়ার নামালো। আসর মধ্যরাত পর্যন্ত গড়ালো। এক ফাঁকে ছোটকালের দোস্ত ডেঙ্গুর আলী সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললো, "দোস্ত, কি এমন যাদু দিয়া তুমি দুনিয়া জয় করলা?" আষাঢ় মাসের আসমান গর্জনের মত গর্জে উঠলো ছ্যার ছ্যার। হুংকার দিয়ে উঠলো, "বেতমিজ ইলশা মামলা করছে নেত্রীর লাইগ্যা, আর আমি করছি তার বাপের লাইগ্যা। তুমরাই কও, বাপ বড় না বেটি বড়?" ঢেঙ্গুর হতাশ হল। তার বন্ধু আকারে ইঙ্গিতে কি বলতে চাইলো কিছুই বুঝতে পারলোনা। বন্ধুর পা জড়িয়ে আকুলি বিকুলি করে উঠলো, "দোস্ত, যা কওয়ার তা সোজা বাংলায় কও। ইলশার মত ইংরেজি মারাইওনা"। দরাজ গলায় কথা বলতে ভালবাসে ছ্যার ছ্যার। এ সময়টায় নিজকে চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান লাগে। গর্বে বুক ফুলে উঠে। 'আরে তোমারা এসব বুঝবানা। মাবুদে আমারে বিশেষ মগজ দিয়ে দুনিয়ায় পাঠাইছে তোমগো সেবার লাইগ্যা। তো বলতে অসুবিধা নাই, দুরের শহর সিঙ্গাইরের আলী কোপানের বিরুদ্ধে মামলা করছি। হেয় নাকি আমার পিতারে লইয়্যা চাইর দশক আগে কটাক্ষ করছে। পিতা গেছে বিদেশে। সাথে গেছে তার প্রাইভেট উড়াজাহাজ। সাতদিন ধইরা জাতির লাইগ্যা বিদেশে দেন-দরবার করছে। আর এই নাদানের বাচ্চা নাদান আলী কোপান নাকি কইছে, এ হালায় কিমুন নেতা যে কিনা সাতদিন ধইরা একটা উড়াজাহাজ বিমানবন্দরে ফালাইয়া রাকছে! আমার বাবার অপমান মানে গোটা জাতির অপমান... স্বাধীনতার অপমান। বলতে গিয়ে রীতিমত ঘেমে উঠলো ছ্যার ছ্যার। ঢেঙ্গুর এ যাত্রায়ও কিছু বুঝতে পারলোনা। বেফাঁস কথা বলে ফেললো, 'তা তোমার বাপ আছিল গাজীপুরার নাম করা ডাকাত। লাল মিয়া চেয়ারম্যানের ডাইন হাত। হের আবার মান অপমান কি? হেয়তো মইরা গেছে গণ্ডগোলের বছর।' কষে একটা থাপ্পড় মারল ঢেঙ্গুরের গালে এবং হায় হায় করে উঠলো ছ্যার ছ্যার...'কিয়ের মধ্যে কি, পানিভাতে ঘি! আরে মাদানির পুত মাদানি, আমার বাপের অপমানে মামলা করলে কি নমিনেশন মিলবো? বাপ মানে আমাগো তাইনের বাপ। জাতির বাপ।' আসরের একমাত্র শিক্ষিত ইয়ার মাদ্রাসার শিক্ষক কেয়ামতউল্লাহ দুলদুলানি পায়ুপথে বাতাস নিষ্কাসনের সাথে আসরের বাতাসও ভারী হয়ে উঠল। সবাই বুঝে নিলো দুলদুলানি এবার মুখ খুলবে। কিছু বলার আগে এমনটাই করে সে। 'তা ছ্যার ছ্যার, আলী কোপান নামডা কেমন জানি আমার কাছে সন্দেহের মনে হয়। মনে হয় দেশি না। ইরানী ইরানী গন্ধ পাওয়া যায়। তা তুমি যাচাই বাছাই কইরা মাঠে নামছো তো?' 'ওয়াসতাগফেরুল্লাহ বিন মোহম্মদ দুলদুলানি, বেআক্কেলের মত এইডা তুমি কি কইলা, মাল কি খুব বেশি টানছো?' সিঙ্গাইর বাজারের আলী কোপানের সন্ধান আমি জেলা কমিটির সভাপতির কাছ থিকা অনেক কষ্ট কইর্যা আদায় করছি। পকেট হইতে মালও কিছু খইস্যা গেছে। আর তুমি কিনা এ নিয়া তামশা করলা!' রাত গড়ানোর সাথে পেটের মালও গড়াতে থাকলো। শেষরাতে রিসিপাড়ার গোরস্থানের সবকটা শেয়াল একসাথে হুক্কা হুয়া ডাক দেয়ার সাথে আসর থামাতে হল। জাংগাইলা বাজারের ঘোড়া মাওলানার নির্দেশ, ইলিকশনে পাশ করতে চাইলে শেয়ালদের ডাকেও কান দিতে হবে। না মানলে খালি ইলেকশনে ফেল না, ওলাউঠা বিবিও আওয়াদানি শুরু করতে পারে।
পরদিন টাউটারি বার্তায় ফলাও করে ছাপা হল ছ্যার ছ্যার আলীর মামলার বিবরণ। মামলার বিবাদী আধুনিক সিংগাপুরের আর্কিটেক্ট লী কুয়ান। বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭৩ সালে কানাডায় না কোথায় শেখ মুজিব বাংলাদেশ বিমানের একটি বিমান এয়ারপোর্টে সাতদিন বসিয়ে সম্মেলন করেছিলেন। তাতে কটাক্ষ করে লী কুয়ান কি একটা মন্তব্য করেছিলেন। ছ্যার ছ্যারের উকিল লী কুয়ানকে আলী কোপান বানিয়ে মামলা করে বেশকিছু হাতিয়ে নিয়েছে নমিনেশনের লোভ দেখিয়ে। অবশ্য এ মামলা মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের অন্যান্য নেতাদের মাঝে মহামারীর মত ছড়িয়ে পরে কিনা তা দেখার জন্য আমাদের কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। জনাব নাঈমুল ইসলাম খানের টাউটারি বার্তার দিকে নিয়মিত নজর রাখার অন্য পাঠকদের অনুরোধ করবো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৩