আজকাল নেগেটিভ ভাবনা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা সবকিছুতেই নেগেটিভ ভাবতে পছন্দ করি। দোষ আমাদের নয়। চারিদিকে যা ঘটছে, রটছে, লেখালেখি হচ্ছে তা আমাদের মাঝে মাঝে যেকোনো বিষয়ে নেগেটিভ হতে বাধ্য করে। আর এটা বোঝার জন্য সমাজবিজ্ঞানী হবার দরকার নাই।মানুষ যে চাঁদে পা দিয়েছে এ নিয়েও অনেকেই নেগেটিভ ভাবে বলে - না, মানুষ চাঁদে যায়নি। সব অভিনয়। ফেসবুকেও বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞান বিশারদ ( নিজেকে জাহির করা বিশিষ্ট বিজ্ঞান গবেষক ) এসব প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। ঠিক তেমনি এখন তাই মধ্য আয়ের পথে বাংলাদেশ বললে অনেকেই আঁৎকে উঠেন। মানে কিছুটা চাঁদের দেশে যাবার মত বিষয় আরকি। ভাবেন না, এ হতেই পারে না। মানে তাদের অনেকের কাছেই বাংলাদেশ মানেই ভুখানাঙারা মিছিল করছে হাতে পাতে থালি নিয়ে বসে আছে। আর সেই সুখে তারা বগল বাজিয়ে ফেসবুকে ব্লগে দেশ ডুবে গেল মরে গেল স্টাটাস দিব দিব করছে; এই মতলব আরকি! তারা ভাবতেই চান না যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই বিভীষিকাময় দুঃসময় পেরিয়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতির পথে। মার্কিনমুলুকের সাবেক নিরাপত্তা বিশারদ হেনরী কিসিঞ্জারের "তলাবিহীন ঝুড়ি ত্বত্ত্ব" ভেঙে বাংলাদেশ এখন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি সাহেবের নতুন এশিয়ান টাইগার। এসব কথা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক হবে জানি তবুও বলব আমরা এগিয়েছি।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ। এদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় ১৬০২ মার্কিন ডলার যা ১৯৭১ সালে ছিল মাত্র ১৩৭ ডলার। অর্থাৎ প্রায় ১২-১৩ গুণ বেড়েছে। হয়ত আরো আমরা আরো সেটা বাড়াতে পারতাম। কিন্তু ঘৃনা, বিদ্বেষ, বিভেদ, ক্ষোভ, হতাশা, স্বার্থপরতা, আত্নকেন্দ্রিকতায় বেশিরভাগ মানুষ মগ্ন। নিজেদের মধ্যে হানাহানি করা, নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করাই যেন মুখ্য বিষয়। এভাবে কতটুকুই বা আমরা নিজেদের দোষমুক্ত বলতে পারি। দেশের সমস্যাগুলো আমরা যত বলি বা ভাবি তার এক শতাংশ যদি নিজেরা কাজে করিয়ে দেখাতাম তবে আজকে হয়ত আমরা অর্থনৈতিক, সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আর বহুদূর এগিয়ে যেতে পারতাম। দেশের মেহনতি মানুষ যার বেশির ভাগ অশিক্ষিত স্বল্প শিক্ষিত যাদের অবদানে যেই অর্থনীতির চাকা ঘুরছে তাদেরকে আর আমরা আর কত হতাশ করব!
মনে পড়ে না শেষ কবে একটি হানাহানি সংবাদ মুক্ত প্রথম বা শেষ পাতা পত্রিকায় পড়েছিলাম। শেষ কবে ভাল কিছু মানুষের লেখায়, কলামে কিছু পেয়েছিলাম। অথচ অনেক ভাল কিছুই দেশে হয়েছে। সব সরকারের সময়ই কম বেশি হয়েছে। কিন্তু আমরা সেগুলো আলোচনাই করিনি। চোখে পড়লেও বিশ্বাস করতে চাইনি। যেমন ওয়াটার হাউস কুপার্সের রিপোর্টে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্ব ৩১ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ আর ২০৫০ সালে হবে ২৩ তম । আই আর আই রিপোর্টে বলা হয় সঠিক পথেই দেশ এগিয়ে চলছে। এমন অনেক কিছুই ছিল যা কেউ দেখেনি বা দেখেও এসব রিপোর্টের কথা বলে নি, পাত্তা দিতে চায় নি। অথচ এগুলো গুরুত্ববহ। পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কথায় আমরা নেচেছি কিন্তু কানাডার আদালত বিশ্বব্যাংক ও পদ্মাসেতু নিয়ে কি বলল তা দেখেও দেখিই নি। আবার সেই বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের দারিদ্র্যসূচক ও এফডিএই নিয়ে কি বলল সেটাও রইল হিসেবের বাইরে। তবে আমরা কিন্তু টি আই রিপোর্টে প্রতিবছর চোখ রাখি। এবারো হয়ত অনেকেই রেখেছিলেন, হতাশ তাই আর কিছু বলেনি।
যাকগে, আমি কিন্তু সবার কথা বলছি না। আমি বলছি যারা বাংলাদেশের নেগেটিভ ঘটনাগুলো খুঁজে খুঁজে বের করেন, হাইলাইট করেন, তারা কি আমাদের পজেটিভ কিছু দেখাবেন না? নাকি দেশে পজেটিভ কিছুই হয়নি? সব কি খুঁড়ে খুঁড়ে আমাদের বের করে আনতে বলছেন? একপেশে নেগেটিভ অনেক হল সাম পজেটিভ প্লিজ!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫৪