মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন-Earth provide many things to satisfy every human's need; not every human's greed. কথাটি আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। কেন করি তার বিষদ কিছু বলব না। শুধু অল্প ভাষায় বলি আমাদের লোভ ক্রমশ আমাদের পরিবেশকে দূষিত করে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে অনবরত। মূলত ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এই ভাবনাগুলো সাম্প্রতিকতম কিছু বিষয়ে যা আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই গুরুত্ববহ! এরমধ্যে একটি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আরেকটি বিশ্ব পরিবেশ পরিস্থিতির।
এক
আমরা সবাই এটা মানি যে এই বিশ্ব আমাদের জননী। পরম যতনে পল্লব ছায়ায় ঘেরা সবুজের শীতল অনিল মনে ও প্রানে যে তৃপ্তি আনে তার তুলনা হয়না। বৈশাখের তপ্ত দ্বিপ্রহরের কাকফাটা রোদ্রস্নানে মলিন বদন জুড়িয়ে যায় কখনো শত সবুজে ঘেরা পুষ্করিণী, নদী, খাল বিল দর্শনে। জলে গা ভেজালে তো কথাই নেই। ছোটবেলার সেই দুরন্তর গ্রীষ্মককালের দিনগুলি শত স্মৃতির ঝাপি খুলে এমন কিছুক্ষণের আনন্দঘন স্বাদ এনে দেয় আমাদের সবারি। কিন্তু কথাটি আমার সেই স্মৃতি নিয়ে নয় বরং সেই স্মৃতি মুছে দেবার ভয়ংকরী পায়তারা নিয়ে। কিভাবে? ব্যাখ্যা করছি!
একটা সময় ছিল যখন পুকুরে, নদীতে, লেকে দলবেঁধে গোসলের মজা সবাই নিত। আর এখন কালেভদ্রে। বড়রা পানিতে হাতও দেই না।আর বাচ্চাদের তো পানি ছুতেও মানা। আজকাল লাইফবয় ঢিসুম ঢিসুম, ডেটলদের যুগ। কাদা পানিতে বাচ্চাকাচ্চা একটু হাত পা নাড়ালেই জ্বর, সর্দিকাশি। নিরুপায় মায়েদের দল তাই কিছুতেই বাচ্চাদের পানিতে ছাড়ছে না। যে বয়সে শরীরের যুদ্ধ করে ইমিউনিটি তৈরী হবার কথা সেটা হচ্ছে কই? গ্রামের ছোট ছোট ডোবা নালাগগুলোও হারিয়ে গেছে। সবকিছুই মানুষের গ্রাসে চলে গেছে তাই সেই পরিচিত খাল বিল গুলো আর নেই। বাচ্চাদের সাঁতার শেখার প্রাকৃতিক জলাশয় নেই। শহরের নদী বিষে ভরা, গ্রামের পুকুরে কৃত্রিম উপায়ে মাছ চাষ।শহরের সুইমিংপুলগুলোর তাই রমরমা অবস্থা। কিন্তু ক্লোরিন মেশানো এই কৃত্রিম পানিতে সেই প্রাকৃতিক ইমিউনিটি গড়ার সুযোগ আছে কি? তাছাড়া দুরন্ত শিশুদের পুকুরে জাপটাজাপটি, থইথই জলে হু-হুল্লোড় দেখে শিশুবেলার সেই দুরন্তপনার রোমন্থনের সুযোগই বা কই?
যাকগে, এই বিষয়টা বাদ দেই। জানি আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের লেখায় কিছু আসে যায় না। তবে বিভিন্ন পেয়ার রিভিউ জার্নালে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে শিশুদের ইমিউনিটি গড়ে ওঠার জন্য প্রাকৃতিক জীবানু জরুরী, জীবাণুনাশক নয়। আধুনিকতার বিপক্ষে আমি নই তবে আধুনিকতার নামে প্রকৃতির গলায় ছুড়ি চালানো সেটার পক্ষে যাই কি করে? আজকাল আশেপাশে যত নদী, খালবিল ধ্বংস হয়েছে সবই আধুনিকতার দোহাই দিয়ে। এই পথে নিজেদের অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্পদ উজাড় করে আমরা কারা যারা আজ সম্পদের পাহাড় গড়ে চলেছি?
দুই
তবে আমি অবাক হয়েছি এটা ভেবে যে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত রাষ্ট্রটির রাষ্ট্রপ্রধান কতই না বোকা। তিনি ভাবছেন কোন দেশের কোন অজপাড়া গ্রামে ইটভাটা হল আর কোন পচা দেশের অখ্যাত শহরের নদী মরে গেল তাতে আমার কি? আমার বেলকনি জুড়ে কত বাতাস! সুবিশাল টাওয়ার্স! আহ! অজস্র প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাদি আর ভরপুর আয়োজন। আরে মশাই দাঁড়ান! চারিদিকে বিষিয়ে দিয়ে কিসের আনন্দবাজার খুলেছেন? ভেবে দেখুনতো সেই বিষাক্ত বায়ুতে আপনার ফুসফুস তাড়িত হয়েছে কিনা? আপনার দেশে প্রতিবছর দুই লক্ষ মানুষ বায়ুদূষণে প্রাণ হারায়। আর আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্রীনহাউস ইফেক্ট। তাতে বিশ্বের ওজোনস্তরের যে ক্ষয় হতে হতে যত ফুটো তার সবচেয়ে বড় ফুটোটা আপনার দেশের আকাশে। সেটার উপর প্রলেপ না দিয়ে আপনি সেটা আরো বড় করছেন কিংবা বড় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, ভারত, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা সহ সবগুলো পরিবেশ দূষণককারী দেশ এই বিষয়ে একমত হল। জনাব ট্রাম্প, ১৯৫ টি দেশ যে বিষয়ে এক হল, একটি স্বপ্নে তাড়িত হল আপনি স্রেফ তাকে উড়িয়ে দিয়ে কোন সুখবায়ু গ্রহন করবেন? আমার দেশের সবুজ গ্রামে বিষাক্ত বাতাস ঢুকিয়ে আপনার গ্রেট আমেরিকায় আপনি কি নিরাপদ থাকতে পারবেন, আপনার জনগনকে নিরাপদ রাখতে পারবেন?
জার্মান প্রধান এঞ্জেলা মার্কেল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কি বলেছেন শুনুন। বিশ্বের স্বার্থকে অবহেলা অবাঞ্ছিত করে কিছুতেই এগিয়ে যাওয়া যায় না। যদি যেত তবে হিটলার মুসোলিনীরা হেরে যেত না। মিঃ টার্মিনেটর আর্নল্ড শোয়ার্জেননিগার আপনাকে খুব সুন্দর একটি মেসেজ দিয়েছেন সেটিও দেখুন। নিজের দেশের স্বার্থ উদ্ধার করার আগে নিজের দেশের মানুষের কথা বুঝতে শিখুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:৫৯