আমি সোনা মিয়া। আপনারা তো আমাকে চিনেনই। না চিনলেও সমস্যা নাই। নিচে আমার ছবি দিতেছি, দেখলেই চিনতে পারবেন। ছবিতে দেখে নিন।
আমার বাংলা নাম সোনা বা স্বর্ণ, ইংরেজী নাম Gold, ল্যাটিন নাম Aurum। আমাকে রসায়নবিদরা সংক্ষেপে ডাকে Au নামে। আমার পারমানবিক নাম্বার ৭৯। পর্যায় সারণীতে আমার অবস্থান গ্রুপ-১১, ব্লক-ডি, পিরিয়ড-৬ এ। আমাকে সবচেয়ে বেশি চিনে এবং ভালোবাসে মেয়েরা। তারা যে আমাকে নিয়ে কত কি করে, কোথায় কোথায় পরে!! তা দেখুন এই ছবিতে।
আমাকে জমা করে অনেকে নিজেকে খুব ধনী বলে জাহির করে আবার অনেকে বিপদেও পড়ে। আমাকে নিয়ে ধনীদের সাধ-আহলাদ দেখুন এই ছবিতে।
বিশ্বের সব দেশেই আমি সমাদৃত। সব দেশেই আমার প্রবেশাধিকার আছে শুধুমাত্র বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি ক্ষুদ্র দেশে এবং ভারত নামক বৃহত দেশে আমাকে নিয়ন্ত্রিতভাবে ঢোকানো হয়



আমি কোথায় থাকি: এই যে একটা ছবি দিলাম, দেখেন একজনে আমাকে খনি থেকে তুলতেছে। এইটাই আমার আদি বাস-স্থান।
কেন বলা হয় চোরা চালান এবং কেন করা হয় চোরাচালানীঃ- বাংলাদেশে সোনা ঢুকানোর




আমি ভিটামিন সি সিংগাপুর থেকে সোনার গয়না চোরা বা বৈধ চালানটা যতদুর দেখেছি তা এই ভাবেঃ- এখানে একটি বাংলাদেশী শপ আছে (মালিকরে বাড়ি কুমিল্লায়) যেটাতে অন্যান্য শপের চেয়ে (যেমন মোস্তফা, হানিফা বা লিটল ইন্ডিয়ার বিভিন্ন শপ) কম দামে সোনার গয়না পাওয়া যায়। অন্যান্য শপে ক্রয়মুল্যের উপর ৭% ট্যাক্স দিতে হয় (সিংগাপুরে টয়লেট করা ছাড়া আর সবকিছুতেই নগদ ৭% ট্যাক্স দিতে হয়), মেকিং চার্জ দিতে হয়, কিন্তু এই বাংগালী ব্যবসায়ীর দোকানে তা দিতে হয় না। কারণ তিনি সোনা বিক্রির কোন রশিদ-ই প্রিন্ট করেন না (বাংগালীর মাথা বলে কথা), প্রিন্ট করলে অনলাইন ইআরপি-সিস্টেমের কারণে গর্ভঃ জেনে যাবে যে তিনি এই পরিমান সোনা এই দামে বিক্রি করেছেন, তার এত পরিমান ট্যাক্স হয়েছে। তো যা বলছিলাম, এই দোকান থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোগী বা ব্যাবসায়ীরা সোনা কিনে থাকেন। তারা আগে একজন প্রবাসী শ্রমিক ঠিক করেন যে দেশে যাবে। (সারাদিনে সিংগাপুর থেকে ৬টি ফ্লাইট যায় বাংলাদেশে, তাই ক্যারিয়ারের অভাব হয় না) তার সাথে কন্টাক্ট করেন যে এই শ্রমিক সিংগাপুর চ্যাঙ্গি এয়ারপোর্ট থেকে বাংলাদেশ জিয়া আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর পার করে দিবেন। একজন মানুষ ১০০ গ্রাম ক্যারি করতে পারে এই সুবিধায়। বিনিময়ে ক্যারিয়ারকে ৫০ ডলার থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত পরবিহন বাবদ দেয়া হবে (যাকে যত দিয়ে ম্যানেজ করা যায়)। সেই ক্যারিয়ার এয়ারপোর্ট এর গ্রীন চ্যানেল পার করে, একেবারে এয়ারপোর্টের বাইরে অপেক্ষারত ক্ষৃদ্র ব্যবসায়ীর এজেন্টের হাতে তুলে দিবে। এজেন্ট এটা নিয়ে রাতেই রওনা দিবে মার্কেটে বা তার এলাকায়। পরদিন বিক্রি করে দেবে আগে থেকে ঠিক করা কোন বড় জুয়েলারী শপে। বড় জুয়েলারী শপের ওনাররা প্রবাসে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে আগেই অর্ডার দিবে এই এই মডেল, যেটার ওজন এত গ্রামের বেশী হইবে না। একজন ব্যবসায়ী আছেন যিনি একজন লোক রেখে দিয়েছেন এয়ারপোর্টে সে বিমানের ফ্লাইট, রিজেন্টের ফ্লাইট আর টাইগারের ফ্লাইটের যাত্রীদের এয়ারপোর্টে বুক করে ১০০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে দেন বিনিময়ে ১০০ ডলার হাতে দেন। তিনি প্রতিদিন ১ কেজির উপরে স্বর্ণ দেশে পাঠান।
লাভঃ আজকের রেট সেই দোকানে ৪৯ সিং ডলার / গ্রাম। তাহলে ১০০ গ্রামের দাম ৪,৯০০.০০ সিং ডলার। ক্যারি খরচ ১০০ ডলার। তাহলে মোট খরচ বাংলাদেশী টাকায় ৫,০০০*৫৫.৪০ = ২,৭৭,০০০.০০ টাকা (৫৪.৪০ টাকা সিং ডলারের বিনিময় মূল্য আজকে অগ্রণী ব্যাংক সিংগাপুর শাখায়)। ১০০ গ্রাম = ৮.৫৭৬ ভরি। এক ভরির দাম (জুয়েলারীতে বিক্রয়মুল্য) ৩৬,৫০০.০০ টাকা। তাহলে ৮.৫৭৬ ভরিতে বিক্রি = ৩৬,৫০০.০০ গুন ৮.৫৭৬ টাকা = ৩,১৩,০৩৬.০০। নীট লাভ = ৩,১৩,০৩৬.০০ - ২,৭৭,০০০.০০ = ৩৬,০৩৬.০০ টাকা
আচ্ছা, যদি এই ১০০ গ্রাম স্বর্ণ বাংলাদেশের প্রচলিত ২২ ক্যারেটের দামে বিক্রি করা হয় তাহলে ১০০ গ্রামে কত টাকা লাভ হয়?? লাভ হয় ৮০,৮৩৩.০০ টাকা। এক চালানে। তাহলে কেন মানুষ সোনা চোরাচালানী করবে না? ভাবছেন সোনা কেনার জন্য এত ডলার কোথায় পায়? সেটা লিখলে আরেটা পোষ্ট হয়ে যাবে। শুধু জেনে রাখুন হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেয় বা সোনা কারবারী নিজেই হুন্ডি ব্যবসায়ী বা বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে পরে দেশে টাকা দিয়ে দেয়, ফোরম্যান বা সুপারভাইজার জাতীয় প্রাণীরা তার অধীনস্তদের কাছ থেকে চাপ দিয়ে ডলার নেয় কম দামে (ডলার না দিলে ফোরম্যান/সুপারভাইজার ওয়ার্কারকে ওভারটাইম ডিউটি দেয় না)।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:১৭