somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যখন বিষণ্ণ “মা”; সন্তানের যাচিত নরকবাস!

১১ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সারা জীবনের যত খাটা খাটুনি; তা তো একটু সচ্ছলতা, একটু সুখেরই আশায়। এই যে দিনে দিনে আমরা এক একটি যন্ত্র মানব হয়ে উঠছি তা তো একটুকু নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা বিধানের নিমিত্তেই।
এই সুখ -সমৃদ্ধির সাথে যদি শান্তির সমন্বয় না ঘটে তাহলে এর সবই কি এক সময় মূল্যহীন মনে হবে না? অথচ মানুষের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন যতটা কষ্ট সাধ্য ঠিক ততটাই সহজ সাধ্য শান্তি অর্জন।
প্রয়োজন একটু ছাড় দেয়ার মানসিকতা। বড় লাভের জন্যে সামান্য ত্যাগ স্বিকার। কথাটি এ জন্য বলছি; আজ আমরা যারা লাগামহীন ভোগের জীবনে প্রবেশ করেছি তারা অনেক কিছু অর্জনে সক্ষম হলেও একই সাথে অশান্তির দাবানলেও নিত্য দগ্ধ হচ্ছি। যার স্রষ্টাও আমরাই।


আজ আমরা নিজেদের জন্যে এমনই এক জগত গড়ে নিয়েছি যেখানে আমি-তুমির বাইরে কেউ নেই। যেখানে সকলের মাঝে থেকেও প্রত্যেকেই পরবাসী।
আমরা ভুলেই গিয়েছি হাসি-ঠাট্টা-আনন্দ । হাসব বলে এখন আমাদের হাসির ক্লাবের সদস্য হতে হয়! মনে পড়েনা শেষ কবে গলা ছেড়ে দু লাইন বেসুরো গেয়েছিলাম।


মানুষ যন্ত্র তো নয়। তবু ঠিক দম দেয়া ঘড়ির মতই অনবরত ছুটে চলেছি। কোথা শান্তি? কার কাছে? আমরা জানিই না। অবশেষে ঘুমের বড়ি কিংবা মাদকের কাছে করি শান্তির নিষ্ফল অন্বেষণ। আর এই শান্তির অন্বেষণে গিয়ে পড়ে যাচ্ছি আরও বড় অশান্তির ফাঁদে; টেরই পাচ্ছি না।


আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত থামছি না যতক্ষণ না দেহ ঘড়িটি হয়ে পড়ছে বিকল। যখন সেটা বিকল হয়ে পড়ছে; শুশ্রূষার জন্য ছুটে যাই স্বাস্থ্য সেবা কিনতে। টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছি পথ্য-সেবা। শরীরটা হয়ত ঠিকই সুস্থ হয়ে উঠে। মনের অসুখটা সারে কই?


অসুস্থ আমার মাথাটি কোলে তুলে নেয় না যে আর নারী ছেড়া মমতাময়ী “মা” কিংবা তাল শাঁস এর মত শক্ত খোলসে আটা সদা সিক্ত মনের যে বাবা। কি করে নেবেন তাদেরকে তো অনেক আগেই করেছি ত্যাজ্য। তাদের রেখে এসেছি গ্রামে অথবা বৃদ্ধাশ্রমে। কাজেই সহজে সহজ হতে না পারা গুরু গম্ভীর বাবার দুষ্প্রাপ্য সেই স্নেহাস্পর্শ আর জোটে না এখন। অথচ শান্তির সহস্র প্রস্রবন সেখানেই সদা বহমান।


মমতাময়ী সেই “মা” আর জীবনের সুবটুকু স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করা বাবাকে আজ আমরা অনায়াসেই ফেলে রাখি দুরে। আমরা সবাই ব্যস্ত আপন আপন প্রয়োজনে। মা-বাবার খোজ নেয়ার সময়টুকুও আজ আর হয়ে ওঠে না। যাও বা দু’একজন বিবেকবান(!) তাদের কখনো সখনো খোজ নেয়ার চেষ্টা করেন তাও যেন প্রাণহীন; লৌকিকতার মাঝেই সীমাবদ্ধ।


প্রাণের স্বজনকে নির্বাসন দিতে গিয়ে আসলে আজ আমরা নিজেরাই করি নির্বাসিত জীবন যাপন। জন্মদাত্রী মা'র নিজের স্বামীর তৈরি আলি শান বাড়িতে ঠাই হয়নি। একদা যিনি বাড়ির রাজরানী আজ সেখানে তিনি বড় বেশি অপাংক্তেয়। সেখানে তার জোটেনা এতটুকু আশ্রয় পর্যন্ত। আমি তার ধন্যি ছেলে সন্দেহ কি!


স্ত্রীর সাথে মায়ের মন মালিন্য, সংসারের নিত্য অশান্তি। এটা মেনে নেয়া যায় না তার চেয়ে বরং এই ভাল, “মা” তুমি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে থাক। তোমার বৌমা বলে, সেখানে নাকি এত ভাল ব্যবস্থা যে মাঝে মাঝে তার নিজেরই গিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে! (যদিও নিজের মাকে যেন ভাইয়ের বৌ সেখানে না পাঠাতে পারে সে জন্য সে সর্বদাই সচেতন)।
"মা" মুখ ফুটে বলতে পারেন না, তাহলে সেখানে গিয়ে তাকেই থাকতে বল। এ বাড়ী আমার স্বামীর। এ সন্তান আমার নাড়ী ছেড়া ধন। আমার রক্ত জল করা পরিশ্রমে তার বেড়ে ওঠা।
সর্বংসহা মা” মুখ ফুটে বলতে পারেন না কিছুই। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ তার অশ্রু ফোটা হয়ে ঝরে। এক জানে সে, আর বিধাতা। আল্লাহর আরশ ওঠে কেপে। সন্তানের মন হয় না সিক্ত।


অপদার্থ আমি, না পারি নিজেকে দিতে ধিক্কার। না স্ত্রীকে শাসাতে। মা চলে যান বৃদ্ধাশ্রমে। পেছনে ফেলে যান জীবনের সকল সম্বল। এমনকি নাড়ী ছেড়া ধনটি পর্যন্ত। তারে এমন নিঃস্ব করে আমি বিলাস ব্যসনে গা ভাষাই। মখমলের চাদর আর পালক নরম দুগ্ধ ফেননিভ বিছানায় শুই ঠিকই তবে রাতটা কাটে নির্ঘুম। ওটাই আমার প্রাপ্য, শান্তি পরবাসী হতে বাধ্য।
বাবা তার সারা জীবনের তপস্যায় কর্মক্ষম করে তুলেছেন ঠিকই মানুষ তো করতে পারেননি। আজ তাই আমাদের এই অমানুষের মহড়া দেয়া।
আজ আমরা “মা” দিবসে পরবাসী “মা” কে শুভেচ্ছা জানাতে যাই, বাবা দিবসে বাবাকে। সারা দিন হৈ হুল্লোড় করে মা-বাবার মনের দগদগে ঘাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে করি রক্তাক্ত। পরিশেষে বিষণ্ণ জনক-জননীকে ফেলে রেখে আমরা ফিরে আসি আমাদেরই সযত্নে তৈরি নরককুণ্ডে।
বিধাতা, ক্ষমা নয় উপযুক্ত শাস্তি চাই আজ নিজেই। এরপরেও মা-বাবা তো আর অভিশাপ দেবেনা। সে সাধ্য তাদের নেই। সন্তানের মঙ্গল কামনাই যে তাদের একমাত্র কাজ। নিজেকে অভিশাপ তাই আজ নিজেই দেই। হে মহান! তুমি যেন করোনা ক্ষমা কিছুতেই।


[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমেরিকানরা ভীষণ কনজারভেটিভ

লিখেছেন মুনতাসির, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২৬

আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই—এটা প্রথমেই বলে ফেলা ভালো। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমেরিকা তথা উত্তর আমেরিকাতে আমার যাওয়া হয়েছে বেশ কিছুবার। সবগুলো ভ্রমণ যোগ করলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×