অঙ্গীকার ভঙ্গকারীকে আল্লাহ কঠিন শাস্তি দেবেন । অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা মুমিনের অন্যতম গুণ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ প্রসঙ্গে অনেক গুরুত্ব বর্ণনা এসেছে। ‘প্রতিশ্রুতি’ বা অঙ্গীকার বলতে সেই অঙ্গীকার যা আল্লাহ ও বান্দাদের মধ্যে রয়েছে এবং সেই অঙ্গীকারও যা বান্দাগণ আপোসে একে অপরের সাথে করে থাকে। উভয় অঙ্গীকার পূরণ করা জরুরী। পক্ষান্তরে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে কাল কিয়ামতে জিজ্ঞাসিত হতে হবে এবং সে ব্যাপারে কৈফিয়ত দিতে হবে।
➡আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অবশ্যই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৩৪)
➡অন্যত্র মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ১)
➡আরও ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহর অঙ্গীকার পূরণ করো।’ (আল-আনআম, আয়াত: ১৫২)
➡মহান আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ করো। ’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৯১)।
➡“আর প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করবে।” [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৭৭]
মিথ্যা শপথের ভয়াভহতা
আল্লাহ্ বলেন ,
➡️ “নিশ্চয় যারা আল্লাহর অঙ্গীকার ও তাদের শপথের বিনিময়ে খরিদ করে তুচ্ছ মূল্য, পরকালে এদের জন্য কোন অংশ নেই। আর আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং কিয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকাবেন না, আর তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্যই রয়েছে মর্মন্তুদ আযাব। (আলে-ইমরান ৩:৭৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এক ব্যক্তি তার পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে দাঁড়িয়ে শপথ করে বলল, আল্লাহর শপথ! আমাকে এর চেয়ে বেশী মূল্য দিতে চেয়েছিল অথচ তা সত্য ছিল না, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন মুসলিমকে বিভ্রান্ত করে তার পণ্য গ্রহণ করতে উদ্ধৃদ্ধ করা। তখন এ আয়াত নাযিল হল। [বুখারীঃ ২০৮৮]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মম্ভদ শাস্তি।
➡ এক. কোন লোকের অতিরিক্ত পানি থাকা সত্বেও কোন মুসাফিরকে দিতে নিষেধ করেছে।
➡ দুই. কোন লোক রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে কেবলমাত্র দুনিয়ালাভের জন্যই আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছে। ফলে তাকে দুনিয়ার কোন সম্পদ দেয়া হলে সে সন্তুষ্ট থাকে, না দেয়া হলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
➡তিন. ঐ ব্যক্তি যে তার পণ্য বিক্রির জন্য বিছিয়ে নিয়েছে, তারপর বলতে থাকে যে, আল্লাহর শপথ আমাকে (পূর্বে) এ পণ্যের জন্য এত এত দেয়ার কথা বলেছে (অর্থাৎ লোকেরা এর দাম এত এত বলেছে)। আর এটা শুনে কোন লোক তাকে সত্যবাদী মনে করে নিয়েছে (এবং তা ক্রয় করে নিয়েছে)। তারপর তিনি আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [বুখারী ২৩৫৮; মুসলিম: ১০৮]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কেউ যদি জেনে-বুঝে কোন মুসলিমের সম্পদ কুক্ষিগত করার মানসে মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহর সাথে ক্রোধান্বিত অবস্থায় সাক্ষাত করবে।” তখন আল্লাহ তার নবীর সত্যায়নের জন্য উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। [বুখারী ৪৫৪৯, ৪৫৫০; মুসলিম: ১৩৩৮]
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দু পক্ষের মধ্যে যা সাব্যস্ত হয় এবং যা পূর্ণ করা উভয় পক্ষের জন্য জরুরী, এমন বিষয়কে অঙ্গীকার বলা হয়। ওয়াদা শুধু এক পক্ষ থেকে হয়।
উপরোল্লেখিত আয়াতে অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে পাঁচটি সতর্ক বাণী উচ্চারিত হয়েছেঃ
(এক) পরকালে জান্নাতের নেয়ামতসমূহে তার কোন অংশ নেই।
(দুই) পরকালে আর আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না।
(তিন) এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবেন না।
(চার) আল্লাহ্ তা'আলা তার পাপ মার্জনা করবেন না। কেননা, অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে বান্দার হক নষ্ট হয়েছে। বান্দার হক নষ্ট করলে আল্লাহ মার্জনা করেন না।
(পাঁচ) তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া হবে।
এমন সব বিষয় নিয়ে এই বইটি লিখা হয়েছে ।
চাইলে বইটি সংগ্রহ করতে পাড়েন রকমারি ডট কম থেকে
https://www.rokomari.com/book/235752/atmasuddhi?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২২ রাত ৮:২০