সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও উন্নত জীবনের পথ দেখায় কুরআন। মানুষের কথা বলা থেকে শুরু করে চলাফেরা, দেখাশোনা, খাওয়া-দাওয়া কোনো কিছুই বাদ যায়নি। সবই আলোচিত হয়েছে কুরআনে। প্রয়োজন শুধু তা পড়ে দেখার এবং বুঝে আমল করার। তবেই উন্নততর হবে মানুষের জীবনমান। মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ কুরআনের উপদেশগুলো হলো-
কথা বলার আওয়াজ
➡️ 'আর কণ্ঠ স্বর নিচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।' (সুরা লোকমান : আয়াত ১৯)
কথা বলার ধরন
কুরআন অনুসারে আচরণবিধি অন্নের সাথে কথা বলার সময়
# মন্দের জবাবে তাই বলুন যা উত্তম (২৩/৯৬)
# ভালো মন্দ সমান হতে পারে না। প্রতিহত করো তাই দিয়ে যা উত্তম। ফলে, তোমার মধ্যে ও তার মধ্যে শত্রুতা থাকলেও, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু (হয়ে যায়) (41/34)
# তোমার রবের পথের দিকে আহবান করো প্রজ্ঞা এবং সর্বোত্তম উপদেশের সাথে আর যুক্তি পেশ করো (বিতর্ক কারো) সর্বোত্তমভাবে (16/125, 29/46)
# (ফিরাউনের মত সর্বোচ্চ খোদাদ্রোহীর সাথেও) "তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে, অথবা ভয় করবে" (20/44)
"যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে তার নিকটে একজন সদা তৎপর প্রহরী আছে।"(50/18)
অতএব-
গালি-গালাজ করা যাবে না (৩৩/৫৮)
নম্র ভাষায় কথা বলতে হবে (১৭/৫৩)
ভদ্রভাবে কথা বলতে হবে (২০/৪৪)
সভ্যভাবে কথা বলতে হবে (১৭/২৩)
সর্বদা সত্য কথা বলতে হবে (সূরা নং-৩ আয়াত-৭)
স্পষ্টভাষী হতে হবে (৩৩/৭০)
ন্যায় কথা বলতে হবে (৬/১৫২)
মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলতে হবে (২/৮৩)
যুক্তিসংগত কথা বলতে হবে (১৭/২৮)
অনর্থক কথা থেকে বিরত থাকতে হবে (২৩/৩)
মিথ্যা কথা বর্জন করতে হবে (২২/৩০)
পশ্চাতে গোপন দোষ-ত্রুটি খোঁজ করা ও গীবত পরিহার করতে হবে (৪৯/১২)
প্রমাণবিহীন কোন কথা বলা যাবে না (২/১১১)
➡️ 'মানুষের সঙ্গে সুন্দর ও উত্তম তথা প্রাঞ্জল ভাষায় কথা বল।' (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৩)
➡️ 'যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, সে সম্পর্কে কথা না বলা অর্থাৎ জ্ঞানহীন অসাড় কথা না বলা।' (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৩৬)
কুরআনের যত স্থানেই কথা বলার বর্ণনা এসেছে, সব স্থানেই সঙ্গত ন্যায় কথা বলার কথা বলা হয়েছে।
চলাফেরা
➡️ পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ-পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।' (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৩৭)
দৃষ্টি
➡️ "আপনি চক্ষু তুলে ঐ বস্তুর প্রতি দেখবেন না, যা আমি তাদের মধ্যে কয়েক প্রকার লোককে ভোগ করার জন্যে দিয়েছি, তাদের জন্যে চিন্তিত হবেন না আর ঈমানদারদের জন্যে স্বীয় বাহু নত করুন।"
(QS. Al-Hijr 15: Verse 88)
➡️ "মু’মিনদের বল তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র, তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে আল্লাহ খুব ভালভাবেই অবগত।"(QS. An-Nur 24: Verse 30)
সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা
➡️ 'যদি মুমিনদের দুই দল লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে। অতপর যদি তাদের একদল অপর দলের ওপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে লড়াই করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন।' (সুরা হুজুরাত : আয়াত ৯)
➡️ 'মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই জালেম।' (সুরা হুজুরাত : আয়াত ১১)
➡️ - হিংসা বিদ্বেষ, ধারণা ও পরনিন্দা না করা
'মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। আর গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়াকে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।' (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)
কুরআনের এ সুন্দর গুণগুলো মানুষের জীবনে বাস্তবায়িত হলে হিংসা ও ঘৃণামুক্ত সুন্দর সমাজ তৈরি হতো। প্রতিটি পরিবার কুরআনের সৌন্দর্য রঙ ছিটিয়ে জীবন ও জগৎকে সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে দিতো।
এমন সব বিষয় নিয়ে এই বইটি লিখা হয়েছে ।
চাইলে বইটি সংগ্রহ করতে পাড়েন রকমারি ডট কম থেকে
https://www.rokomari.com/book/235752/atmasuddhi?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২২ রাত ১১:১৭