তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন এবং তিনি তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। আর তার চোখের উপর স্থাপন করেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পর কে তাকে হিদায়াত করবে? তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?(সূরা জাসিয়া : আয়াত ২৩)।
এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশির অনুসরণ অন্তরের উপর সীলমোহরের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারপর এই সীল মোহরের প্রভাব ও ছাপ অন্তরের পর্দায় অবরণ তৈরি করতে থাকে এবং পরিণামে তা শরীরের সকল অংশে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন: আল্লাহ তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর করে দিয়েছেন, এবং তার চক্ষুর উপর রেখেছেন আবরণ।
আরবী হাওয়া (الهوى) অর্থ ‘প্রবৃত্তি’, ‘মন-মর্জি’ বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ। অন্তরের ব্যাধিসমূহের অন্যতম ‘প্রবৃত্তি’ বা নিজের পছন্দ-অপছন্দের অনুসরণ ও আনুগত্য। ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পন করা। তবে নিজের ইচ্ছামত নয়
আল্লাহর নির্দেশের কাছে আত্মসমর্পন করাই ইসলাম। ব্যক্তিগত পছন্দ বা প্রবৃত্তির অনুসরণের অর্থ বিশ্বাস বা কর্মের ক্ষেত্রে আল্লাহর কোনো নির্দেশ অবগত হওয়ার পরে কোনো যুক্তি, তর্ক বা অন্য কোনো অজুহাতে তা পরিত্যাগ করা বা ব্যাখ্যা করে উড়িয়ে দেওয়া।
আল্লাহর কোনো নির্দেশ নিজের বা সমাজের প্রচলিত কর্মের বিপরীত হয়, তবে নিজের রুচি ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ পরিবর্তন করে আল্লাহর নির্দেশের অনুগত করতে হবে।
বিভিন্ন অজুহাতে কোনো যুক্তি, তর্ক বা ব্যাখ্যা করে পরিত্যাগের প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে।
➡আল্লাহ বলেন: “আপনি কি তাকে দেখেছেন যে তার নিজের পছন্দ অপছন্দ বা নিজের নফসের খাহেশাত কে নিজের মা’বুদ বানিয়ে নিয়েছে? আপনি কি তার উকিল হবেন?”সূরা ফুরকান, ৪৩ আয়াত।
যা তাদের মনে ভালো লাগে, তাকেই তারা নিজেদের ধর্ম ও মযহাব বানিয়ে নেয়। তুমি কি এসব লোকদেরকে পথ দেখাতে পারবে? অথবা তাদেরকে আল্লাহর আযাব হতে বাঁচাতে পারবে?
➡ তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত করেন না।সূরা আল-কাসাস, ৫০ আয়াত।
প্রাত্যহিক জীবনে অনেক কিছুই ঘটে। যেখানে আমরা মনকে প্রাধান্য দেই।
এ সব আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ কাফেরদের প্রবৃত্তির কথা বলেছেন অর্থাৎ যারা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করে। তাদের প্রবৃত্তি তো শয়তানের অনুসরণেই পরিচালিত হয়। সুতরাং তাদের অনুসরণ অর্থই হলো শয়তানের অনুসরণ করা।
প্রবৃত্তির বিরোধিতার উপকার
প্রবৃত্তির বিরোধিতা করতে পারলেই মানুষ হয়ে যাবে মুমিন। আর তখন সে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুমের সামনে নিজেকে অবনত করতে পারবে আর সে হয়ে যাবে জান্নাতের অধিবাসী।
যেমনটি আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।’ ( সূরা নাজিয়াত, আয়াত ৪০-৪১)।
এক. রবের সামনে হাজির হয়ে হিসাব নিকাশের সম্মুখীন হতে হবে- এ বিশ্বাস করে প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে যে নিজেকে হেফাযত করেছে তার জন্য রয়েছে জান্নাত।
দুই. রবের যে সুমহান মর্যাদা তাঁর এ উচ্চ মর্তবার কথা স্মরণ করে অন্যায় অশ্লিল কাজ এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থেকেছে সে জান্নাতে যাবে। উভয় অর্থই এখানে সঠিক।
প্রবৃত্তি হলো মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে প্রবৃত্তি তাকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে দেয়।
এমন সব বিষয় নিয়ে এই বইটি লিখা হয়েছে ।
চাইলে বইটি সংগ্রহ করতে পাড়েন রকমারি ডট কম থেকে
https://www.rokomari.com/book/235752/atmasuddhi?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২২ রাত ৮:৫৬