somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন করে পুরানো প্যাচাল

১২ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিতুমীর বোধ হয় ওপরে বসে বসে আমাদের বীর পুলিশ লাঠিয়াল বাহিনীকে দেখছেন আর আফসোস করছেন, কেন যে এই বীরেরা তাঁর আমলে জন্ম নেয় নি! আপনি যদি পুলিশ না হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় তিতুমীরের কথা মনে আছে। পুলিশ হলে মনে রাখার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ অতীতকে ভুলে যাবার চমৎকার গুণ না থাকলে পুলিশ বাহিনীতে ত থাকাই যাবে না। অতীতকে ভুলে যাবার দক্ষতা না থাকলে, প্রাইমারী স্কুলের গরীব-ছাপোষা-নিরীহ শিক্ষকদের পেটাতে গিয়ে আপনার মনে পড়ে যেতে পারে, শৈশবে এমনি এক শিক্ষকের অবদানেই আপনার শিক্ষা জীবনের সূচনা যার ফলশ্রুতিতেই আপনি আজ পুলিশের চাকরিতে ঢুকে মনের আনন্দে গর্বিত ভঙ্গিতে যাকে তাকে যখন খুশি যেভাবে ইচ্ছে পেটাতে পারছেন।

শিক্ষার্থীদের উপর শিক্ষকদের বেত চালনায় যখন আইন করে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হল, তখন আমার এক স্যার খুব দুঃখ করে বলেছিলেন, আমাদের সমাজটা আরও রসাতলে যাবে। স্যারের বক্তব্য সেদিন বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখন খুব ভাল মতন বুঝেছি। আজ শিক্ষকের বেত নিষিদ্ধ হলেও পুলিশের লাঠি নিষিদ্ধ নয় বরং প্রসিদ্ধ। আজ যেদিকে তাকাই সেদিকেই পুলিশের বীরত্বগাথা, পুলিশের জয় জয়কার। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, কবে আমাদের পুলিশদের এই বীরত্বের জন্য সম্মাননা দেয়া হবে। ভেবে অবাক লাগে, কেন যে এখনও গিনেস বুকে আমাদের বীর পুলিশদের নাম ওঠে নি। কবে আসবে সে শুভদিন?

ভাবতে ভালই লাগে, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তাই আমাদের পুলিশ বাহিনী আজ আরও উন্নত কলেবরে। আপনাকে স্বীকার করতেই হবে, পুলিশ আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। তাই তাদের সম্মান দেখাতে আপনাকে অবশ্যই নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতেই হবে। নইলে বোকা সাংবাদিকদের মতই অবস্থা হবে আপনারও।

আমার নানাভাই অত্যন্ত প্রাচীন মানুষ। নানাভাইএর মুখে শুনেছিলাম, ব্রিটিশ আমলে উপমহাদেশীয় পুলিশ সদস্যদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত এবং বেতন বৈষম্যও ছিল ব্যাপক। তাই নাকি বাধ্য হয়েই উপমহাদেশের পুলিশরা উপরি (উৎকোচ) গ্রহণ করত আর উপমহাদেশীয় জনগণ ব্যাপারটাকে এতটাই স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছিল যে, কোন পুলিশ পাত্রের কাছে কন্যার বিয়ে দিতে চাইলে কন্যার পিতা পাত্রের বেতন জানার বদলে জানতে চাইতেন, উপরি কত।

ব্রিটিশরা চলে গেছে বহুকাল আগে। কিন্তু ধূর্ত ব্রিটিশরা চমৎকারভাবে আমাদের মেরুদণ্ডে ঘুণ ধরিয়ে দিয়ে গেছে। আমরা বাইরে থেকে কিছুই ঠাহর করতে পারিনি, অথচ ভেতরে ভেতরে আমাদের চরম সর্বনাশ ঘটে গেছে। তাই আজ আর আমাদের পুলিশ বাহিনী কেবলমাত্র উপরি গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট নয়। তারা আজ লাইসেন্সধারী লাঠিয়াল সন্ত্রাসী। আজ আর হয়ত পিতা কন্যাকে পাত্রস্থ করবার সময় পুলিশ পাত্রের কাছে শুধুমাত্র উপরি জানতে চেয়েই সন্তুষ্ট থাকবেন না বরং জানতে চাইবেন, তার লাঠির আঘাতে কতজন ওপরে চলে গেছে।

ব্রিটিশদের গড়ে দিয়ে যাওয়া মান্ধাতা পদ্ধতি চলতে থাকলে কিছুতেই আমাদের পুলিশ বাহিনীর যথাযথ উন্নয়ন সম্ভব নয়। আজ দরকার আধুনিক, সময়োপযোগী, বিজ্ঞানসম্মত সঠিক পদ্ধতির প্রণয়ন ও এর যথার্থ ব্যবহার যা আমাদের পুলিশ বাহিনীকে পরিণত করবে সৎ, দক্ষ, যোগ্য, সুসভ্য ও চৌকস একটি বাহিনীতে।

কেবলমাত্র ফেসবুকের পালোয়ান স্ট্যাটাস, ব্লগের সাহসী লেখনী, পত্রিকায় জ্ঞানগর্ভ কলাম, বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানববন্ধন কিংবা সমাবেশ আর “এদেশের কিচ্ছু হবে না”- এই মর্মে হা-হুতাশ করে লাভ নেই। প্রয়োজন সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই পুলিশ বাহিনীই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কতটা সক্রিয়ভাবে দেশরক্ষায় অবদান রেখেছিল, এই পুলিশ বাহিনীই বিশ্ব শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখতে কতটা সহযোগিতা করেছিল।
নিরাশ না হয়ে বরং এখন প্রয়োজন সবকিছু ঢেলে সাজাবার। জানি, এত সহজ নয় কাজটি। তবুও, চেষ্টা করতে দোষ কি? আমরা ত সেই জাতি যারা মাত্র নয় মাসেই দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছিল, আমরা চাইলে কী না করতে পারি।

এই লেখাটি যারা পড়ছেন, তাদের মধ্যে কি কেউ নেই যিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা একজন নীতি নির্ধারক, যার কাছে দেশের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার পথে সুযোগ্য নেতৃত্বের আশা করতে পারি, যেন আমাদের পুলিশ বাহিনীকে আমরা এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি যা আমাদের পুলিশ বাহিনীকে তথাকথিত নয় বরং সত্যিকার বীরত্বের সম্মাননা দিয়ে গর্বিত করবে?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৮:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×