তখনো সঞ্জীব চৌধুরীকে চিনিনা। অথচ শৈশবে তার একটা বিখ্যাত গান - আগুনের কথা বন্ধুকে বলি, দুহাতে আগুন তারো ....শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। আগুন নিয়ে অসংখ্য এরকম গান, প্রবাদ, সিনেমা আছে। আর পিরিতের আগুনে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন এমন লোকজন নেহায়েৎ কম নয় (আমি বাদে)। কি এই আগুন? আসুন জানি-
প্রাচীন গ্রীকদের ধারণা ছিল আগুন চারটি মৌলিক উপাদানের একটি যা দিয়ে জগতের সব কিছু গঠিত! গ্রীক পণ্ডিতদের কথা একেবারেই ঠিক না। আগুন কোন মৌলিক জিনিস নয়। আগুন যথেষ্ট জটিল। বাংলা সিনেমায় দেখেছি কিভাবে সংসারে আগুন লাগে বাস্তবের আগুন কিন্তু সংসারে আগুন লাগার মত না। এটি একটি চেইন রিয়াকশ্যান। কোন জ্বালানীতে একবার তাপ লাগলে চা চেইন আকারে সমস্ত জ্বালানীকে আগুনে রুপান্তরিত করে। বিজ্ঞানের ভাষায় আগুন লাগাকে বলা হয় দহন। তবে সব দহনেই আগুন ধরে যায়না। যেমন, আমাদের খাদ্য পাকস্থলিতে পৌছানোর পর হজম করার জন্য প্রচুর তাপের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আগুন ধরে যায়না।
আগুন পদার্থ নাকি শক্তি? এই ব্যাপারে অনেকেই তর্ক করেন। অনেকেই বলেন আগুন অপদার্থ (আমার মত) । কিন্তু আগুন যে পদার্থ এটা বোঝার সহজ উপায় আছে- আগুনের শিখা সবসময় বাতাসে নড়ে ওঠে। এর ভেতরে পদার্থ না থাকলে কখনোই ‘বল প্রয়োগে বাধা দান’ করতো না, অর্থাৎ জড়তা থাকতো না।
আগুনের শিখা সব সময় উপরের দিকে ওঠে। এর কারন, শিখার গ্যাস উত্তপ্ত হয়ে উপরের দিকে ওঠে এবং শিখার আশেপাশের ঠান্ডা গ্যাস এই শূন্যস্থান পূরন করে। আবার সেগুলো উপরে ঊঠে উত্তপ্ত হয়ে এবন আশপাশ থেকে আবারো ঠান্ডা বাতাস বা গ্যাস এসে এই স্থান দখল করে। ক্রমাগত এই প্রক্রিয়ার কারনে আগুনের শিখা সূচালো হয়ে উপরে ওঠে।
ছবিতে দেখানো (নাসার ওয়েবসাই থেকে পাওয়া ভিডীও এর স্নাপশট) শিখার এই আকৃতির পেছনে যেহেতু মাধ্যাকর্ষণের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি, তাই অবশ্যই মহাশূন্যে শিখার আকৃতি এরকম হবে না। নাসার গবেষণায় দেখা গেছে, International Space Station-এ Microgravity তে মোমবাতির শিখা ছোট গোলকে পরিণত হয়। আবার হেপ্টেনের শিখা-গোলক অদৃশ্য হয়ে ক্রমশ বড় হয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এখানে আগুনের রসায়নও পুরাপুরি আলাদা।
সবশেষে দারুন একটা ব্যাপার বলি। আপনার কাছে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি থাকা মানে আপনি প্রতি সেকেন্ডে ১৫ লক্ষ টি ন্যানো ডায়মন্ড উৎপন্ন করছেন! মোমের হাইডোকার্বন থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হবার আগ মূহুর্তে এই হীরাগুলো উৎপন্ন হয়। কিন্তু দুঃখের কথা হল এগুলো তৈরি হবার সাথে সাথেই আবার পড়ে বাতাসে মিলিয়ে যায়। নাহলে আমি এই পোষ্ট না লিখতে বসে এতক্ষনে কয়েক বিলিয়ন ডলার মুল্যের হীরের মালিক হয়ে যেতাম
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৬