আকাশ যেখানে গিয়ে মাটির সঙ্গে মিশেছে সেখানে কতগুলো পাখি ঝাক বেঁধে উড়ে যাচ্ছে। আজকের আকাশটা কাশ বনের মত সাদা আর ঝকঝকে। কয়েক পলক তাকালেই মন ভাল হয়ে যায়। যদিও মন আমার সকাল থেকেই ভাল। অনেকদিন পর আব্বা আম্মার সাথে সময় নিয়ে কথা বললাম। সবার খোজ খবর জানলাম। তাই মনটা প্রচন্ড ফুরফুরে। কেউ আমাকে যদি জিজ্ঞেস করে যে দেশে আসবে না? আমি সোজাসাপ্টা উত্তরে বলি, না আর কোনদিন দেশে আসব না। কেন? কেন এর উত্তর আমারও জানা নেই। তবু বলি, আমি দেশকে, আত্নীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী, গাছপালা, নদীনালা, ধানক্ষেত, মেঠো সরু পথ, আমের মুকুল, বকুল ফুল, সজনে ডাটা, চড়ুই পাখি, নিজের আদি বাসস্তান, ভাইবোন কাউকেই মিস করি না। কিন্তু আজকে আব্বা আম্মার সাথে কথা বলার পর বুঝতে পারলাম আসলে কতটা মিস করি। ফেলে আসা দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া নগন্য ঘটনাগুলো এখনো মনের কোঠরে সহি সালামতে আছে। প্রত্যেক শুক্রবারে আমাদের বাসায় এক ভিখারি আসত। আম্মা উনাকের জুমার নামাজের পর খাবার দিতেন। আমাদের পাকা উঠান। সেখানে পিড়িতে বসে উনি খেতেন আর আমি বসে থেকে শেষ অবধি দেখতাম। মুগ্ধ হয়েই দেখতাম। খাওয়া শেষ হলে তিনি সকলের জন্য মোনাজাত করতেন। সবচেয়ে বেশি করতেন আমার আম্মার জন্য। সেটা আমার খুব ভাল লাগত। আম্মাকে আজ উনার কথাও জিজ্ঞেস করলাম। আম্মা বললেন বছর খানেক হয় উনি মারা গেছেন। শুনে অনেক কষ্ট পেলাম। মনে হল যেন জীবন নামক বইয়ের একটা পাতা ছিঁড়ে গেল। আহারে বেচারা, আর কোনদিন উনাকে দেখতে পারব না। খাওয়া শেষে উনার মোনাজাত শুনতে পাব না। বড়ই অকৃত্তিম ছিল মোনাজাতের কথাগুলো। আমার মন কি তাহলে খারাপের দিকে যাচ্ছে? যাই, কাশবনের মত আকাশটা একটু দেখে আসি।
পাখিগুলো নেই। দিগন্তে মিলিয়ে গেছে। সে জায়গায় এখন একটা হেলিকপ্টার উড়ছে। ইমার্জেন্সী হেলিকপ্টার। খবরে দেখলাম, কাছে কোথাও আগুন লেগেছে। সেদিকেই হেলিকপ্টার টা উড়ে গেল। দুই ঘন্টা হল বিদ্যুৎ নাই। সে এক অবিশ্বাস্য কান্ড। চারিদিকে কেমন সুনসান নিরবতা। মোবাইলে চার্জ নেই। সে এক মহা জ্বালা। ল্যাপটপের ব্যাটারীও যায় যায় অবস্থা। লম্বা একটা ঘুম দেয়া দরকার। ব্রেইনেরও তো একটু চার্জ দরকার, তাই না?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৫