সামিউল কিংবা বিশ্বজিৎ এরা একজন বা দু’জন নয়, এরা হাজার হাজার। এদেরকে মেরেই আজ আমরা নতুন সমাজের অধিপতি হচ্ছি। কোথাও প্রতিবাদ হচ্ছে আর কোথাও আমরা নীরব। আজ আর ধিক্কার তাদের জানাব না যারা খুনি, ধর্ষক, গুমকারী, নির্যাতনকারী, হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী, বরং আজ ধিক্কার জানাই তাদের যাদের প্রতিবাদের ভাষা বন্ধ হয়ে গেছে, প্রতিবাদের লিখনি স্তব্দ হয়ে গেছে, দলকানা, চোখ একটি খোলা আর অন্যটি বন্ধ হয়ে গেছে, প্রতিবাদের পূর্বে নিশ্চিত হয় অন্যায়কারী নিজ দলের কিনা? দল দেখে প্রতিবাদের ভাষা ঠিক করে।
সমাজে কেন হানাহানি বেড়ে চলছে? কেন মানুষ নিজেরাই বিচারের দায়িত্ব নিজ হাতে নিচ্ছে? মানুষ কেনই বা হতাশ? কোন পরিস্থিতিতে মানুষ রাষ্ট্রের যন্ত্রগুলোর উপর আস্থা হারাচ্ছে? লোভ, লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ বেড়ে যাওয়ার কারণ কি? মানুষ কেন নীতি নৈতিকতার ব্যাপারে উদাসীন? মূল্যবোধের কথা বললেই কেন ধর্মান্ধ উপাধি দেওয়া হবে? এই সকল প্রশ্নের একটিই উত্তর হবে আর তা হল রাষ্ট্র এবং সমাজ এখন আর নীতি, নৈতিকতা কিংবা মূল্যবোধের পৃষ্ট পোষকতা করে না, ক্ষেত্র বিশেষে উল্টো দৃশ্যই দৃশ্যমান হয়।
মূল্যবোধহীন কিছু মানুষ আজ সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে, এদের নিকট নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কথা বললেই এরা ধর্মান্ধের তকমা লাগিয়ে দেয়। মূল্যবোধের বিষয়গুলো এদের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। নীতি বা নৈতিকতার কথা বললেই এরা তেড়ে আসবে, এমন কোন উপাধিতে ভূষিত করবে যা একজন ভাল মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নেবে, এরা প্রভাবশালী, এরা ক্ষমতাশালী, এরা আপাদমস্তক দুর্নীতিতে পতিত। আর নানা উপায়ে মানুষের চেতনা বিনাশ করে মূল্যবোধের কথা বলার লোকগুলোকে একে একে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে সর্বত্র, এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোতেই যারা মূল্যবোধের কথা তুলেন তাদের পদ ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে, আর জায়গাগুলোতে মূল্যবোধহীন প্রাণীগুলোকে বসানো হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ট-পোষকতায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের চিত্র একই রকম, গুটিকয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া। এই সময় বয়স্কদের একটি অংশ শান্তিতে মরার প্রার্থনায় ব্যস্ত যেন যত তাড়াতাড়ি মরতে পারেন ততই বেঁচে যান। আর যে তরুণেরা একমাত্র ভরসা, তাদেরও একটি অংশকে ইতিমধ্যে অর্থ, মাদক আর মাংসপেশির নেশায় ডুবিয়ে রাখা হয়েছে, গুম-খুন হেন কাজ নাই যা তারা ভোগ বিলাসের লোভে করতে পারে না।
এহেন পরিস্থিতিতে তরুণদের মাঝে এমন একদল তরুণের আবির্ভাব দরকার যারা এই ঘুণেধরা সমাজের উই পোকাগুলোকে নিধন করে সমাজকে ক্ষয়ে যাওয়ার হাত হতে রক্ষা করবে, দেশের মানুষকে স্বর্গীয় সুখ অনুভবের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রতিটি তরুণ তার আশেপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, একটি গ্রাম পরিবর্তন হলে তার পাশের গ্রামে ছোয়া লাগবেই। বুড়ো মানুষগুলোর বড় অংশ আজ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, চেয়ার বাঁচানোর প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, লোভ লালসা তাদেরকে গ্রাস করেছে। একমাত্র আশা তাদের উপর যারা এখনো পাওয়া বা না পাওয়ার হিসাব হতে মুক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৩৮