শিক্ষা-ব্যবস্থায় ফাঁসের সংস্কৃতি- এক।
আমার দেশের চির চেনা মায়াবী রূপ, রস, গন্ধ আজ ভুলতে বসেছি আমরা, আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানেই না এইসব আবার কি? যে বয়সে আমরা বাবার কাঁধে চড়ে ঘুরেছি, চাচা-মামারা আমাদের নিয়ে ঘুরেছে গ্রামের এক প্রান্ত হতে আরেক প্রান্ত সেই বয়সে আজ আমার দেশের কোমলমতি শিশুরা পরিচিত হচ্ছে ফাঁস নামক অদ্ভুত এক ডিজিটাল পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। অতি সুচতুরভাবে দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে একটি গোষ্ঠী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
শিক্ষা ব্যবস্থায় ফাঁসের সংস্কৃতিঃ দুই।
ফেসবুক যখন ফাঁস-বুক। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকর্মী তার সন্তানকে নিয়ে গেলেন পি,এস,সি পরীক্ষার কেন্দ্রে। এক অভিভাবক তাকে বললেন আজকের পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়েছেন? আমার সহকর্মী চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কিসের প্রশ্ন? কেন গতকালকেই ফেসবুকে আজকের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আমার সহকর্মী তার কাছে ফেসবুকের লিংকটা সম্পর্কে জানতে চাইলেন এইটা প্রমাণ করার জন্য প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টা মিথ্যা। এমিনিতেই তিনি সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তার উপর বাসায় এসে যখন দেখলেন সত্যিই ফেসবুকের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন আর আজকের পরীক্ষার প্রশ্ন হুবহু এক, তখন একজন শিক্ষক হিসাবে তিনি বাকরুদ্ধ হলেন। এই কথাগুলো তিনি আমাদের সাথে শিক্ষক বাসেই শেয়ার করছিলেন আর বলছিলেন শিক্ষার কিছুই নাই, আছে শুধু একটাই চেষ্টা, মস্তিষ্কে চারটি শব্দ ঢুকিয়ে দিতে পারলেই হবে। আপনারাই ভেবে নিন পড়াশুনা ছাড়াই এ+ আর চারটি শব্দই যখন যোগ্যতা। ধিক্কার জানাই এই সব জানোয়ারদেরকে যারা নিজ স্বার্থে হেন নীচ কাজ করতে পারে।
শিক্ষা ব্যবস্থায় ফাঁসের সংস্কৃতিঃ তিন।
গাছের গোঁড়ায় গলদ, তাহারা চিন্তিত গাছের অগ্রভাগ নিয়া। সার, পানি আর পরিচর্যার অভাবে যখন পুষ্টিহীন হয়ে বেড়ে উঠা গাছে ভাল ফল ধরছে না, তখনো তারা বুঝতে চেষ্টা করছে না গলদ কোথায়? শিক্ষামন্ত্রী আর তাহার বকলম অনুসারীরা যখন ব্যাপকহারে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে চিন্তিত তখন আমি অনুপ্রেরণা পাই এই ভেবে যে এইবার বোধয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান বাড়বে, পরিবেশের উন্নয়ন হবে আর আর সোনার ছেলেরা তামাটে রং ধারণ করে মাটির কাছাকাছি অবস্থান করবে। কিন্তু এইখানেও তাহারা যোগ্যদের মাঝে অযোগ্য খুঁজে বের করেন এবং অতঃপর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন সেই অযোগ্যদের মধ্য হতে সেরা বাঁচাইয়ের মাধ্যমে। আগামী বিশ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মান বাড়াতে হলে সার, পানি, পরিচর্যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শুধু বাড়ালে হবে না; এটি বাড়াতে হবে স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে অনেক বেশী। স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে ফাঁস আর নকলের মহাজোট বন্ধ করতে হবে। আর সেদিকেই তাহাদের নজর দেখি একেবারেই নাই, অধিকন্তু যারা এইসব নিয়ে ভাবছে তাদের দিকেই আক্রমণের অস্ত্র তাক করে রেখেছেন। আর এই অস্ত্র হতে এখনো গুলি কেন ছোঁড়া হচ্ছে না তাই নিয়ে উস্কানি দিচ্ছেন সেই সব বকলম অনুসারীরা। শিক্ষা পদ্ধতি ভাল না খারাপ এই গবেষণা এই দেশে অনেক হয়েছে, তাই বলব পদ্ধতিতে যতই সমস্যা থাকুক বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় সমস্যা না থাকলে ‘গোবরেও পদ্ম ফোটানো সম্ভব’।