হরতাল আজ মেধাহীন রাজনীতির ফলহীন কর্মসূচীতে রুপান্তর হয়েছে!
(এক)
গনতান্ত্রিক প্রতিবাদের ভাষা হরতাল কি এখন তাল, লয়, সুর ইত্যাদি হারাতে বসেছে? হরতালে দৈনিক চার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় এটি পুরনো হিসাব, কারণ অর্থমন্ত্রী বলেছেন এখন হরতালে আর আগের মতন ক্ষতি হয় না। তিনি এটি বলেছেন কারণ হরতালে প্রায়ই সকল অফিস খোলা থাকে, শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিই বন্ধ থাকে।
হরতালে কি দাবী আদায় হয়? বিগত ছয় বছরে এই হরতালের মাধ্যমে কোন দাবী কি আদায় হয়েছে? এমন কোন দাবী কি আমরা হরতাল আহ্বানকারী দলগুলো হতে পেয়েছি যার স্বপক্ষে জনগণ হরতালকে বেগবান করেছে? উত্তর না। অধিকন্তু হরতালের পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান সুসঙ্গত করতে গিয়ে প্রাণ গেছে শত শত মানুষের আর আহত হয়েছে হাজারো জনগণ। গাড়ীতে আগুন দেওয়ায় পুড়ে মরেছে অনেকে যদিও আগুন দেওয়ার ব্যাপারে দোষ এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর চাপিয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতার হয়েছে হাজারো রাজনৈতিক কর্মী এবং নিরীহ মানুষ। হরতালকে পুজি করে স্বার্থান্বেষী মহল লুটতরাজের মতন ঘটনাও ঘঠিয়েছে অনেক। তবুও কি হরতাল সমর্থন করা যায়?
(দুই)
হরতাল কি আজ মেধাহীন রাজনীতির ফলহীন কর্মসূচীতে রূপান্তর হয় নি? দেশের বৃহৎ বিরোধীদল হরতালের ডাক দিয়ে নেতানেত্রীদের ভোগ বিলাসে পাঠিয়ে দেয়। দলের কর্মীরা রাস্থায় পুলিশের মার খায় আর হাহুতাশ করে বেড়ায়। পক্ষান্তরে জামায়াত হরতালের সবচেয়ে মারমুখী শক্তি হিসাবে ব্যাপক প্রচার পেলেও শুধুমাত্র দলের নেতানেত্রীদের মুক্তি এবং বিচারের বিরোধিতার প্রেক্ষিতে হরতাল খুব একটা সাড়া ফেলতে পারছে না বলেই চিন্তাশীল মহল মনে করছে। সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে বিরোধী প্রায় প্রতিটি পক্ষের ব্যাপক আত্মসমর্পণ প্রমান করে দেয় রাজনীতি এখন আর রাস্থার বিষয় নয়, এটি এখন মেধা ও প্রজ্ঞার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিকবার ক্ষমতায় আসার পরও যদি একটি দল মনে করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির কাছে তারা আজ অসহায় তাহলে প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তারা কি করেছে? জনগণের অভিযোগ শুধুমাত্র বর্তমান সরকারের দিকে ধাবিত ব্যাপারটা সেইরকম নয় বরং জনগণ এখনো বিরোধীদলের উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছে না বলেই কোন দাবি তারা সরকারের নিকট হতে আদায় করতে পারছে না।
(তিন)
এই রকম পরিস্থিতিতে বিরোধী জোটকে অনেক বেশী জনসম্পৃক্ত কর্মসূচী দিতে হবে, যোগাযোগ বাড়াতে হবে, প্রচার-প্রসারে মনোযোগী হতে হবে। যে কোন উপায়ে সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তা একেবারেই বাদ দিতে হবে এবং মনে রাখতে হবে সরকারে যারা আছে তারা বি,এন,পি-জামায়াত জোটের মতন বোকামি সহজে করবে না। তাই তাদেরকে হরতাল বাদ দিয়ে দলের সব পর্যায়ে গনতান্ত্রিক নেতৃত্ব সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাতে হবে যাতে ইউনিয়ন হতে জিলা পর্যায় পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং জনগণের সাথে সম্পৃক্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়। জনগণের সাথে সম্পৃক্ত নেতৃত্বই কেবলি বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধী জোটকে পথ দেখাতে পারে। ভীরু, কা-পুরুষ, সুবিধাবাদী, দুর্নীতিবাজ নেতানেত্রীদের পদে রেখে বর্তমান সরকারের অনিয়মের বিপরীতে শক্ত অবস্থান নেওয়া অনেক কঠিন তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।