আমার চোখে পুরুষ নির্যাতনের ধরণ
মাদের সমাজে নারীদের উপর হাজার একটা নির্যাতন হয়। সেসব নিয়ে সবাই বলে, লেখে এবং আমিও বলি এবং লিখি। কিন্তু আমি নারীদের দ্বারা পুরুষ নির্যাতন হতেও দেখছি। সেই বিষয়ে আজ কিছু লিখছি।
কিছুদিন পূর্বে আমি মানুষের মানবিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে হওয়ার উপর গুরুত্ব দিয়ে "মানুষ ও সেক্স ডল" নামক একটি লেখা লিখেছিলাম। কোনো এক রসিক পাঠক সেই লেখাটি পড়ে মন্তব্য করেছিলেন যে, " প্রেম এবং বিয়ের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের নির্দিষ্ট নারীকে পটাতে গিয়ে যত সময়, শক্তি ও টাকা ব্যয় হয় - তার চেয়ে সেক্স ডলই ভাল এবং তাতে মান অভিমান, রাগ ভাঙ্গাতে গিয়ে সময় নষ্ট করার ঝামেলাও থাকেনা।"
আমি মন্তব্যটি পড়ে হেসেছিলাম। কিন্তু বাস্তব জীবনে আমি আমার বন্ধু, বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, সমাজের নারী পুরুষের মধ্যে পুরুষদেরকে উক্ত রসিক পাঠকের সমালোচনার সাথে মিল রেখে বেশকিছু সমস্যায় ভুগতে দেখেছি- যেগুলো সভ্য, ভদ্র, শিক্ষিত পুরুষদের উপর এক ধরণের অত্যাচার বলেই আমার মনে হয়েছে।
যেমন: আমাদের বাংলাদেশে এখনও অনেক নারী আছে যারা আত্মনির্ভরশীল নয়। তারা অনেকে মোটামুটি একটু রূপ থাকলে স্বামীর সাথে অনেক অহংকার দেখায়। আর যেসব নারীরা আত্মনির্ভরশীল নয় তারা প্রায়ই নিজের খরচ এবং ছেলেমেয়ে, সংসারের খরচের জন্য স্বামীর উপর এত নির্ভরশীল থাকে যে, স্বামী বেচারা কলুর বলদের মত খাটতে থাকে, কিন্তু স্ত্রী'র মন পায়না। অনেকে বউয়ের বেহিসেবী অর্থনৈতিক চাহিদার জ্বালায় সংসার বাঁচাতে অসৎ পথেও অর্থ উপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এরকম অবস্থায় নারী জীবন সঙ্গীনীটিকে অনেক পুরুষের কাছে বিষের মত মনে হয় এবং এটি স্বাভাবিক। আরেকটি বিষয় হল- পুরুষরা ছোটবেলা থেকেই মুক্ত পরিবেশে চলাফেরা করে। ফলে তাদের বেশিরভাগের জ্ঞান অনেকটা মুক্ত, স্বচ্ছ, প্রাণখোলা হয়। কিন্তু নারীরা অনেকেই ঘরে থাকে এবং তারা অনেক সামাজিক সঙ্কীর্ণতার আওতায় থাকার কারণে তাদের মধ্যে অনেক প্রকার মানসিক সঙ্কীর্ণতা দেখা যায়। মুক্ত মনের পুরুষ আর সঙ্কীর্ণ মনের নারীদের মাঝে যখন প্রেম বা বিয়ের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, তখন সেটা অল্পদিনের মধ্যেই তিক্ততার দিকে এগোতে থাকে। এক পর্যায়ে সামাজিক কারণে সম্পর্কটি পুরুষরা টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়, কিন্তু মনে মনে " না পারে খেতে, না পারে গিলতে" এমন অবস্থা হয়।
আমাদের দেশে নারী পুরুষ উভয়েরই যখন তখন বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটানো এখনও অনেক কলঙ্কের বিষয় বলে বিবেচিত। আর তাই এদেশে অনেক নারী তাদের স্বামীর মনমতো চলতে না পারলেও স্বামীকে ডিভোর্স দেয়না। ফলে ভদ্র, সভ্য স্বামীরা দুইতিনজন স্ত্রী নিয়ে সংসার করতেও লজ্জিত হয়, আবার নিজের শরীর মনের চাহিদা নিয়েও অসহায়ের মত বাস করতে থাকে। এক্ষেত্রে কোনো সভ্য, ভদ্র পুরুষ যখন ঝগড়াটে, সঙ্কীর্ণ মনের প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়, তখন তার প্রথম স্ত্রী প্রচুর বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে অনেক বিপত্তির সৃষ্টি হয়।
যেমন: আমারই কোনো এক পুরুষ বন্ধু'র সাথে তার স্ত্রী'র মন এবং মতের কোনো মিল নেই। আমার সভ্য পুরুষ বন্ধুটি তার স্ত্রীকে নিজের মনের মত করে গড়ে তোলার জন্য প্রচুর চেষ্টা চালালো। তার সবটুকু ভালবাসা দিয়ে সে স্ত্রীকে তার মত আধুনিক করতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি। তার স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে তার নিকট থেকে আলাদা হয়ে বাস করতে থাকল। তাদের আলাদা হওয়ার বছরখানেকের মধ্যে আমার বন্ধুর জীবনে অন্য এক নারীর আবির্ভাব হয়- যাকে সে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাভাবিকভাবে প্রথম স্ত্রী'র সাথে তার যোগাযোগ কমে যায়। স্বামী আর তাকে আগের মত পটাচ্ছেনা দেখে বন্ধুর প্রথম স্ত্রীটি এরপর ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। আমার বন্ধুও কাঁদলো, কিন্তু সে তার প্রথম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটালো।
উপরোক্ত ঘটনাটি আমার নিজের চোখে দেখা। এরকম আরও ঘটনা আমি অনেক পুরুষের জীবনে ঘটতে দেখেছি।
অনেক নারীই ভদ্র, সভ্য স্বামীর নির্মল ভালবাসা পেয়ে অহংকারী হয়ে যায় এবং একথা ভুলে যায় যে, স্বামী ব্যক্তিটি কোনো রোবট নয়- সে একজন মানুষ। অনেক নারীই ভুলে যায় যে, তাদের স্বামী'র সকল ক্লান্তিতে তাদের স্ত্রী'র হাতের একটু স্পর্শ প্রিয় হতে পারে, দু:খে বিপদে স্ত্রী'র সান্ত্বনার প্রয়োজন হতে পারে, মুক্ত পৃথিবীর মুক্ত ভাবনাগুলো নিয়ে স্ত্রীর সাথে মত বিনিময়ের দরকার হতে পারে। আমাদের দেশের অনেক নারীর মধ্যে আমি এসবের অভাব দেখতে পাই। অনেকেই এদেশে স্বামীকে রোবটের মত খাটায়, সারাক্ষণ ঝগড়া করে করে স্বামী স্ত্রী'র রোমান্টিক মুহূর্তগুলোকে নরক যন্ত্রণাময় করে রাখে। এটা একজন পুরুষের উপর নারী কর্তৃক অনেক বড় অত্যাচার।
নারীরা তাদের উপর অত্যাচার হলে অনেকের কাছে তা প্রকাশ করে, কিন্তু পুরুষরা তাদের প্রেমিকা বা স্ত্রী কর্তৃক অত্যাচারিত হলেও তা বন্ধু, বান্ধবী এবং সমাজের নিকট প্রচার করে কম। পুরুষরা অনেক ঠেকায় পড়লে স্ত্রী বা গার্লফ্রেন্ড কর্তৃক অত্যাচারের বিষয়টি প্রচার করতে শুরু করে, না হলে নয়।
আবার প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রে দেখা যায়- প্রেমিকারা প্রেমিককে ভাঙ্গিয়ে খেয়ে পরে আবার অন্য কারও সাথে মন বা দেহ বিনিময় করতে চলে যায়। যেসব প্রেমিকের কাছে প্রচুর টাকা আছে তারা হীরার আংটি, দামী গাড়ী, দামী পোশাক দিয়ে গার্ল ফ্রেন্ডকে খুশী করে এবং পেপারে সেগুলো ফলাও করে আসে। কিন্তু যাদের কাছে টাকা কম আছে তাদের জন্য প্রেমিকার ভালবাসা অর্জন করা কষ্টকরই বটে। অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল নারীরাও প্রায়ই নিজের টাকা বাঁচিয়ে স্বামী বা প্রেমিকের টাকা খরচ করতে বেশি পছন্দ করে। এইধরণের প্রেমিকা বা স্ত্রী পাওয়া পুরুষদের জন্য দুর্ভাগ্য।
আমি অনেক পুরুষকে বলতে শুনেছি যে, তাদের উপর নারীদের যে অত্যাচার হয় তা কেউ বলেনা।
আমি মনে করি নারীপুরুষ, স্বামী স্ত্রী,প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে মানসিক অমিলের বিষয়টা দূর করার ক্ষেত্রে সমান সামাজিক, পারিবারিক সুশিক্ষার প্রয়োজন। বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল অনেক নারী আছে আমাদের দেশে। কিন্তু মানসিক দিক থেকে এখনও তারা অনেক রকম সঙ্কীর্ণতায় বন্দী। ফলে তারা মুক্তমনের পুরুষ জীবনসঙ্গীর শারীরিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলেও মানসিক ভাব আদান প্রদানে অনেকক্ষেত্রে অক্ষম হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে জীবন সঙ্গীর সাথে তাদের সম্পর্কটা যান্ত্রিক হয়ে পড়ে। এই যান্ত্রিক অবস্থায় শুরু হয় ঝগড়া, চেঁচামেচি, ছাড়াছাড়ি। আবার ছাড়াছাড়ির বিষয়টা আমাদের দেশের নারীরা মেনে নিতে চায়না। কিন্তু আমি মনে করি, যখন স্বামী স্ত্রী বা প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে সম্পর্কটা একেবারে চূড়ান্তরকম খারাপ হয়ে যায়, তখন তাদের পরস্পরকে ঠান্ডা মাথায় আইনত বা সামাজিকভাবে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। এতে নারী পুরুষের পরস্পরের আবার নতুন করে জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনী খুঁজে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এই সুযোগটি শিক্ষিত মানুষরা তাদের জীবনসঙ্গীকে দেয়। যারা এই সুযোগটি দেয় তারা গণতান্ত্রিক, আর যারা এই সুযোগটি দেয়না তারা তাদের জীবনসঙ্গীর জীবনকে নরক যন্ত্রণায় ভরিয়ে রাখে। কারণ জীবনসঙ্গীটি এক্ষেত্রে তখন তার শারীরিক, মানসিক চাহিদা পূরণের জন্য কোনো সুস্থ পথে যেতে পারেনা। অনেকসময় এমন অবস্থায় নারী বা পুরুষরা অন্য নারী বা পুরুষদের সাথে অনেক প্রতারণা করতে বাধ্য হয় বা প্রতারণা করে ফেলে।
আজকাল নারীরা অনেকটা মুক্ত পরিবেশে চলছে। এটা আমাদের সমাজে একসময় অসম্ভব ছিল। এখন নারীদের চলাফেরা সহজ স্বাধীন। কিন্তু নারীদেরকে ধর্ষণ ও তাদেরকে যৌন হয়রানি করার ঘটনাও অনেক অনেক গুণ বেড়েছে এখন। এই সুযোগটা নিয়ে কিছু নারী কিছু পুরুষদের সাথে বাটপারি করে ফেলে। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোনো কোনো নারী নিজেই অন্য পুরুষদের সাথে সামাজিকভাবে বা আইনসঙ্গতভাবে নিষিদ্ধ এমন শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যখন কেউ সেটা দেখে এবং জেনে ফেলে তখন সংশ্লিষ্ট নারীরা এটাকে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি বলে চালিয়ে দেয়। এজন্য ইদানিংকালে ভদ্র, সভ্য কিছু পুরুষদের প্রতারিত হওয়া বা মান সম্মান হারানোর ভয়ে খুব সতর্ক থাকতে দেখা যায়।
মূলত সভ্য সমাজে নারী পুরুষের সম্পর্ককে ভালবাসা, শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দাঁড় করাতে হলে নারী পুরুষের উভয়েরই শিক্ষা দীক্ষা লাভের এবং বিচরণের পরিবেশ সুস্থ ও উন্নত হতে হবে। যখন নারী পুরুষের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা থাকে তখন পরস্পরের প্রতি দায়িত্ববোধও থাকে এবং পরস্পরকে কোনো কারণে ব্যথা দিতেও উভয়ের মন কাঁদে।
আমাদের সমাজের বিবাহ প্রথাটিকে আমি নারী পুরুষের যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি সুস্থ প্রথা মনে করি। কিন্তু এই বিবাহ প্রথাটিকে আজকালকার অনেক মানুষের কাছে অসহ্য মনে হচ্ছে। কারণ জীবনসঙ্গী নির্ধারণের ক্ষেত্রে এদেশে এখনও অনেক জায়গায় ছেলের বউ বা মেয়ের স্বামী খুঁজে দেয় ছেলে বা মেয়ের বাবা, মা। এদেশে অনেক ছেলেমেয়ে এখনও প্রেম করার স্বাধীনতা পেলেও বিবাহের সময় পারিবারিক চাপাচাপিতে অচেনা কাউকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। এই ধরণের বিবাহিত জীবন শুরু হয় সামাজিক নিয়ম কানুনের দোহাই দিয়ে এবং টিকেও থাকে সামাজিক সুনাম, বদনামের দোহাই দিয়ে। এসব বাধ্যবাধকতাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নারী পুরুষের জীবনসঙ্গী নির্ধারণের বিষয়টি বয়সে, শিক্ষা দীক্ষায় পরিপক্ক ছেলে মেয়েদের নিজেদের মনের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। তারা যেন সুস্থ, সুন্দর রুচির ভিত্তিতে ভালবেসে, প্রেম করে এবং একসাথে বাস করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তাদের জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারে সেজন্য পরিবার বা সমাজের তাদের প্রতি কিছু পরামর্শ থাকতে পারে, কিন্তু কোনো জোর জবরদস্তি করে পূর্ণ বয়স্ক ছেলেমেয়েদের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের চূড়ান্ত মতামত চাপিয়ে দেওয়া উচিৎ নয়।
আবার যারা প্রেম করে বা পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করে দম্পতি হয়ে যায়, তারা যখন ক্রমশ নিজেদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনে সুখী হতে না পারে তখন তাদের পরস্পরের সুখী হওয়ার জন্য নানারকম চেষ্টা করাটা মানবিক দায়িত্ব। কিন্তু যদি উভয় পক্ষ থেকে দেখা যায় যে, সম্পর্কটা ঝগড়াঝাঁটি, মারামারিতে পৌঁছে গেছে, তখন সংশ্লিষ্ট স্বামী স্ত্রী'র আইনসঙ্গত সামাজিক বিচ্ছেদের দিকে এগোনোটাই সুস্থ, গণতান্ত্রিক পথ। জোর করে স্বামীকে বা স্ত্রীকে নিয়ে সুখী হওয়াতো যায়ইনা; বরং এরকম করলে অনেক ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে এবং সংশ্লিষ্ট স্বামী স্ত্রী'র জৈবিক এবং মানসিক চাওয়া পাওয়ার অপূর্ণতা - অসুস্থভাবে পূর্ণ করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
আমাদের দেশে বিবাহ প্রথাকে অনেকে শ্রদ্ধা করে, কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাকে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নেয়না। এদেশে বিবাহ বিচ্ছেদ নারী পুরুষ সবার জন্যই কলঙ্কজনক, তবে নারীদের জন্য বেশী ক্ষতিকর। কিন্তু স্বামী স্ত্রী'র সম্পর্ক চূড়ান্ত খারাপ হয়ে যেতে পারে নানা কারণে। তখন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোটা মঙ্গলজনক। আর উন্নত বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে এমন কোনো নারী পুরুষকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়না এবং তাদের দ্বিতীয়বার বিয়ের ক্ষেত্রে বা মনের মত জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অতীতের ভাঙ্গা সম্পর্ককে একবিন্দুও কলঙ্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়না। ফলে সেসব জায়গায় নারী পুরুষ সমাজের চাপে নিজেদের স্বাভাবিক চাওয়া পাওয়াকে লুকিয়ে রেখে গোপনে বা প্রকাশ্যে দুর্ঘটনা ঘটায়না। তাই আমাদের দেশের মানুষেরও বিবাহ বিচ্ছেদকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ। তা না হলে নারী পুরুষ সব সময় পরস্পরের দ্বারা অত্যাচারিত হতে থাকবে।
নারী আর পুরুষের বেড়ে ওঠার পরিবেশটাকে মুক্ত, স্বাধীন, প্রেমময় করে তুলতে পারলে কোনো পুরুষ কখনও নারীকে অত্যাচার করবেনা, আর কোনো নারী কখনও পুরুষকে অত্যাচার করবেনা। তারা তখন পরস্পরের রুচিকে, প্রেমকে শ্রদ্ধা করে পরস্পরকে প্রেমে ভরিয়ে রাখতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রেমিক প্রেমিকা বা স্বামী স্ত্রী যে কেউ যদি গুণে খাটো হয়েও থাকে, তবে প্রত্যেকের মানবীয় প্রেম সেই অভাবকে ছাড়িয়ে সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। যেমন: হয়ত কোনোখানে কোনো এক স্বামী খুব ভাল রবীন্দ্র সংগীত বোঝে বা গাইতেও পারে, কিন্তু তার স্ত্রী তা বোঝেওনা, গাইতেও পারেনা। এক্ষেত্রে স্বামী মহাশয় কখনও নিজেকে শূন্য মনে করবেনা- যদি স্বামীর জানা, বোঝা ও জ্ঞানের প্রতি তার স্ত্রী'র শ্রদ্ধা থাকে। আর যদি এসবক্ষেত্রে জ্ঞানী স্বামীর প্রতি স্ত্রী'র শ্রদ্ধা না থাকে, তবে স্বামী অন্য একজনকে খুঁজতে থাকবে- যে জ্ঞানী। একই কথা নারী পুরুষ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
একজন কেরানী যদি সৌভাগ্যক্রমে কোনো একজন বড় অফিসারের সাথে প্রেম বা বিয়ে করার সুযোগ পায়, তবে কেরানীর নিজেকে বড় অফিসার ভেবে অহংকার করে অফিসারের জীবন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করা অন্যায়, বরং কেরানীর উচিৎ নিজের মানবীয় গুণাবলীকে বাড়িয়ে অফিসারের জীবনসঙ্গী হওয়ার মত গুণাবলী অর্জন ও বজায় রাখা। আমাদের দেশের অনেক নারীর অবস্থা এই ধরণের কেরানীর মত। নারী পুরুষ যখন পরস্পররের প্রেমিক, প্রেমিকা বা স্বামী স্ত্রী হয়ে যায়, তখন সম্পত্তি বা গুণে কে বড় বা কে ছোট- তা না ভেবে পরস্পরকে ভালবাসায়, শ্রদ্ধায় বেধে রাখতে জানতে হবে। জীবনসঙ্গীকে অনেক শ্রদ্ধা, ভালবাসা দেয়ার পরও সে যদি অন্যদিকে সঙ্গী খুঁজতে থাকে- তবে মারামারি, কাটাকাটি না করে বিশ্ব কবি রবী ঠাকুরের মত করে গাইতে হবে- "
""""আমার ও পরান ও যাহা চায়
তুমি তাই , তুমি তাই গো
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই কিছু নাই গো,
তুমি সুখ ও যদি নাহি পাও
যাও সুখের ও সন্ধানে যাও …
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয় ও মাঝে
আর ও কিছু নাহি চায় গো,
আমি তোমার ও বিরহে
রহিব বিলীন ও
তোমাতে করিব বাস,
দীর্ঘ দিবস ও , দীর্ঘ রজনি
দীর্ঘ বরস ও মাস …
যদি আর ও কারে ভালবাসো
যদি আর ও ফিরে নাহি আসো …
তবে তুমি যাহা চাও
তাই যেন ও পাও
আমি যত ও দুঃখ পাই গো"""।।