দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বছরের শুরুর দিকে ক্লাসের ফার্স্ট বয় আমার নিকটতম বন্ধু আমাকে হালকা অভিমানের সুরে বলেছিল " দেখো, ক্লাসের প্রায় সবাই কিন্তু বইয়ে মলাট লাগিয়ে ফেলেছে তুমি কিন্তু এখনও লাগাওনি, কালকে মলাট না লাগিয়ে ক্লাসে আসলে তোমার সাথে আমার আর কোনো বন্ধুত্ব থাকবে না। আর তুমি এটা লাগিয়েই দেখ তোমার বইগুলো কত সুন্দর দেখাবে তা তুমি নিজেও জাননা"। পরদিন আমি ঠিকই বইয়ে মলাট লাগিয়ে এনেছিলাম। হতে পারে তার সাথে বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে নচেৎ তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে।
.
আমার রক্তের সম্পর্কের এক ভাই, উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সময় নির্বাচনী পরিক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানে যথেষ্ট কম নাম্বার পেয়ে ভেঙে পড়েছিলেন। সেটা দেখে তার কোর্স শিক্ষক তাকে রুমে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন সময় এখনও শেষ হয়নি তুমি চেষ্টা করো তাহলে অবশ্যই সফল হতে পারবে। সেই মূহুর্তে স্যারের বলা কথাগুলো তাকে সামনে আগাতে কতটুকু সাহায্য করেছে সেটা আজ কয় বছর পর তার নিজের চেম্বারের উপর বড় করে লেখা ডা. যোবায়ের মুমিন লেখাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলেই বুঝতে পারি।
.
পরিচিত ইকোনমিক্সে পড়ুয়া আরেক ভাই দ্বিতীয় বর্ষের ইয়ার ফাইনালের আগে পারিবারিক কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সে সময় পরিক্ষার আগে যখন তিনি সম্পূর্ণভাবে অপ্রস্তুত ছিলেন পরিক্ষার মত এমন একটা বিষয়ের মুখোমুখি হতে ঠিক সেই মূহুর্তেই লোক প্রশাসনে পড়ুয়া আরেক ভাই তার পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন, সহযোগিতার উদার হাত সম্প্রসারিত করেছিলেন। সিনিয়র ভাইদের কাছ থেকে নোটস সংগ্রহ করা, গাণিতিক সমস্যাগুলো বুঝে এসে তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার মত এমন মহৎ সব কাজের মাধ্যমে বিপদে তার পাশে দাড়িয়েছিলেন। পরিণতিতে যার অবস্থান হওয়ার কথা ছিল নিশ্চিত ফেল্টুসদের কাতারে, সেই ভাই মাত্র কয়েক মার্কসের জন্যে ফার্স্টক্লাসটা মিস করেন!
...........................
আমরা অধিকাংশই জীবনের একটি সন্ধি:ক্ষণে উপনীত হই যখন নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় বলে মনে হয়। এমন মূহুর্তে আমাদের জন্য একটু উৎসাহ, অনুপ্রেরণা যে কতবড় পটপরিবর্তনের কারণ হতে পারে সেটি শুধুমাত্র আমরা যারা উপলব্ধি করতে পেরেছি তারাই বলতে পারি। আর যারা সেইসব সময়ে নিজের পাশে কাউকে পাইনি তারা হয়ত পরবর্তীকালে নিজেদেরকে ব্যর্থতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আবিষ্কার করেছি। খুব কম সংখ্যকই এ থেকে উত্তরণের পথ খুজে বের করতে পারি। বিপদসংকুল পরিবেশে আপনার পরিপার্শ্বের যে কেউই এই গুরুদ্বায়িত্ব পালন করতে পারেন। এর জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজন নিঃস্বার্থভাবে কাউকে সহযোগিতা করার মনোভাব।
.
হতে পারে আপনার এই সামান্যতম মানবিকতা বোধ কারো জীবনের সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছিয়ে দেওয়ার বাহক হবে। হয়ত ততক্ষণে সে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উঠে সৃষ্টিশীলতার মহানন্দে মেতে উঠবে। তার সৃষ্টিশীলতা তাকে দেখে সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠবে, চেঁচিয়ে উঠবে তার পারঙ্গমতা দেখে। আর সে মনে মনে আপনাকে অনবরত গুণকীর্তন করেই চলবে। শ্রদ্ধায় বাহুদ্বয় সম্প্রসারিত করে শূন্যস্থানে আপনার অস্তিত্ব অনুভব করতে অতিশয় আকুল হয়ে থাকবে। জীবন হয়ে উঠবে প্রশান্তিময়। পরিশেষে হিম্মত যোগানো সেই সকল মহামানবের জন্যে সুদীর্ঘ এক সেকেন্ড নিরবতা!!!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৫