বন্ধুত্বের সংজ্ঞাটাকে আপনি নানা রঙে নানা ঢঙে রাঙাতে পারেন কিন্তু যখনই এর সঙ্গে আবেগকে মিশ্রিত করবেন তখনই এর মহত্ত্বটা সম্পূর্ণরুপে বিনষ্ট হয়ে যাবে। দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুবাদে এমন কিছু বন্ধুর সংস্পর্শযুক্ত হতে পেরেছিলাম যাদেরকে শুধুমাত্র বন্ধুত্বের দাঁড়িপাল্লা দিয়ে পরিমাপ করলে নিতান্তই অবহেলে মার্জনা করা হবে। তারা শুধুমাত্র ভালো বন্ধু ব্যতীত আরো অনেক কিছু ছিল। আপনি তাকেই বন্ধুত্বের উপাধিতে ভূষিত করতে পারেন যে আপনাকে বিপদেআপদে সর্ব মূহুর্তে নিজের সর্বস্ব দিয়ে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে তবে কোনো অন্যায় কাজ ছাড়া। হোক সেটা মেধা, বুদ্ধিবৃত্তি, সৎ পরামর্শ, বা আর্থিকভাবে বা আনুষঙ্গিক অন্যান্য সকল বিষয় দ্বারা।
.
আমরা সাধারণত বন্ধুত্বের সংজ্ঞাটা কিভাবে নিরুপণ করে থাকি? আপনি আচমকা কোনো একজন মেয়ের প্রেমে পড়লেন। এখন আপনি বলবেন বন্ধুত্ব মানে সেটাই যে, একজন বন্ধু হিসেবে সে আপনাদের প্রেমের সম্পর্কটা সচল রাখতে ও যুৎসই একটা পর্যায়ে নিয়ে যতে সকল প্রকার সাহায্য করবে। এবং এ কাজ করতে সে যত বেশি নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে সক্ষম হবে বুঝতে হবে তাহলে বন্ধুত্বের গভীরতা ততটুকু। এরুপ একটি ঘটনা একবার আমাদের মাঝে ঘটল। বন্ধুগণের কোনো একজন কারো প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে আরেক বন্ধুর স্মরণাপন্ন হলো কিছু পরামর্শের জন্য। পরামর্শ দিয়ে সেই বন্ধুটি একে উদ্দেশ্য করে যা বলেছিল তা দিয়ে বন্ধুত্ব নামক পবিত্র সম্পর্কের অনেকাংশকে সুচারুরূপে সংজ্ঞায়িত করা যায়। পরবর্তীকালে সেই বন্ধুটি এসব অনৈতিক কার্যকলাপ ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র পড়াশুনায় আত্মনিয়োগ করেছিল। ফলাফল স্বরুপ বোর্ড পরীক্ষায় একটা ঈর্ষনীয় রেজাল্ট করতে পেরেছিল। যার দরুণ আমাদের বন্ধুত্বটা আরো টেকসই হয়।
.
প্রকৃত বন্ধুত্ব সেটাই যে, আজ থেকে দশ বছর পর কর্মজীবনে আপনি আপনার বন্ধুকে সমাজের কোন আসনে সমাসীন হতে কামনা করেন। বন্ধুত্বের আসলত্ব সেটাই যে, আজ থেকে দশ বছর পর আপনি আপনার বন্ধুকে কোনো সাধারণ কাঠের চেয়ারে দেখতে চান না দামী রিভলভিং চেয়ারে। পরীক্ষার হলে এক্সট্রা খাতাটা শেষ ঘন্টা অবধি আপনার কাছে দিয়ে রাখাকে আমার বন্ধুত্বের মহত্ত্ব বলে মনে হয় না। সেই-ই আপনার প্রকৃত বন্ধু যে পরীক্ষার আগের রাত পর্যন্তও আপনাকে সকল প্রকার সাজেসান্স, নোটস, টিপস ইত্যাদির মাধ্যমে সহযোগিতা করবে, কিন্তু পরীক্ষার হলে আপনি হবেন তার নিকট কোনো এক অপরিচিত ব্যক্তি।
.
সেই-ই প্রকৃত বন্ধুর উৎকৃষ্টতম উদাহরণ যে, সর্বদা আপনার গার্লফ্রেন্ডকে কুৎসিত ও আরো নানা খোচা মারা কথা বলে থাকে। আপনার কানের নিকট সবসময় দ্বায়িত্ব নিয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে থাকে এই বলে যে, 'দোস্ত এখন সময়টা নিজেকে গড়ার, যোগ্যতমের একজন হওয়ার, এখন এসব মরীচিকার পিছনে ছুটে চলার সময় নয়, বিবাহপূর্ব এসকল সম্পর্কের কোনো বৈধতা আজও নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি, এসব আমাদের ধর্মের সাথে পরিপূর্ণ ভাবে সাংঘর্ষিক ' ইত্যাদি..... ইত্যাদি। কিন্তু পরিণত বয়সে বিবাহের সময় আপনাকে রীতিমত উদ্বুদ্ধ করবে একজন যোগ্য জীবনসঙ্গিনী খুঁজে নিতে। বলবে 'দোস্ত, তুই এবার তোর যোগ্য কাউকে পেয়েছিস, তোর জীবন ধন্য হোক, দেখিস এবার তুই সত্যিই সুখী হবি'। ব্লা..ব্লা...।
.
আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি এ কারণেই যে, জীবনের কোনো এক মুহুর্তে আমি এমন মাস্টারপিস কিছু বন্ধুর দেখা পেয়েছিলাম। যাদেরকে উত্তমরুপে ভূষিত করার মত কোনো বিশেষণ আমার জানা নেই। নগণ্য একজন হিসেবে সবসময় আশা রাখি ও খোদা তা'য়ালার কাছে প্রার্থনা করি যেন পরিণত বয়সে আমরা সকলেই সমাজের দৃষ্টিনন্দন একটা পর্যায়ে উপনীত হতে পারি। বন্ধুত্বের এ অটুট বন্ধনের অতীত স্মৃতি মাঝে মধ্যে আপন সত্ত্বাকে খুবই পীড়া দেয় যেটা ভাষায় প্রকাশ করা অতিশয় দুঃসাধ্য!
.
পৃথিবীর আপামর বন্ধুগণ বেঁচে থাকুক সকলের হৃদয়ে আবহমানকাল। সকল পবিত্র বন্ধুত্ব অমরত্ম লাভ করুক। সঙ্গ দোষে লোহা ভাসার মত বন্ধুত্বগগুলোর বিনাশ সাধিত হোক। সবশেষে বন্ধুত্বেরই জয় হোক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:২৪