ক্যাপ্টেন আশিকেরা অনেক চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনাকে দেশ ত্যাগে সাহায্য করার বিষয়টির প্রায়শ্চিত্ত দিতে। প্রায়শ্চিত্তের মিছিলে সেনাদের উৎসাহিত করতে কিংবা জনগণের চিন্তাকে ভিন্ন খাতে ব্যস্ত রাখতে স্বয়ং সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ক্যাপ্টেন আশিককে পুরস্কৃত করে SGP সম্মাননা দিলেন।
বিগত ১৫ বছর যাবত আওয়ামী সরকারের স্বৈরাচারকে সেনাবাহিনী যে সমর্থন দিয়ে এসেছে, তারই নানন্দিক ইতি টানার চেষ্টা করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে বিমানে তুলে দেশ ছাড়তে সাহায্য করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এটা দিনের বেলা আকাশে উদিত সূর্যের মতো সত্য।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্মানের যে জায়গাটায় থাকার কথা সেখানে তারা আজ আর নেই। চাইলে তারা তা ফিরিয়ে আনতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। আলোচনার সুবিধার্থে তারা যা করেছে তার সামান্য কয়েকটি নিচে তুলে ধরছি,
• সেনাবাহিনী বিগত ১৫ বছর যাবত আওয়ামী স্বৈরাচার কর্তৃক জুলুম, নির্যাতন, ঘুম, খুন, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও লুণ্ঠনে সহযোগিতা প্রদান করলো। যার প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, স্বৈরাচার চলাকালে নিরবতা পালনের মাধ্যমে স্বৈরশাসককে সমর্থন ও শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় না করিয়ে, দেশ ত্যাগে সাহায্য করার মাধ্যমে স্বৈরাচারী প্রভূর মন রক্ষার সর্বশেষ চেষ্টা করলো।
* আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির চেয়ে অবশিষ্ট মর্যাদা রক্ষার দিকেই তারা মনোযোগী হয়েছে। এতে করে দীর্ঘদিনের প্রভু আওয়ামী স্বৈরশাসককে নারাজ করা থেকেও তারা মুক্ত থেকে গেলো। যদি তারা নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করত, তবে শেখ হাসিনাকে দেশ ত্যাগের সুযোগ না দিয়ে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করত।
• মর্যাদা রক্ষার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলমান মিশনগুলোতে নিজেদের টিকিয়ে রাখাও গেল। সুতরাং স্বৈরশাসকের বিপরীতে গিয়ে মর্যাদা বৃদ্ধির চেষ্টাও করল না। ঝুঁকি নেয়া থেকে নিরাপদ থাকল।
• শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পরপর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে জাতির দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার মাধ্যমে জাতীয় দরদী পার্টিতে নিজেদের দাঁড় করানো গেল।
• বাঙালিরা নিজেদের পুলিশের বর্বরতায় দিশেহারা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুলিশি দায়িত্ব আদায়ের চেষ্টা করল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি ও ক্ষমতা প্রত্যাশী বিএনপির উগ্রতা রুখতে সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করলো। জনগণের সহযোগিতায় তা করতে সফলও হলো।
• আশাবাদী ছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরোপুরি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু সেখানে ছাত্রজনতার কারণে তারা ব্যর্থ হলো।
• পুলিশি হামলায় মারা যাওয়া ছাত্রজনতার বিচারের আওয়তায় আসা পুলিশদেরকে না খোঁজে গণহারে সকল পুলিশকে নিরাপত্তা দেওয়ার মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত নিরাপত্তা দিতে শুরু করলো।
• সেনাবাহিনী প্রধানের উপস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল থানা পূর্বের দায়িত্বশীল অসিদের অধিনে রেখেই চালু করার যে বিচারবহির্ভূত অবস্থা তৈরি করছেন সেই অপরাধ থেকেও তারা মুক্ত নন।
• ক্যাপ্টেন আশিককে SGP সম্মাননা দেওয়ার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর বাকি সদস্যদের উৎসাহিত করা হচ্ছে যেন তারা জনগণের সাথে সৌহার্দ্য পূর্ণ ব্যবহার দেখান। এখানে এমন প্রশ্ন আশা স্বাভাবিক যে, তাহলে বিচারবহির্ভূত ভাবে শেখ হাসিনাকে সাহায্য করার জন্য সেনাপ্রধানের উপর আইনি পদক্ষেপ নেওয়ায় জরুরী। নাকি সেনা প্রধান নিজেদের দুর্নীতি ও স্বৈরাচারীর সাহায্যকারী হিসেবে নিজে যে অপরাধ করেছেন তা লুকিয়ে রাখতেই সেনাদেরকে উৎসাহ দিচ্ছেন জনগণের প্রতি "ভদ্র ব্যবহার" করার জন্য।
• সেনাবাহিনী নিজেদেরকে বিচারবহির্ভূত অবস্থানে রাখার মাধ্যমে সংবিধানের প্রতি যে কৌশলগত বিরোধিতা করছে তা যদি সমাধান না হয়, তবে বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তনটা অপরিপক্ক ও অসচ্ছ থেকেই যাবে।
যদি সেনাবাহিনী নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন না আনে, তাহলে যে কেউ তাদেরকে প্রশ্ন করে বসতে পারেন, জনগণের সাথে "গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা"র ব্যবহার তাহলে করছে না কে?
ছবি: প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৭:৩৬